Advertisement
E-Paper

খাদ্য সুরক্ষা প্রয়োগে ধীরে চলো নীতি

জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু নিয়ে জটিলতা দেখা দিল জঙ্গলমহলে। জঙ্গলমহলের মানুষকে বিভিন্ন সময়ে বিশেষ প্রকল্পে সাহায্য দিয়েছে সরকার। কিন্তু জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু হলে সেই বিশেষ সুবিধে কী ভাবে দেওয়া যাবে, তা নিয়েই দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০১:১৯

জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু নিয়ে জটিলতা দেখা দিল জঙ্গলমহলে। জঙ্গলমহলের মানুষকে বিভিন্ন সময়ে বিশেষ প্রকল্পে সাহায্য দিয়েছে সরকার। কিন্তু জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু হলে সেই বিশেষ সুবিধে কী ভাবে দেওয়া যাবে, তা নিয়েই দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু হলে এপিএল (দারিদ্রসীমার উপরে) শ্রেণি বিভাজনটি আর থাকবে না। পরিবর্তে সব গরিব মানুষকে এক বন্ধনীতে আনা হবে। আর তা ঠিক করা হবে ২০১০ সালের পরিবার সমীক্ষা (হাউসহোল্ড সার্ভে) অনুযায়ী। থাকবে অন্ত্যোদয়ও। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে জঙ্গলমহলের জেলায় রেশন কার্ড গ্রাহকের সংখ্যা যা, তা প্রায় অর্ধেক কমে যাবে। কারণ, বিশেষ প্রকল্পে সুবিধা দেওয়ার জন্য জঙ্গলমহলের জেলায় বার্ষিক আয়ের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়েও বিপিএলের সুবিধে দেওয়া হয়। ফলে জঙ্গলমহলের হতদরিদ্র মানুষও যেমন ২ টাকা কেজি দরে চাল পান, তেমনই চাকুরিজীবীরাও সেই সুবিধে পান। প্রশাসন সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় আগে এপিএল, বিপিএল, অন্ত্যোদয় মিলিয়ে রেশন কার্ড গ্রাহক ছিল প্রায় ৬৪ লক্ষ। খাদ্য সুরক্ষা আইন রপায়িত হলে গণবন্টন ব্যবস্থার সুবিধে পাবেন সাড়ে ৩৪ লক্ষ মানুষ। ৩০ লক্ষ মানুষ রাতারাতি গণবন্টন ব্যবস্থার আওতার বাইরে চলে যাবেন। সে ক্ষেত্রে জঙ্গলমহলবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিতে পারে। তাই এই আইন কার্যকর করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে সরকার।

খাদ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “জঙ্গলমহল এমনিতেই সংবেদনশীল। তাই জঙ্গলমহলের ক্ষেত্রে সরকার বিকল্প পথ ভাবছে। তাই এই আইন কার্যকর করতে কিছুটা দেরি হচ্ছে।’’ তৃণমূল প্রভাবিত ওয়েস্ট বেঙ্গল এমআর ডিলার জাতীয়তাবাদী সংগঠনের রাজ্য সভাপতি কাঞ্চন খানের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী চেষ্টা করছেন কী ভাবে গরিব মানুষকে সাহায্য করা যায়। তা ঠিক হলেই জঙ্গলমহলেও এই আইন চালু হয়ে যাবে।’’

কিন্তু জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নে বিলম্ব করাও তো সম্ভব নয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়ে দিতে হবে উপভোক্তার সংখ্যা। বর্তমানে রাজ্যে রেশন কার্ড রয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি। তার মধ্যে ৬ কোটি ১ লক্ষ মানুষকে গণবন্টন ব্যবস্থার সুবিধে দেবে কেন্দ্র। পরিবার সমীক্ষায় পিছিয়ে পড়া মানুষেরা চাল, গম পাবেন কম টাকায়। তবে বিপিএলের মতো ২ টাকায় চাল নয়, তা কিনতে হবে কেজি প্রতি ৩ টাকায়। খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু হলে ডিজিট্যাল রেশন কার্ড দেওয়া হবে শুধু পরিবার সমীক্ষায় পিছিয়ে পড়া মানুষদের। বাকিদের ক্ষেত্রে সাধারণ কার্ডেই স্ট্যাম্প দিয়ে কেরোসিন দেওয়ার ব্যবস্থা হবে বলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে আরও কয়েকটি সমস্যা দেখা দিচ্ছে। নতুন আইনে রেশন ডিলারের সংখ্যাও কমবে। কারণ, এমন অনেক রেশন ডিলার রয়েছেন যাঁদের এলাকায় বিপিএল গ্রাহক ছিল না বললেই চলে। এপিএল গ্রাহকেরাই তাঁদের কাছে যেতেন। ফলে সেই সব ডিলার থাকবেন কিনা সংশয় রয়েছে। আবার অনেক ডিলারের কাছে বড় জোর একশো থেকে দেড়শো গ্রাহক থাকবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিলারের কথায়, “আমার আগে গ্রাহক সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪ হাজার। এ বার দেখছি ২৬৫ জনে ঠেকেছে।’’ কাঞ্চনবাবুর ক্ষেত্রেও যেমন গ্রাহক সংখ্যা প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। আগে তাঁর ওখানে ৪৮০০ গ্রাহক ছিলেন, এ বারের হিসেবে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০১৫-তে। কাঞ্চনবাবুর কথায়, “এটা ঠিক যে, অনেক ডিলারও বিপাকে পড়বেন। বিষয়টি নিয়ে আমরাও ভাবছি।’’

এ বার উপভোক্তার সংখ্যা পরিবার সমীক্ষা অনুযায়ী ঠিক হওয়ায় ভুয়ো রেশন কার্ড যেমন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তেমনই এপিএলদের বরাদ্দ না থাকায় কারচুপির অভিযোগও কম আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর তাতে সমস্যা বাড়বে রেশন ডিলারদের। এখন এপিএল উপভোক্তাদেরও ৯ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হয়। কিন্তু এপিএল তালিকাভুক্ত অনেকেই রেশন দোকানে যান না। সেই চাল ১৮-২০ টাকা কেজি দরে খোলাবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। নতুন ব্যবস্থা চালু হলে এই কারচুপি ঠেকানো যাবে। তবে তাতে ফাঁপড়ে পড়বেন রেশন ডিলাররা।

সব মিলিয়ে জঙ্গলমহলে খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি নিচ্ছে রাজ্য সরকার।

sumon ghosh junglemahal food security act above poverty line apl antyodoy yojana
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy