Advertisement
১৬ মে ২০২৪

স্ত্রীর স্মৃতিরক্ষায় ১০ লক্ষ টাকা দিলেন সত্যচরণ

আড্ডা এবং নীরবতা...। স্ত্রীর ছবির সঙ্গে সত্যচরণ।—নিজস্ব চিত্র।

আড্ডা এবং নীরবতা...। স্ত্রীর ছবির সঙ্গে সত্যচরণ।—নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৪ ০৬:৫১
Share: Save:

স্ত্রীর মৃত্যুর পরে তাঁর স্মৃতিতে এমন কিছু করতে চেয়েছিলেন বৃদ্ধ সত্যচরণ দাস, যে কাজ মানুষের সেবায় লাগবে। চেয়েছিলেন স্থায়ী কিছু করতে। ছেলেমেয়েদের কাছে সে কথা পাড়তেই রাজি হয়ে যান তাঁরাও। সম্প্রতি শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে ১০ লক্ষ টাকা দান করেছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক সত্যচরণবাবু। সেই টাকায় ওই হাসপাতালে তৈরি হল প্রসূতিদের শল্য কক্ষ। সত্যচরণবাবুর স্ত্রীর নামে কক্ষের নাম ‘লতিকা দাস স্মৃতি প্রসূতি শল্য কক্ষ’। সত্যচরণবাবু বলেন, “আমাদের কাজে যদি পাঁচ জনের উপকার হয়, খুব শান্তি পাব।”

সত্যচরণবাবু রাজ্য সরকারের রেশম শিল্প দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা ছিলেন। বয়স সত্তর পেরিয়েছে। থাকেন শেওড়াফুলি স্টেশন-সংলগ্ন নোনাডাঙা রোডে। দুই মেয়ে বিবাহিত। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। সত্যচরণবাবু জানান, গত বছরের অগস্ট মাসে লতিকাদেবীর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। ওই ভোরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় শ্রমজীবী হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে ওই চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় তাঁকে ভর্তি করানো হয় মুকুন্দপুরে ইমএম বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। দিন সাতেক চিকিৎসার পরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

স্ত্রীর মৃত্যুর পরেই তাঁর স্মৃতিরক্ষার্থে সামাজিক কাজ করবেন বলে মনস্থ করেন সত্যচরণ। ছেলে-বৌমা, মেয়ে-জামাই সবাই একবাক্যে তাতে সম্মতি দেন। এর পরেই শ্রমজীবী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা।

কিন্তু শ্রমজীবীকে বেছে নিলেন কেন? প্রাক্তন ওই সরকারি অফিসারের বিশ্লেষণ, “শ্রমজীবী কর্পোরেট হাসপাতাল নয়। তিল তিল করে মানুষের সাহায্যেই ওই হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। গরিব মানুষ স্বল্প খরচে এখানে চিকিৎসা পান। তাই এই হাসপাতালেই অনুদান দিতে দু’বার ভাবিনি। এই সিদ্ধান্তে বাড়ির সকলেই সহমত হয়।” ওই হাসপাতালে অনুদানের পাশাপাশি স্ত্রীর স্মৃতিতে দুঃস্থদের বস্ত্রদানও করেছেন তিনি।

সম্প্রতি শ্রীরামপুরের বেলুমিল্কি গ্রামের ওই হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট চালু হয়। একই দিনে উদ্বোধন হয় লতিকাদেবীর নামাঙ্কিত শল্য কক্ষেরও। সত্যচরণবাবুর দানে খুশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে ওই শল্যকক্ষে কাজ এখনও শুরু হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে গৌতম সরকার জানান, আগামী মার্চ মাসে ওই পরিষেবা চালু হয়ে যাবে। হাসপাতালের অন্য এক শীর্ষকর্তা ফণীভূষণ ভট্টাচার্য বলেন, “স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবসা বন্ধ করতেই আমাদের এই হাসপাতাল তৈরি। প্রথম ইট পড়া থেকে শুরু করে হাসপাতালের সমস্ত কিছুই হয়েছে মানুষের দানে। আরও অনেক পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। সত্যচরণবাবুর মতো আরও মানুষ এগিয়ে এলে, আরও বড় পদক্ষেপ করা যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

srirampore satyacharan prakash paul
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE