Advertisement
২০ মে ২০২৪

হুগলির একাধিক বুথে ফের ভোট গ্রহণের আর্জি

বিক্ষিপ্ত কিছু গোলমাল, শাসক দলের বিরুদ্ধে বুথ দখলের অভিযোগ, ভোটারদের প্রভাবিত করা বা ভয় দেখানোর নালিশের মধ্যেই ঘোরাফেরা করল হুগলির ভোটচিত্র। বিজেপি, কংগ্রেসের তরফে জেলার বেশ কিছু বুথে পুনরায় ভোটগ্রহণের আর্জি জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। যদিও শাসক দল তৃণমূলের দাবি, ভোট হয়েছে নির্বিঘ্নেই। কোথাও কোনও বড় গোলমাল হয়নি। এ দিন কোন্নগরের কানাইপুরে অরবিন্দ পাল নামে ডিওয়াইএফের এক নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জখম ওই ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিত্‌সা হয় কানাইপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। মইগ্রামে ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে।

জখম সমর্থককে দেখতে হাসপাতালে আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী আফরিন আলি। ছবি: প্রদীপ আদক।

জখম সমর্থককে দেখতে হাসপাতালে আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী আফরিন আলি। ছবি: প্রদীপ আদক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০১:১১
Share: Save:

বিক্ষিপ্ত কিছু গোলমাল, শাসক দলের বিরুদ্ধে বুথ দখলের অভিযোগ, ভোটারদের প্রভাবিত করা বা ভয় দেখানোর নালিশের মধ্যেই ঘোরাফেরা করল হুগলির ভোটচিত্র। বিজেপি, কংগ্রেসের তরফে জেলার বেশ কিছু বুথে পুনরায় ভোটগ্রহণের আর্জি জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। যদিও শাসক দল তৃণমূলের দাবি, ভোট হয়েছে নির্বিঘ্নেই। কোথাও কোনও বড় গোলমাল হয়নি।

এ দিন কোন্নগরের কানাইপুরে অরবিন্দ পাল নামে ডিওয়াইএফের এক নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জখম ওই ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিত্‌সা হয় কানাইপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। মইগ্রামে ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের তরফে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। জাঙ্গিপাড়া লাগোয়া উত্তর আঁইয়া গ্রামে বেশ কিছু বিজেপি কর্মী-সমর্থক পরিবারকে রাতে তৃণমূলের লোকজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসিয়ে আসে বলে অভিযোগ। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, ভয়ে এ দিন ভোট দিতে যাননি ওই সব পরিবারের মহিলা সদস্যেরা। জাঙ্গিপাড়ার রাজবলহাটে ১৮টি বুথ থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। সন্ধ্যায় অবরোধ হয় দলের তরফে। অভিযোগের তির সিপিএমের দিকে। পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী লাঠি উঁচিয়ে অবরোধ দানা বাঁধতে দেয়নি। মারধর কিংবা ভয় দেখানোর কথা মানেনি তৃণমূল।

এ দিন বিকেলে হুগলি কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার তথা জেলাশাসক মনমীত নন্দার কাছে গিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ধনেখালির ৩১০টি বুথই দখল করে নেওয়ার অভিযোগ এবং ওই বুথগুলিতে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী চন্দন মিত্র। তাঁর অভিযোগ, আধাসেনা না থাকায় বুথ দখল করে তৃণমূল। জেলাশাসক জানিয়েছেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হবে। যাবতীয় সিদ্ধান্ত কমিশনই নেবে। তৃণমূল অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। শ্রীরামপুরের কংগ্রেস প্রার্থী আব্দুল মান্নান আবার তাঁর কেন্দ্রের ২৩টি বুথে পুনর্নিবাচনের দাবি জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কাছে। ওই সব কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের তৃণমূলের লোকজন ভয় দেখিয়ে বের করে দেয় বলে অভিযোগ। এর প্রতিবাদে হাওড়ার বাঁকড়ায় কিছু ক্ষণের জন্য অবরোধে বসেন মান্নান। সে সময়েও তৃণমূলের লোকজন তাঁর উপরে হামলা চালায় বলে তাঁর দাবি। হুগলি জেলার কংগ্রেস নেতা দিলীপ নাথ বলেন, “আধা সামরিক বাহিনীকে থানায় বসিয়ে রেখে ভোট করা হয়েছে অনেক জায়গায়।” শ্রীরামপুরের সিপিএম প্রার্থী তীর্থঙ্কর রায়ের দাবি, হাওড়ার বাঁকড়ায় একটি বুথে তাঁর উপরেও হামলার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। শাসক দল অবশ্য সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে।

চণ্ডীতলায় মহিলা পরিচালিত বুথ। দীপঙ্কর দে-র তোলা ছবি।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “ভোট হয়েছে শান্তিতেই। নিজের ভোট নিজেই দিয়েছেন মানুষ। আমরা তো আর বিরোধীদের লোক ধার দিতে পারব না। সংগঠন নেই বলেই ওরা এ সব ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে।”

ভোট-পর্ব চলাকালীন আরামবাগ কেন্দ্রের গোঘাটের শ্যাওড়া পঞ্চায়েতের আসলহরি গ্রামে দুই তৃণমূল কর্মীকে বেধড়ক মারধর করে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। বুধবার বিকেলে গুরুতর জখম অবস্থায় শেখ ফারুখ হোসেন এবং মোক্তার আলি নামে ওই দুই তৃণমূল কর্মীকে আরামবাগ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে সিপিএম।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ দিন ভোটের শেষ লগ্নে গোলমালের খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছন আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার। তার আগেই ওই গ্রামে বেশ কিছু বোমা পড়ে। শূন্যে গুলিও চলে বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের।

কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই। হুগলির স্কুলে হাজির শুধুই রাজ্য পুলিশ। ছবি: সুদীপ আচার্য।

তৃণমূলের অভিযোগ, ওই গ্রামের বুথটি দখলের জন্য শ’খানেক সিপিএম কর্মী-সমর্থক বোমা ফাটাতে ফাটাতে ঢোকে। আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী বলেন, “সিপিএমের বুথ দখলের চেষ্টা রুখতে গিয়েই আমাদের দু’জন গুরুতর জখম হন। নির্বাচন কমিশনকে জানাব।” অভিযোগ উড়িয়ে সিপিএম নেতা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, “নিেজেদর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই ওই দুই তৃণমূল কর্মী জখম হন। ওই ঘটনায় দলের কেউ যুক্ত নন।”

আরামবাগের রতনপুর এলাকায় পুরনো কিছু গোলমালের ঘটনায় জামিনে মুক্ত সিপিএম নেতা শৈলেন দুলের বিরুদ্ধে তৃণমূল সমর্থক মিনতি মণ্ডল ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে মারধরের অভিযোগ তোলে তৃণমূল। মিনতিদেবীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শৈলেনবাবু গোলমালের ঘটনায় তাঁর জড়িত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, “দু’পক্ষের মারামারিতে আমাদের লোকও জখম হন। তবে সেখানে আমি ছিলাম না।”

আরামবাগ লোকসভার অর্ন্তগত পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা এলাকায় এ দিন কিছু গোলমাল হয়েছে। আরামবাগের সিপিএম প্রার্থী শক্তিমোহন মালিকের দাবি, “চন্দ্রকোনায় বেশ কিছু বুথ দখল করেছে তৃণমূল। কোনও কোনও জায়গায় পোলিং এজেন্ট বসতে দেওয়া হয়নি। প্রতিবাদ করে প্রহৃত হয়েছেন স্থানীয় নেতৃত্ব।” শাসকদল অবশ্য বুথ দখল-সহ প্রতিটি অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছে। বিকেলের দিকে রিষড়ার শ্রীকৃষ্ণনগরে বিজেপি-তৃণমূল মারপিট বাধে। দু’পক্ষের ৫ জন জখম হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

hoogly arambagh repoll
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE