Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সাফল্যের জোয়ারে ভাসছে উত্তর ২৪ পরগনা

মাধ্যমিকের ফলাফলে এ বার উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট ও বনগাঁ মহকুমার স্কুলের ফল চোখে পড়ার মতো। মেধা তালিকায় সম্ভাব্য তৃতীয় তথা মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছে বসিরহাট হরিমোহন দালাল বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী বীথি মণ্ডল। একই স্কুলের ছাত্রী ঐশী মণ্ডল মেয়েদের মধ্যে সম্ভাব্য দ্বিতীয় এবং সামগ্রিক মেধা তালিকায় সম্ভাব্য চতুর্থ স্থান লাভ করেছে। বীথি পেয়েছে ৬৮০। মাত্র এক নম্বর কম ঐশীর। বসিরহাটের সোনপুকুর ধারের বাসিন্দা চিকিৎসক জগবন্ধু মণ্ডল এবং স্ত্রী সুস্মিতার একমাত্র মেয়ে বীথি। জয়েন্ট পরীক্ষা দেবে সে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৪ ০০:৫৫
Share: Save:

মাধ্যমিকের ফলাফলে এ বার উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট ও বনগাঁ মহকুমার স্কুলের ফল চোখে পড়ার মতো।

মেধা তালিকায় সম্ভাব্য তৃতীয় তথা মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছে বসিরহাট হরিমোহন দালাল বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী বীথি মণ্ডল। একই স্কুলের ছাত্রী ঐশী মণ্ডল মেয়েদের মধ্যে সম্ভাব্য দ্বিতীয় এবং সামগ্রিক মেধা তালিকায় সম্ভাব্য চতুর্থ স্থান লাভ করেছে। বীথি পেয়েছে ৬৮০। মাত্র এক নম্বর কম ঐশীর। বসিরহাটের সোনপুকুর ধারের বাসিন্দা চিকিৎসক জগবন্ধু মণ্ডল এবং স্ত্রী সুস্মিতার একমাত্র মেয়ে বীথি। জয়েন্ট পরীক্ষা দেবে সে। তারপর ঠিক করবে চিকিৎসক হবে না ইঞ্জিনিয়ার। ছবি আঁকতে এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে ভালবাসে বীথি। তার ছ’জন গৃহশিক্ষক ছিলেন। কাছারিপাড়ার বাসিন্দা ঐশীর বাবা শঙ্করশুভ্রবাবু এসআইসি কর্মী। রবীন্দ্রসঙ্গীতের ছাত্রী ঐশী এই ফল বিশ্বাসই করতে পারছে না। মা মহুয়াদেবী বলেন, “নাচ-গান-বৃত্তি নিয়ে সময় কাটানো মেয়েটা দিনে মাত্র ৪-৫ ঘণ্টা পড়ত।” বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায় সে এই কিশোরী। সুযোগ পেলে টিভিতে চোখ রাখে সে। বীথি-ঐশীদের স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সবিতা বিশ্বাস, চন্দ্রা মিত্রেরা বলেন, ‘‘একই ব্যাচে এত ভাল দু’জন মেয়ে। আমরা গর্বিত। আশা করি ওদের দেখে আগামী প্রজন্মের মেয়েরাও অনুপ্রাণিত হবে।”

বসিরহাটের টাউন হাইস্কুলে এই প্রথমবার কোনও ছাত্র মাধ্যমিকে সম্ভাব্য মেধাতালিকায় স্থান পেল। দেবরাজ দাস ৬৭৮ নম্বর নিয়ে সম্ভাব্য পঞ্চম। তার বাবা ভোলানাথবাবু ব্যবসায়ী। মা শুক্লাদেবী বাড়ির কাজ সামলান। একমাত্র সন্তান দেবরাজের অবশ্য দিনে ৫-৬ ঘণ্টার বেশি পড়তে ভাল লাগত না। ভালবাসে ক্রিকেট খেলতে। ছবি আঁকা বা গিটার বাজানোর শখও আছে। ওই স্কুলেরই বলরাম হাজরা ৬৭৫ নম্বর পেয়ে সম্ভাব্য অষ্টম স্থান পেয়েছে। গরিব পরিবারের ছেলে বলরামের বাবা স্বপনবাবু চাষবাসের কাজে যুক্ত। মা কণিকাদেবী সব সময়ে চিন্তিত থাকেন সংসার নিয়ে। ছোট ছেলে অনুপম আবার মূক-বধির। এই পরিস্থিতিতে বলরাম চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নকে সামনে রেখে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ফুটবল খেলতে এবং ক্যুইজ করতে ভালবাসে সে। মায়ের বুক এখন দুরুদুরু। কী ভাবে ভবিষ্যতে পড়ার খরচ চালাবেন কৃতী সন্তানের। দুই ছাত্রের স্কুলের প্রধান শিক্ষক যোগেশচন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘‘ওদের জন্য আমরা ছাত্র-শিক্ষক সকলেই গর্বিত।’’

টাকি রামকৃষ্ণ মিশন হাইস্কুলের সায়ন্তন লাহিড়ি ৬৭৫ নম্বর পেয়ে সম্ভাব্য পঞ্চম। বাবা শ্যামলবাবু ব্যবসায়ী। মা দুর্গাদেবী সংসার সামলান। গান গাইতে ভালবাসে করতে ছেলে। ছবিও আঁকে। সময় পেলে টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখে। সকালে উঠে শরীরচর্চাও করে। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে। ওই স্কুলেরই ছাত্র অনীশ কোনার ৬৭৭ নম্বর পেয়ে সম্ভাব্য ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে। তার বাবা ধনঞ্জয়বাবু মিশন স্কুলেই শিক্ষকতা করেন।


বাঁ দিক থেকে, সহপাঠীদের উচ্ছ্বাস অনীশ এবং সায়নকে নিয়ে। পরিবারের সঙ্গে হাসিমুখে ঐশী।
মায়ের আদর, রূপায়ণকে। বৃহস্পতিবার ছবিগুলি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক, নির্মল বসু ও শান্তনু হালদার।

ধনঞ্জয়বাবু এবং মা সীমাদেবীর একমাত্র সন্তান অনীশ। চিকিৎসক হতে চায় সে। ৬ জন গৃহশিক্ষক ছিল তার। বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় ছেলেটি যোগ দেয় নিয়মিত। ভালবাসে ক্রিকেট-ব্যাডমিন্টন খেলতেও। মিশন স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুদ্ধভাবানন্দ জানান, সায়ন্তন, অনীশ ছাড়াও সৌম দফাদার, সুমন দাস, রৌনক দাস, অগ্নিশ্বর চট্টোপাধ্যায়, এবং অলয় পাল মেধা তালিকায় সম্ভাব্য বারো থেকে ষোলতম স্থান পেয়েছে। এদের সকলের জন্য তাঁরা গর্বিত বলে জানালেন তিনি।

বাদুড়িয়ার চাতরা নেতাজী বালিকা শিক্ষানিকেতনের ছাত্রী দেবলিনী মিশ্র ৬৭৪ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় সম্ভাব্য নবম স্থান লাভ করেছে। তার বাবা স্কুলশিক্ষক অভিজ্ঞান মিশ্র। মা রত্নাদেবী।

সত্যাগ্নি মজুমদার এ বার ৭৭৬ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় সম্ভাব্য সপ্তম। ভবিষ্যতে বিজ্ঞানী হতে চায় বনগাঁর গোপালনগরের পাল্লা এলাকার বাসিন্দা এই কিশোর। পাল্লা কালীপদ চক্রবর্তী উচ্চবিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল সে। মা সাথীদেবী আইসিডিএস কর্মী। ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই থাকেন তিনি। দীর্ঘদিন আগেই স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছে তাঁর। অবসর সময়ে টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখা ও গল্পের বই পড়তে ভালবাসে ছেলেটি। মা বলেন, ‘‘ছেলের এই সাফল্যে খুবই আনন্দ হচ্ছে। আমি চাই ভবিষ্যতে ও যেন একজন ভাল মানুষ হয়।”

হাবরার কামারথুবা এলাকার বাসিন্দা রূপায়ণ সাহা মাধ্যমিকে সম্ভাব্য নবম স্থান পেয়েছে। ৬৭৪ নম্বর পেয়েছে সে। মেধা তালিকায় সম্ভাব্য নবম স্থান অধিকার করেছে। বাবা রমলবাবু ও মা ববিতার একমাত্র সন্তান রূপায়ণের গৃহশিক্ষক ছিল ৭ জন। ভগবত গীতা এই কিশোরের সর্বক্ষণের সঙ্গী। কেন গীতার প্রতি এই টান? হাবরা বয়েজ হাইস্কুলের ছাত্রটির কথায়, ‘‘গীতা পড়লে অনুপ্ররণা পাই, তাই পড়ি।’’ ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় সে। তবে সে সবের মধ্যেও ছাড়তে চায় না রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার অভ্যাস।

দত্তপুকুরের নিবাধুই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল সৌরভ রায়। ৬৭৭ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় সম্ভাব্য ষষ্ঠ স্থানটি তার। দত্তপুকুর অরবিন্দ পল্লির বাসিন্দা সৌরভের ছ’জন গৃহশিক্ষক ছিল। ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চায় ছেলেটি। পাশাপাশি পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণাও ইচ্ছে আছে।

ভাল ফল করার লক্ষে বহু বছর বেড়াতে যায়নি গাইঘাটার চাঁদপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী মধুলিকা ঘোষ। অষ্টম শ্রেণিতে উঠে গান, আবৃত্তি, ছবি আঁকাও ছেড়ে দেয়। লক্ষ্য পূরণ হয়েছে তার। এ বার মাধ্যমিকে সম্ভাব্য চতুর্থ স্থান দখল করেছে সে। প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৯।

টিভিতে যখন তার নাম ঘোষণা করা হল, নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না নির্ঝর চট্টোপাধ্যায়। মেধা তালিকায় সম্ভাব্য নবম সে। প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৪। বনগাঁর গোপালনগরের আকাইপুরের বাসিন্দা ছেলেটি পরীক্ষা দিয়েছিল ব্যাসপুর হাইস্কুল থেকে। বাবা গোপাদেবী ওই স্কুলেরই শিক্ষিকা। বাবা প্রদীপবাবু আইনজীবী। ছেলের ফল নিয়ে আশাবাদী ছিলেন তিনি। ভবিষ্যতে মায়ের ইচ্ছাতেই সে ডাক্তার হতে চায় বলে জানিয়েছে নির্ঝর। তার গৃহশিক্ষক ছিল ৮ জন।

মেধা তালিকায় এ বার সম্ভাব্য পঞ্চম স্থান পেয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের মনসাদ্বীপ রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র দিগন্ত দাস। প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৮। পড়াশোনার থেকে তার খেলাধূলাতেই আগ্রহ বেশি বলে জানালেন বাবা জয়দেববাবু এবং মা কুহেলিদেবী। ছবি আঁকা, গান, বিতর্ক প্রতিযোগিতাতেও সমান আগ্রহ ছেলেটির। সুন্দরবনের মানুষের সমস্যা নিয়ে খোঁজ-খবর রাখে এই কিশোর। চায় পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষক হতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

madhyamik result
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE