Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বকেয়া আদায়ে চটকল শ্রমিকদের আইনি সহায়তা

২০১০ সালে ভদ্রেশ্বরের গোন্দলপাড়া চটকল থেকে অবসর নিয়েছেন নিমাই বোলেল। মিল কর্তৃপক্ষের কাছে পিএফ-গ্র্যাচুইটি বাবদ তাঁর বকেয়া প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। সে টাকা পাননি। চোখের চিকিত্‌সা করাতে না পেরে দৃষ্টি হারিয়েছেন।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৪ ০১:০০
Share: Save:

২০১০ সালে ভদ্রেশ্বরের গোন্দলপাড়া চটকল থেকে অবসর নিয়েছেন নিমাই বোলেল। মিল কর্তৃপক্ষের কাছে পিএফ-গ্র্যাচুইটি বাবদ তাঁর বকেয়া প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। সে টাকা পাননি। চোখের চিকিত্‌সা করাতে না পেরে দৃষ্টি হারিয়েছেন।

২০০৬ সালে একই মিল থেকে অবসর নিয়েছিলেন নিতাই খান। তাঁরও একই সমস্যা। অশক্ত শরীরে চিকিত্‌সা তো দূরের কথা, পরিবারের নিত্য দিনের খাওয়া-পড়াই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর।

কেউ কেউ আবার বকেয়া পাওয়ার আগেই মারা গিয়েছেন। টাকা পায়নি তাঁদের পরিবারও। আর সরকারি তরফে শ্রমিকদের বকেয়া আদায়ের জন্য শ্রম দফতরের যে গ্র্যাচুইটি ইন্সপেক্টরের পদ রয়েছে, তা-ও খালি দিনের পর দিন। ফলে আর কোনও উপায় না দেখে বকেয়া আদায় করার জন্য আইনি পদক্ষেপ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।

গোন্দলপাড়া চটকলের শ্রমিক গৌতম গুহরায় জানান, চন্দননগরের একটি আইনি সহায়তা কেন্দ্র এই ব্যাপারে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ওই সহায়তা কেন্দ্রের কর্ণধার বিশ্বজিত্‌ মুখোপাধ্যায় বলেন,“শ্রমিকদের প্রাপ্য আদায়ের ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের ভূমিকা একেবারেই ভাল নয়। আমরা বিভিন্ন শ্রমিকের বকেয়া আদায়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করব। আসলে চট কলের শ্রমিকেরা আর্থিক দিক দিয়ে এতটাই দুর্বল যে আদালতে যাওয়ার পয়সাটুকুও জোগাড় করতে পারছেন না।”

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের চটশিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন আড়াই লক্ষ শ্রমিক। রাজ্যের ৬৩টি চট কলের মধ্যে চালু রয়েছে ৫৩টি। এর সঙ্গে পাট চাষিদের যোগ করলে সংখ্যাটা আরও কয়েক লক্ষ বাড়ে। অভিযোগ, চট শ্রমিকদের দৈন্যদশা নিয়ে উদাসীন সরকার। সরকারের তরফে শ্রমিকদের বকেয়া টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা শ্রম দফতরের। অথচ সেখানে সংশ্লিষ্ট সরকারি পদের ৫০ শতাংশই খালি বলে জানা গিয়েছে শ্রম দফতর সূত্রে। পদ খালি সংশ্লিষ্ট গ্র্যাচুইটি ইনস্পেক্টরের।

রাজ্যের জেলাগুলিতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ওই সব শূন্য পদে লোক নেওয়া হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে একজনকে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে খাতায়-কলমে চিহ্নিত করা রয়েছে। ইএসআই এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড দফতরের ভূমিকাও হতাশজনক। গ্র্যাচুইটি ও পিএফ নিয়ে আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই। কার্যত শ্রমিকদের পাওনা আদায়ের জন্য ন্যূনতম পরিকাঠামোও নেই রাজ্যে। কেন্দ্রীয় দফতরগুলির অবস্থাও করুণ।

শ্রমিকদের দূরবস্থার কথা মেনে নিচ্ছেন শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুও। তিনি বলেন, “পিএফের পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা ভাল। তবে বকেয়া গ্র্যাচুইটি যে শ্রমিকেরা পাচ্ছেন না, সেটা বাস্তব। মালিকেরা বলছেন, শ্রমিকদের প্রাপ্য গ্র্যাচুইটি দিলে তাঁরা মিল চালাতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় জুট বোর্ডের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারকে ভূমিকা নিতে হবে। না হলে শ্রমিকেরা প্রাপ্য পাবেন না। শ্রমিক সংগঠনগুলিও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেন না। ফলে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।” যদিও শ্রম দফতরে নিয়োগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE