Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মোদীর সভা ঘিরে অবরুদ্ধ শ্রীরামপুর

কর্তব্যরত পুলিশ কর্তাকে ডেকে প্রশ্ন করা গেল, “দাদা, লোক কেমন হল বলুন তো।” মাথাটাথা চুলকে একগাল হেসে ফেললেন। বললেন, “কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। এত বছর চাকরি করছি, কিন্তু আজ কোনও হিসেব মাথায় কাজ করছে না।” মাথা কাজ করবেই বা কেমন করে। কারণটা যে ওই মাথাই।

তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। রবিবার শ্রীরামপুরে প্রকাশ পালের তোলা ছবি।

তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। রবিবার শ্রীরামপুরে প্রকাশ পালের তোলা ছবি।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৪ ০১:০৪
Share: Save:

কর্তব্যরত পুলিশ কর্তাকে ডেকে প্রশ্ন করা গেল, “দাদা, লোক কেমন হল বলুন তো।” মাথাটাথা চুলকে একগাল হেসে ফেললেন। বললেন, “কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। এত বছর চাকরি করছি, কিন্তু আজ কোনও হিসেব মাথায় কাজ করছে না।”

মাথা কাজ করবেই বা কেমন করে। কারণটা যে ওই মাথাই। যে দিকে চোখ যাচ্ছে, শুধু সারি সারি মাথা। যার মূল অংশটা আবার অল্পবয়সীদের। হয় তো অনেকের ভোটাধিকারই হয়নি। কিন্তু স্লোগানে গলা মিলিয়ে তারাও চেঁচিয়ে যাচ্ছে নাগাড়ে। বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর সভায় রবিবার এমন ভিড়ের সাক্ষী থাকল গঙ্গাপাড়ের প্রাচীন শহর শ্রীরামপুর।

তবে ভিড়টা যে শুধু শ্রীরামপুর কেন্দ্রিক, সেটা ভাবলে ভুল হবে। এমনকী, বিজেপি গাড়ি চড়িয়ে জনতাকে টেনে এনেছে সভাস্থলে, সেটাও হবে অপব্যাখ্যা। মোদীর টানে দূর দূর থেকে জড়ো হয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। উত্তর ২৪ পরগনা থেকে গঙ্গা পেরিয়ে যেমন মানুষ এসেছে, তেমনই এসেছে মেদিনীপুর, হাওড়া, বর্ধমান থেকেও।

সভা শেষে দলের তৃপ্ত এক নেতাকে তাই বলতে শোনা গেল, “এ হল মোদী ম্যাজিক। কাউকে বাড়ি থেকে ধরে বেঁধে আনতে হয়নি। ওঁর ভাষণ শুনতে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এসেছেন সকলে।” বস্তুত, রবিবার বেলা ৩টের পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কার্যত অবরুদ্ধ থেকেছে শ্রীরামপুর শহর। জিটি রোডে যান চলাচল ছিল খুবই ধীর গতিতে। দিল্লি রোডের অবস্থাও তথৈবচ। শহরের ভিতরে বাস, অটো প্রায় কিছুই চলেনি। চূড়ান্ত গরমের মধ্যে লোকাল ট্রেনে গাদাগাদি ভিড়ে নাকাল হয়েছেন অসংখ্য যাত্রী।

লালগড় থেকে এসেছিলেন বলজিৎ রাম। এর আগেও মোদীর সভার সাক্ষী থেকেছেন বলে জানালেন। কিন্তু শ্রীরামপুরের ভিড় দেখে তিনিও তাজ্জব। মাহেশের বাসিন্দা সুদীপ পালের সবে গোঁফের রেখা বেরিয়েছে। মোদীর নামে জয়ধ্বনি তুলে স্লোগানে গলা ফাটাচ্ছিল। সদ্য তরুণটির কথায়, “রাজনীতি-টাজনীতি বুঝি না। ওঁকে দেখতে চলে এসেছি, ব্যস।”

ভিড়ের নিরিখে এই যদি হয় মোদী ম্যাজিকের চিত্র, অবধারিত ভাবে কিছুটা বিশৃঙ্খলাও ঘটা অস্বাভাবিক নয়। রবিবার সভাস্থলের কাছে জনতাকে সামাল দিতে রীতিমতো মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে পুলিশকে। মাঝে ব্যারিকেড ভেঙে গিয়েছে এক বার। জেড প্লাস ক্যাটাগরির নেতার নিরাপত্তা বলে কথা। পুলিশ কর্তারাও ছিলেন তটস্থ!

এ দিন ভিড়ের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাটা ছিল চোখে পড়ার মতো। নজর এড়ায়নি মোদীরও। হাওড়া ও হুগলির বিজেপি প্রার্থীদের পাশে বসিয়ে শ্রীরামপুর স্টেডিয়ামের সভা থেকে মোদী বললেন, “আঠারো থেকে আঠাশ বছরটা হল খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি রাজনীতির কথা বলছি না। কিন্তু এই বয়সের তরুণরা, আপনারা নিজেদের কথা ভাবুন। আপনাদের জীবনে আগামী পাঁচটা বছর কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। দেখবেন, সেটা যেন নষ্ট না হয়।”

শ্রীরামপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বাপ্পি লাহিড়ীও এ দিন নজর কেড়েছেন নিজস্ব স্টাইলে। মোদী পৌঁছনোর আগে ঘণ্টাখানেক বাপ্পি-জাদুতে মজে ছিল জনতা। একের পর এক গান গেয়ে মাতিয়েছেন বাপ্পিদা। আর বলেছেন, “১৬ তারিখটা যেতে দিন। তারপর এক দিন এই স্টেডিয়ামেই এসে গান গাইব। সে দিন উল্টে দেব পাল্টে দেবও হবে, উ লা লা-ও (দু’টিই বাপ্পির জনপ্রিয় গান) হবে।

ভোটের মারপ্যাঁচ শিখতে যদি আরও কিছুটা সময় নেন ‘রাজনীতিতে নবাগত’ বাপ্পি, মনোরঞ্জনের মশালাদার রান্নায় কিন্তু তিনি ‘ভজহরি মান্না’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gautam banerjee srirampur modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE