Advertisement
E-Paper

ভর্তির পুরনো পদ্ধতিই ভরসা বেশির ভাগ কলেজে

অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্য সরকার একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ায় বিপত্তিতে পড়েছে গ্রামবাংলার বহু ছাত্রছাত্রী। সারা দিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্ম নিতে হচ্ছে। তার উপরে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনকে টাকা দিয়ে তুলতে হচ্ছে ফর্ম, এমন অভিযোগও উঠেছে। বিশেষত, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েদের সমস্যা হচ্ছে আরও বেশি। নদী-নালা পেরিয়ে এক একেকটি কলেজে ফর্ম তুলতেই চলে যাচ্ছে গোটা একটা দিন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ০২:০১
ভ্যান রিকশার উপরে ফর্ম রেখে বিক্রিবাটা চলছে টাকি কলেজে। ছবি: নির্মল বসু।

ভ্যান রিকশার উপরে ফর্ম রেখে বিক্রিবাটা চলছে টাকি কলেজে। ছবি: নির্মল বসু।

অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্য সরকার একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ায় বিপত্তিতে পড়েছে গ্রামবাংলার বহু ছাত্রছাত্রী। সারা দিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্ম নিতে হচ্ছে। তার উপরে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনকে টাকা দিয়ে তুলতে হচ্ছে ফর্ম, এমন অভিযোগও উঠেছে। বিশেষত, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েদের সমস্যা হচ্ছে আরও বেশি। নদী-নালা পেরিয়ে এক একেকটি কলেজে ফর্ম তুলতেই চলে যাচ্ছে গোটা একটা দিন।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং মহকুমার ট্যাংরাখালি কলেজ, বঙ্কিম সর্দার কলেজ, গোসাবার হাজি দেশারথ কলেজ, ভাঙড় মহাবিদ্যালয়, কোথাও অনলাইনে ফর্মটুকুও তোলার ব্যবস্থা হয়নি। একাধিক কলেজের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এমন পরিকাঠামোও নেই তাঁদের। কিন্তু যার জেরে আখেরে ভুগতে হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। কাকলি মণ্ডল, পুষ্পা নস্কররা বলে, “অনেক দূর থেকে আসতে হয় আমাদের। তার উপরে প্রবল গরমে লাইন দিয়ে ফর্ম তুলে গোটা দিন বেরিয়ে যাচ্ছে। ভেবেছিলাম অনলাইনে ফর্ম তোলার অন্তত ব্যবস্থা হবে। তা হলে সত্যিই আমাদের মতো ছেলেমেয়েদের অনেকটা সুবিধা হত।” অনেক ছাত্রছাত্রীই জানায়, গ্রামেও কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে এখন সাইবার ক্যাফে আছে। ফলে সেখানে গিয়ে এক সঙ্গে একাধিক কলেজে ফর্ম ফিলাপ করা যেতে পারত। ক্যানিংয়ের ডেভিড সেশন হাইস্কুলের ছাত্রী মেঘমালা ঘোষাল যেমন। এ বার সে যাদবপুর এবং আশুতোষ কলেজের ফর্ম অনলাইনেই ফিলাপ করেছে। তার মা শিবাণীদেবী বলেন, “দু’টো কলেজের ভরসায় তো বসে থাকা যায় না। ফলে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে লাইন দিয়েই স্থানীয় কিছু কলেজে ফর্ম তুলে রাখছি।” গোসাবার রাঙাবেলিয়া হাইস্কুল থেকে এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে প্রীতিলতা মণ্ডল জানায়, কলকাতায় সুরেন্দ্রনাথ কলেজ, বঙ্গবাসী কলেজ, বিদ্যাসাগর কলেজে লাইন দিয়েও গত সোমবার ফর্ম তুলে পারেনি। পুনম রায় জানায়, প্রেসিডেন্সি বা আশুতোষ কলেজে অনলাইনে ফর্ম ফিলাপ করা গেলেও অন্য কলেজের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে তাকেও।

উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট কলেজে ১২ তারিখ থেকে ফর্ম দেওয়া হবে। অনলাইন নয়। টাকি সরকারি কলেজেও লাইনে দাঁড়িয়েই প্রচলিত প্রথায় ফর্ম তুলতে হচ্ছে ছেলেমেয়েদের। সেখানে আবার দেখা গেল, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের লোকজনও কোথাও ভ্যান রিকশার উপরে বসে, কোথাও কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে হাতে হাতেই টাকার বিনিময়ে ফর্ম বিলি করছে ছেলেমেয়েদের। কত টাকা গুণতে হল ফর্ম তুলতে? প্রশ্ন শুনেই ঝাঁঝিয়ে উঠল এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী। উত্তর এল, “তাতে আপনার কী? ফর্ম তুলতে টাকা লাগুক, আর ভর্তি হতেই লাগুক, আমাদের ভবিষ্যৎটাই আসল। কেউ যদি টাকা নিয়েও পছন্দ মতো বিষয়ে সিট জোগাড় করে দিতে পারে, তা হলে আমাদের আপত্তি নেই।” কলেজ কর্তৃপক্ষ ৪০ টাকার বিনিময়ে ফর্ম দিচ্ছেন। ছাত্র সংগঠনগুলির বক্তব্য, গরমে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে যাতে ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধা না হয়, সে জন্য ৪০ টাকার বিনিময়েই তারা ফর্ম দিচ্ছে। বসিরহাট কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা বাদল মিত্র জানান, তাঁদের কলেজ সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত। ফর্মের দাম পড়বে ১০০ টাকা।

বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ে মঙ্গলবার থেকে অনলাইনে ফর্ম পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নোটিস দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, ফর্ম তোলার ব্যাপারে ১২ খোঁজ নিতে হবে। এর অবশ্য কোনও নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ নেই নোটিসে। হাবরা শ্রীচৈতন্য কলেজে এ মাসের ৮ তারিখ থেকে অনলাইনে ফর্ম তোলা যাচ্ছে। তবে জমা দিতে হবে হাতে হাতে। মঙ্গলবার তারিখ থেকে কলেজের কাউন্টারেও মিলছে ফর্ম। যদিও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এ দিন তেমন লাইন ছিল না। বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী অনলাইনেই ফর্ম তুলেছে। অধ্যক্ষ ইন্দ্রমোহন মণ্ডল বলেন, “অনলাইনে ভর্তির পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারলে বিশৃঙ্খলা এড়ানো যেত। কিন্তু ছাত্ররা চেয়েছে, চিরাচরিত রীতিতেই ফর্ম জমা নেওয়া হোক।” অতীতে ভর্তি নিয়ে বহু গোলমালের সাক্ষী এই কলেজ। ছাত্র সংগঠনগুলির মারামারি, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হেনস্থা কিছুই বাদ যায়নি। অশোকনগর নেতাজি শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ে অবশ্য ফর্ম তোলা বা জমা নেওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটাই হচ্ছে অনলাইনে। উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকায় অনলাইনেই ভর্তি প্রক্রিয়া সারা হচ্ছে এখানে। ভর্তি নিয়ে অতীতে এখানে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর ঝামেলা বেধেছে।

বাগদার বিআর অম্বেডকর শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয় মাত্র বছর কয়েক হল তৈরি হয়েছে। বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং সংস্কৃত তিনটি মাত্র বিষয়ে পড়াশোনা হয় এখানে। ভর্তির পুরো প্রক্রিয়াই পুরনো পদ্ধতিতে হচ্ছে। প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে সিন্দ্রাণী থেকে ফর্ম নিতে এসেছিল সায়ন্তনী মজুমদার। বাবা খেতমজুর। মেয়েটির কথায়, “অনলাইনে ভর্তির ব্যবস্থা হলে খুবই সুবিধা হত। যাতায়াতের খরচ বাঁচত। পরিশ্রমও কম হত।”

ক’দিন আগেই অনলাইনে ভর্তির দাবিতে বারাসত সান্ধ্য কলেজে স্মারকলিপি দিতে যায় বিজেপি। সে সময়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। ৬ জন বিজেপি কর্মী জখম হয়। তবে ওই কলেজে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া এখনও চালু হয়নি। অন্য দিকে, ব্যারাকপুর মহকুমার ৯টি কলেজের মধ্যে মাত্র দু’টিতে চালু হয়েছে এই ব্যবস্থা। কলেজ দু’টি হল রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ এবং স্বামী মহাদেবানন্দ মহাবিদ্যালয়। ১৬ জুন পর্যন্ত ভর্তি চলবে এখানে। তবে শুধু অনলাইনে ফর্ম ফিলাপ করা যাচ্ছে। টাকা জমা দেওয়া থেকে শুরু করে বাকি সমস্ত কাজই করতে হচ্ছে কলেজে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে।

online online admission college admission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy