কারা তাঁর উপরে হামলা চালিয়েছিল, শুক্রবার তাদের শনাক্ত করার কথা ছিল হাবরার বিডিও দীনবন্ধু গায়েনের। কিন্তু অভিযুক্তদের শনাক্তকরণের জন্য তিনি এ দিন বারাসত আদালতে হাজিরই হলেন না। ফলে তাঁর উপরে হামলার ঘটনায় পুলিশ যে-১৫ জনকে গ্রেফতার করেছিল, তারা সত্যি সত্যিই গত ২৫ মার্চ ঘটনাস্থলে হাজির ছিল কি না, সেটা পরিষ্কার হল না।
উত্তর পরগনা জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, দীনবন্ধুবাবু ওই ১৫ জনকে শনাক্ত করতে পারলে জামিনে মুক্ত ওই অভিযুক্তদের ফের আদালতে হাজির করিয়ে জামিন খারিজের প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে পারত পুলিশ। শুধু আদালতে নয়, এ দিন নিজের দফতরেও যাননি ওই বিডিও। ঠিক কী কারণে এ দিন শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া এড়িয়ে গেলেন দীনবন্ধুবাবু?
“আমি অসুস্থ। কথা বলতে পারব না,” শুধু এটুকুই বলেছেন বিডিও।
দীনবন্ধুবাবুর অসুস্থতার এই যুক্তি মানতে পারছেন না তাঁর সহকর্মীদের একটি বড় অংশ। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলের একটি প্রভাবশালী অংশের চাপের মুখেই আদালতে গরহাজির থেকেছেন দীনবন্ধুবাবু। প্রশাসনের ওই অংশটিই হামলাকারীদের তালিকা থেকে অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক ধীমান রায়ের নাম বাদ দিতে বাধ্য হয়। বিডিও-র সহকর্মীদের অন্য একটি অংশ বলছেন, নির্বাচন পর্ব মিটে গেলে তিনি যে এই নিয়ে বিপদে পড়তে পারেন, তা বুঝে গিয়েছেন দীবন্ধুবাবু। তাই তিনি পুরো বিষয়টির মীমাংসা করে নিতে চাইছেন।
দীনবন্ধুবাবুর সঙ্গে ধীমানবাবুর ‘বিবাদ’ আলোচনায় মিটিয়ে নেওয়ার পক্ষপাতী শাসক দলের জেলা নেতৃত্বও। জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এ দিন স্পষ্টই বলেন, “বিডিও-র উচিত, ধীমান রায়ের সঙ্গে বসে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া।” যদিও তিনি একই সঙ্গে বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম, বিডিও এসে অভিযুক্তদের শনাক্ত করুন। কারণ আমরা জানতে পেরেছি, ধৃত ১৫ জনের মধ্যে অনেকেই ঘটনার দিন এলাকার বাইরে ছিলেন।”
বিডিও-র অভিযোগের পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধির গন্ধও পাচ্ছেন খাদ্যমন্ত্রী। জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কথায়, “সিপিএম-ই ওই বিডিও-কে ‘মিসগাইড’ (ভুল পথে চালিত) করছে। ওরা সরকারি আধিকারিকের সঙ্গে আমাদের লড়াই বাধিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু আমরা সেই ফাঁদে পা দেব না।”
ধীমানবাবু নিজে অবশ্য মিটমাট করে নেওয়ার ব্যাপারে এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
জ্যোতিপ্রিয়বাবুর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন অশোকনগরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সত্যসেবী কর। তিনি বলেন, “ধীমানবাবু ২৫ মার্চ ওই বিডিও-র দফতরে গিয়েছিলেন কি না, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হলেই সেটা প্রকাশ পাবে।”
ঘটনার সূত্রপাত ২৪ মার্চ। অশোকনগরে সরকারি জায়গা থেকে তৃণমূলের পোস্টার-ব্যানার খোলার ব্যবস্থা করেছিলেন দীনবন্ধুবাবু। কিন্তু বিরোধীদের পোস্টার বা ব্যানার না-সরিয়ে কেন বেছে বেছে তৃণমূলেরই পোস্টার-ব্যানার সরানো হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তোলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। অভিযোগ, পরের দিন বিডিও অফিসে লোকজন
নিয়ে হাজির হন ধীমানবাবু। তাঁর উপস্থিতিতে কিছু লোক বিডিও-কে নিগৃহীত করে বলেও অভিযোগ। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনার কথা লিখিত ভাবে জানান দীনবন্ধুবাবু। সেই অভিযোগপত্রে অবশ্য ধীমানবাবুর নাম ছিল না। যদিও বিডিও পরে দাবি করেন, ধীমানবাবুর উপস্থিতিতেই নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে।
লিখিত অভিযোগ পেয়ে দু’দফায় ১৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই ১৫ জনকেই এ দিন বারাসত আদালতে আনা হয় শনাক্তকরণের জন্য। কিন্তু বিডিও অসুস্থতার কারণে হাজির না-হওয়ায় মামলার তদন্তকারী অফিসার কিছুটা সময় চেয়ে নেন। বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২৩ এপ্রিল শনাক্তকরণের পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy