Advertisement
১৯ মে ২০২৪
উত্তর ২৪ পরগনা

যাত্রী-দুর্ভোগ রুখতে জোর রাস্তা তৈরিতে

দীর্ঘদিন ধরে উত্তর ২৪ পরগনার গ্রামীণ এলাকায় বেহাল রাস্তা নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ তুঙ্গে। প্রশাসনের নানা মহলে আবেদন-নিবেদনও তাঁরা কম করেননি। সেই ক্ষোভ প্রশমিত করতে লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণার আগেই জেলা জুড়ে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে নতুন রাস্তা তৈরির কাজে হাত দিয়েছে জেলা পরিষদ।

এখন যে অবস্থায়। গোপালনগর-কল্যাণপুর রাস্তা (বাঁদিকে)। ডানদিকে, মনিগ্রাম থেকে সোহাইপুর রাস্তার হাল। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

এখন যে অবস্থায়। গোপালনগর-কল্যাণপুর রাস্তা (বাঁদিকে)। ডানদিকে, মনিগ্রাম থেকে সোহাইপুর রাস্তার হাল। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০৩:১১
Share: Save:

দীর্ঘদিন ধরে উত্তর ২৪ পরগনার গ্রামীণ এলাকায় বেহাল রাস্তা নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ তুঙ্গে। প্রশাসনের নানা মহলে আবেদন-নিবেদনও তাঁরা কম করেননি। সেই ক্ষোভ প্রশমিত করতে লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণার আগেই জেলা জুড়ে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে নতুন রাস্তা তৈরির কাজে হাত দিয়েছে জেলা পরিষদ। পাশাপাশি, ওই প্রকল্পে তৈরি জেলার ২২টি ব্লকের ৮৩টি বেহাল রাস্তার পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের কাজও লোকসভা ভোটের পরে শুরুর আশ্বাস দিয়েছে তারা।

জেলা সভাধিপতি তৃণমূলের রহিমা মণ্ডল জানিয়েছেন, জেলায় মোট ৬৬৯ কিলোমিটার রাস্তা প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে তৈরি হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র সম্প্রতি জেলা পরিষদকে ওই প্রকল্পে তৈরি হয়েও বেহাল হয়ে পড়া সড়কের তালিকা তৈরি ও সংস্কারের জন্য খরচের পরিমাণ-সহ প্রকল্প তৈরির নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মতোই বাস্তুকারদের দিয়ে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে।

জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী বলেন, “জেলায় বেহাল প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা মেরামতির জন্য ইতিমধ্যেই অর্থমন্ত্রী কয়েক কোটি টাকা দিয়েছেন। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে তার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। পুরোদমে কাজ শুরু হবে নির্বাচনের পরেই।”

গ্রামীণ পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির জন্যই ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাস্তা বানানো হয়। যে সব রাস্তা পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় আগে তৈরি হয়েছে, মেরামতির জন্য আপাতত তেমন ৮৩টি রাস্তাই বেছে নিয়েছে জেলা পরিষদ। সব মিলিয়ে মেরামত করা হবে প্রায় ৪৭০ কিলোমিটার রাস্তা। যার মধ্যে রয়েছে সন্দেশখালি-১ এবং সন্দেশখালি-২ ব্লক মিলিয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তা, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের প্রায় ২৫ কিলোমিটার রাস্তা, বনগাঁ ব্লকের প্রায় ৪৫ কিলোমিটার রাস্তা। ওই সব রাস্তা বর্তমানে প্রায় জলহীন ডোবার চেহারা নিয়েছে। বেশির ভাগ জায়গাতেই পিচ উঠে গিয়েছে। কোনও রাস্তাই পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হয়নি। শুধু জেলা পরিষদ নিজস্ব তহবিল বা কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের টাকায় ছোটখাটো মেরামতি করেছে। জেলা পরিষদ জানিয়েছে, মেরামতি বা সংস্কারের জন্য কোনও অর্থ বরাদ্দ না হওয়াতেই রাস্তাগুলির ওই অবস্থা হয়েছে।

বনগাঁর যে রাস্তাগুলি মেরামত করা হবে তার মধ্যে রয়েছে, গোপালনগর কালীবাড়ি মোড় থেকে কল্যাণপুর মোড় পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা। তৈরি হয়েছিল ২০০৮ সালে। তার পরে আর কখনও সংস্কার হয়নি। ফলে, বর্তমানে বেহাল হয়ে পড়া ওই রাস্তায় যাতায়াত করতে মানুষের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ মণ্ডল বলেন, “দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে সড়কটির অবস্থা ভয়াবহ। বড় গর্তের জন্য মাঝেমধ্যেই সব্জি ও মালপত্র বোঝাই ভ্যান উল্টে যায়।”

ওই ব্লকেরই মণিগ্রাম থেকে সভাইপুর পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার সড়কটিও মেরামতির তালিকায় রয়েছে। রাস্তাটি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে তৈরি হয়েছিল ২০০২ সালে। তার পরে আর সারানো হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ রায় বলেন, “গত বর্ষার পর থেকে সড়কের অবস্থা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। আমাদের এলাকাটি কৃষিপ্রধান। কিন্তু রাস্তার জন্য চাষিরা সব্জি হাট-বাজারে নিয়ে যেতে সমস্যায় পড়ছেন।” একই অবস্থা হাবরা-২ ব্লকের নুরপুর থেকে ঈশ্বরীগাছা পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সড়কেরও।

গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের পরে জেলা পরিষদের ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। তার আগে দীর্ঘদিন জেলা পরিষদ ছিল বামেদের দখলে। সেই সময়ে কেন রাস্তাগুলি সংস্কার হয়নি?

বাম পরিচালিত আগের জেলা পরিষদের মুখ্য সচেতক সঞ্জয় দত্ত চৌধুরীর দাবি, “তৃণমূলের অসহযোগিতা এবং বাধায় তিন বছরেরও বেশি সময় জেলা পরিষদ স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেনি। তার মধ্যেও কিছু সড়ক সারানো হয়। তা ছাড়া, আমাদের সময়ে তহবিলেরও অভাব ছিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE