বিকল্প চাষ হিসেবে গত কয়েক বছরে সূর্যমুখীতে লাভের মুখ দেখেছিলেন ডায়মন্ড হারবার এবং কাকদ্বীপ মহকুমার চাষিরা। কিন্তু এ বার সময়মতো পর্যাপ্ত বীজ না মেলায় দুই মহকুমাতেই মার খেয়েছে সূর্যমুখী চাষ। চাষিদের অভিযোগ, বিঘাপ্রতি যে ফলন পাওয়ার কথা ছিল, এ বার তার চেয়ে ফলন কমেছে। কেউ কেউ অবশ্য বীজের অভাবের পাশাপাশি প্রবল গরমকেও চাষ মার খাওয়ার কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন।
সূর্যমুখী চাষের জন্য ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বীজ বপন হয়। ফসল তোলা হয় মার্চ-এপ্রিলে। কৃষি দফতরের হিসেবে, গত বছর ডায়মন্ড হারবার এবং কাকদ্বীপ মহকুমায় চাষ হয়েছিল যথাক্রমে ৩৪৩৭ হেক্টর এবং ১৫৫৭ হেক্টর জমিতে। এ বার তা হয়েছে যথাক্রমে ৩২১২ হেক্টর এবং ১৭২৫ হেক্টরে। কাকদ্বীপে চাষের এলাকা বাড়লেও ফলন তেমন হয়নি বলেই দাবি করেছেন চাষিরা।
চাষিরা ক্ষতির কথা বললেও তা খুব বেশি নয় বলেই দাবি করেছেন কৃষি দফতরের পক্ষে দুই মহকুমার দায়িত্বে থাকা সহ-কৃষি অধিকর্তা এম এ লস্কর। সরকারি বীজ সরবরাহ করতে না পারা নিয়ে তিনি বলেন, “এ বার পরীক্ষার পরে দেখা গিয়েছে সরকারি বীজের মান খারাপ। তাই তা বণ্টন করা হয়নি। বেসরকারি বীজ সরবরাহও যথাযথ হয়নি। তাই সূর্যমুখী চাষ সামান্য মার খেয়েছে।”
ডায়মন্ড হারবারের কুলপি, মন্দিরবাজার, মগরাহাট, উস্তির মতো কয়েকটি ব্লকের বহু চাষি গত কয়েক বছরে ধান থেকে সরে এসেছেন সূর্যমুখী চাষে। কাকদ্বীপের কিছু অংশেও এই চাষ একচেটিয়া ভাবে বেড়েছে। সব এলাকার চাষিদেরই ক্ষতি নিয়ে একই রকম ক্ষোভ। কুলপির চাষি সাবির শেখ বলেন, “সাধারণত প্রতি কেজি সূর্যমুখীর দানা থেকে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ গ্রাম তেল হয়। এ বার ফুলের মাপ সাত-আট ইঞ্চির হলেও দানা কমে গিয়েছে। ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রামের বেশি তেল হয়নি। সরকারি বীজ না পাওয়ায় বেসরকারি বীজ কাজে লাগিয়েছিলাম। তাতেও লাভ হল না।” কাকদ্বীপের তক্তিপুর এলাকার চাষি ভাস্কর হালদার বলেন, “বিঘাপ্রতি জল, সার, বীজ, পোকা মারার ওষুধ দিয়ে সূর্যমুখী চাষে খরচ পড়ে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। লাভ হয় দু’হাজার টাকার মতো। এ বার ফলন না হওয়ায় চাষের খরচই ওঠেনি। হাজার খানেক টাকা ক্ষতি হয়েছে।” ভাস্করবাবুর মতো সমস্যায় পড়েছেন বাঘের চক, লেবুতলা, বাবুমহল, কামারহাটের মতো এলাকার চাষিরাও।
স্থানীয় বীজ ব্যবসায়ীরাও মানছেন বেসরকারি বীজ সময়মতো না আসায় অনেক চাষির হাতেই তা পৌঁছনো যায়নি। যেমন, কুলপির করঞ্জলির বীজ ব্যবসায়ী সুজিত ঘোষ বলেন, “সরকারি বীজ অনেক চাষিই নেন না। বেসরকারি বীজের উপরে ভরসা করেন। কিন্তু এ বার তা সরবরাহ হতে দেরি হয়েছে।”
এ বার চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নিয়ে চাষিদের যেমন ক্ষোভ রয়েছে, তেমনই সূর্যমুখী চাষে প্রবল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও গত কয়েক বছরে সরকারি স্তরে দুই মহকুমায় বীজ-খামার গড়া বা উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি বলেও তাঁদের অভিযোগ। বস্তুত, অনেক চাষিই এখন নিজেদের ঘরে তেল তৈরি করে তা বিক্রি করেন। সরকারি উদ্যোগে সেই তেল বিক্রির কোনও ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি বলে তাঁদের দাবি।
করঞ্জলি পঞ্চায়েতের চাষি বরুণ হালদার বলেন, “পোকার হাত থেকে কী ভাবে ফুল বাঁচানো যায়, তা নিয়ে এখনও সরকারি ভাবে আমাদের কোনও পরামর্শ দেওয়া হয় না। আমরা নিজেরাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই।” ওই এলাকারই আর এক চাষি সইফুল শেখও প্রশিক্ষণের অভাবের কথা তুলেছেন।
এই সব অভিযোগ মানতে চাননি কৃষি দফতরের কর্তারা। দুই মহকুমার সহ-কৃষি অধিকর্তার দাবি, গত ৮-১০ বছরে সূর্যমুখী চাষ যেমন বেড়েছে, তেমনই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও হয়েছে। তবে, ওই এলাকায় কৃষি-খামার বা সূর্যমুখীর বীজ-খামার তৈরির সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার এখনও নেয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy