বছর খানেক আগে ইছামতীর ভাঙনে তলিয়ে যায় রাস্তা। তার পর থেকে বাংলাদেশের জমি দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে বসিরহাটের সীমান্তবর্তী ইটিন্ডার চকপানিতর গ্রামের বাসিন্দাদের। পানীয় জল, বিদ্যুৎ থেকে স্কুল— কিছুই নেই গ্রামে। সোমবার সকালে এখানে প্রচারে গিয়ে অবস্থা দেখে অবাক বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী কাজি আবদুর রহিম দিলু। বিএসএফকে অনেক অনুরোধের পরে ওই গ্রামে ঢোকার অনুমতি পান তিনি। গ্রামবাসীরা তাঁর কাছে নানা সমস্যার কথা শোনান। দিলুর আশ্বাস, মহকুমাশাসকের সঙ্গে তিনি এ নিয়ে দ্রুত কথা বলবেন। ভোটে জিতলে দিল্লিতে গিয়ে সমস্যাগুলি মেটানোর চেষ্টা করবেন।
এক দিকে ইছামতী নদী, অন্য দিকে বাংলাদেশের অবদার ভেড়ি। মাঝে পাশাপাশি দু’দেশের দুই গ্রাম— চকপানিতর এবং হাড়োদা। দুই গ্রামের মধ্যে দেশের সীমানা বোঝানোর জন্য রয়েছে কেবল পিলার। বিএসএফ জানিায়ছে, নো-ম্যানস ল্যান্ডে’ গ্রাম দু’টি রয়েছে। দু’টি গ্রামের মধ্যে দিয়ে এমন ভাবে দেশের সীমানা চলে গিয়েছে যে কোনটা কোন দেশের বোঝা দায়। চকপানিতর গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, নদীর ভাঙনে বছর খানেক আগে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় তাঁদের বাংলাদেশের গ্রামটির রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে।
গ্রামের বাসিন্দা সরিকুল ইসলাম, শরাফ গাজি প্রমুখের ক্ষোভ, বছর বছর ভোটের মুখে নেতারা আসেন, প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। তাঁরা বলেন, “প্রতিবারই ভোট দিই। কিন্তু নদী-ভাঙন ঠেকানো বা রাস্তা তৈরির জন্য কেউ কোনও ব্যবস্থা নিল না। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশের রাস্তা ব্যবহার করে হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ বা হাসপাতাল যেতে হয়। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা রাস্তা বন্ধ করে দেয়। তখন সমস্যায় পড়তে হয়। রাস্তা নেই বলে বিদ্যুতের সংযোগও আসেনি।”
গ্রামবাসীরা জানান, গ্রামের এক মাত্র পানীয় জলের নলকূপটি খারাপ। মূলত বিএসএফের উপরেই ভরসা করতে হয় তাঁদের। ফতেমা বিবি, জাহানারা বিবির মতো কয়েক জন বলেন, “তিন কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যেতে হয় ছেলেমেয়েদের। হাট-বাজারও অনেক দূরে। পাশেই বাংলাদেশি গ্রামটি থাকায় মাঝেমধ্যেই সীমানা গুলিয়ে যায়। সীমান্তরক্ষীদের বকুনিও জোটে।”
এ বার ভোটের মুখে এই প্রথম কোনও প্রার্থী তাঁদের গ্রামে গেলেন। ফের মিলল প্রতিশ্রুতি। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, তাঁরা অপেক্ষা করতে রাজি। মহকুমাশাসক শেখর সেন অবশ্য বলেন, “সমস্যার কথা আমাকে কেউ জানাননি। দ্রুত খোঁজ নেব। রাস্তা তৈরির জন্য সেচ দফতরকে বলা হবে। পানীয় জল ও বিদ্যুতের জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আপাতত সেটুকু হলেই খুশি গ্রামবাসীরা।