Advertisement
E-Paper

দল ভাঙাচ্ছেই তৃণমূল, পাল্টা সরব কংগ্রেস

খড়্গপুর কাণ্ডে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে বিধানসভায় সরব হল কংগ্রেস। যদিও বিরোধী কাউন্সিলরদের শাসক দলে টানার প্রক্রিয়া চলছেই। মঙ্গলবার বিধানসভা অধিবেশনের প্রথমার্ধে জিরো আওয়ারে খড়্গপুর প্রসঙ্গ তুলে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের রুলিং চান কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব স্পিকারকে বলেন, তিনি রুলিং না দিলে তাঁরা অধিবেশন বয়কট করবেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৫ ০৪:০৮

খড়্গপুর কাণ্ডে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে বিধানসভায় সরব হল কংগ্রেস। যদিও বিরোধী কাউন্সিলরদের শাসক দলে টানার প্রক্রিয়া চলছেই।

মঙ্গলবার বিধানসভা অধিবেশনের প্রথমার্ধে জিরো আওয়ারে খড়্গপুর প্রসঙ্গ তুলে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের রুলিং চান কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব স্পিকারকে বলেন, তিনি রুলিং না দিলে তাঁরা অধিবেশন বয়কট করবেন। স্পিকার অবশ্য তাঁদের আর্জি মানেননি। বরং, সোহরাবের অধিবেশন বয়কটের প্রসঙ্গটি তিনি বিধানসভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন। প্রতিবাদে কংগ্রেস অধিবেশন থেকে ওয়াক আউট করে। পরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অধিবেশন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় তারা। কংগ্রেসের বিধানসভা বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়ে তৃণমূলের মহাসচিবের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুরসভার বিষয়কে কংগ্রেস কেন বিধানসভায় নিয়ে এল, জানি না। রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বা মুর্শিদাবাদের বিধায়কেরা যখন তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন, তখন তো কংগ্রেস এমন সিদ্ধান্ত নেয়নি!’’ এ দিনই কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবুকে শো কজের চিঠি দিয়েছেন সোহরাব। তিনি জানতে চেয়েছেন, কেন রবীন্দ্রনাথবাবুর বিধায়ক পদ খারিজ করা হবে না? সাত দিনের মধ্যে রবীন্দ্রনাথবাবুকে উত্তর দিতে বলা হয়েছে।

খড়্গপুর কাণ্ডে আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছে কংগ্রেস। তাঁদের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ এ দিন হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, অবিলম্বে মামলার শুনানি হওয়া প্রয়োজন। আজ, বুধবার মামলাটির শুনানি হবে।

এই বিতর্কের মধ্যেও খড়্গপুর পুরসভার কাউন্সিলরদের দলবদল বন্ধ হয়নি। এ দিনও সেখানকার এক বিজেপি কাউন্সিলর বেলারানি অধিকারী এবং সিপিআই কাউন্সিলর শেখ হানিফ তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তৃণমূল ভবনে তাঁদের স্বাগত জানান দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সে সময়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছিলেন। পার্থবাবু বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কাজে আস্থা রেখে এঁরা তৃণমূলে যোগ দিলেন।’’

স্থানীয় সূত্রের অবশ্য খবর, ওই দুই কাউন্সিলরকে সোমবার রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলারানি ছিলেন খড়গপুরে এক পুলিশ কর্তার বাংলোয় এবং হানিফকে রাখা হয়েছিল পাঁশকুড়়ায়। সেখান থেকেই তাঁদের কলকাতায় তৃণমূল ভবনে নিয়ে আসা হয়। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক প্রবোধ পণ্ডা বলেন, ‘‘হানিফের বাড়িতে তৃণমূল নিয়মিত হামলা চালাচ্ছিল। কিন্তু তার জন্য যে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, তা জানতাম না!’’ বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “আমাদের যে কাউন্সিলররা দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন, আমরা তাঁদের ওয়ার্ডে গিয়ে মানুষের কাছে ক্ষমা চাইব।’’

খড়্গপুর পুরসভায় তৃণমূল এবং কংগ্রেস ১১টি করে আসন পেয়েছে। বিজেপি এবং সিপিএম পেয়েছে যথাক্রমে ৭টি ও ৬টি আসন। কিন্তু কয়েক দিন আগে বিজেপির ৪ কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এ দিনের দলবদলের ফলে ৩৫ আসনের খড়্গপুর পুরসভায় সমীকরণটা দাঁড়াল— তৃণমূল ১৭, কংগ্রেস ১১, বাম ৫ এবং বিজেপি ২। অর্থাৎ, বৃহত্তম দল হিসেবে তৃণমূলের খড়্গপুর পুরবোর্ড গঠন প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল। তবে এখনও ম্যাজিক সংখ্যা ছুঁতে আরও এক কাউন্সিলর লাগবে তৃণমূলের।

বিরোধীদের অভিযোগ, খড়্গপুরে শাসক দলের চাপের মুখে দলবদল করতে বাধ্য হচ্ছেন কাউন্সিলররা। দলীয় কাউন্সিলরদের নিরাপত্তা চেয়ে সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের সঙ্গে দেখা করেছিলেন খড়্গপুরের বর্ষীয়ান কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহন পাল। পুলিশ সুপার এ দিন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বোর্ড গঠন পর্যন্ত সব কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়ন থাকবে। পুরবোর্ড গঠনের দিন কাউন্সিলরদের বাড়ি থেকে পুলিশ পাহারায় পুরসভায় আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশ সুপার। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও কাউন্সিলর যদি মনে করেন পুলিশ পাহারায় হবে না, তা হলে আমিই তাঁকে পাহারা দিয়ে পুরসভায় নিয়ে যাব, নিয়ে আসব।”

কংগ্রেস অবশ্য পুলিশ সুপারের কথায় নিশ্চিন্ত হতে পারছে না। মানস ভুঁইয়ার অভিযোগ, খড়্গপুরে তৃণমূল পর্যাপ্ত আসন পায়নি। তা সত্ত্বেও নেত্রীকে ওই পুরসভা উপহার দিতে তৃণমূল বদ্ধপরিকর। সে জন্য রবিশঙ্কর পাণ্ডে-সহ ছয় কংগ্রেস কাউন্সিলরকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। বোর্ড গঠনের দিন ওই কাউন্সিলরদের ভোট দিতে যাওয়া ঠেকানোর লক্ষ্যেই এই চক্রান্ত। মানসবাবুর বক্তব্য, ‘‘খড়্গপুরে গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তাই বিধানসভায় স্পিকারের রুলিং চেয়েছিলাম, যাতে তিনি সরকারকে উপযুক্ত নির্দেশ দেন। কিন্তু তা তিনি দিলেন না!’’

Trinamool assembly Congress BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy