Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal

২২টি বুথেও যেন বিজেপি না জেতে, মেদিনীপুরে বার্তা অভিষেকের

জঙ্গলমহলের সব জেলা থেকেই এ দিন লোকজন আনা হয়েছিল মেদিনীপুরের জনসভায়| তবে শুভেন্দুর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর থেকেই তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি গাড়ি শনিবার ঢুকতে দেখা গিয়েছে মেদিনীপুর শহরের দিকে| মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এ সভায় ছিলেন না|

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা। শুক্রবার মেদিনীপুরে। ছবি- সৌমেশ্বর মণ্ডল।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা। শুক্রবার মেদিনীপুরে। ছবি- সৌমেশ্বর মণ্ডল।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৮ ১৮:২৯
Share: Save:

সিন্ডিকেট নিয়ে সবচেয়ে তীক্ষ্ণ আক্রমণটা শানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। জবাব দেওয়ার সমাবেশে সেই সিন্ডিকেট প্রশ্নেই কণ্ঠস্বর তুঙ্গে তুললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। ধর্মতলা থেকে একুশে জুলাই মমতা বলেছিলেন, বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ চাই। জঙ্গলমহলের সব জেলার তৃণমূল নেতৃত্বকে পাশে নিয়ে মেদিনীপুর থেকে আঠাশে জুলাই শুভেন্দুর অঙ্গীকার, অবিভক্ত মেদিনীপুরের পাঁচটা আসনই তৃণমূল জিতবে। আর একই ধাঁচে তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি অভিষেকের আহ্বান, এ রাজ্য থেকে ২২টা আসন জিতবে বলে যে বিজেপি দাবি করছে, সেই বিজেপিকে ২২টা বুথেও জিততে দেওয়া হবে না। তবে, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ নিয়ে যে যথেষ্ট চিন্তায় থাকতে হচ্ছে তৃণমূলকে, অভিষেকের ভাষণে এ দিন তা বেশ বোঝা গিয়েছে।

জঙ্গলমহলের সব জেলা থেকেই এ দিন লোকজন আনা হয়েছিল মেদিনীপুরের জনসভায়। তবে শুভেন্দুর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর থেকেই তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি গাড়ি শনিবার ঢুকতে দেখা গিয়েছে মেদিনীপুর শহরের দিকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এ সভায় ছিলেন না। ১৬ জুলাই মোদী যে আক্রমণ তাঁকে করেছিলেন, তার জবাব দেওয়ার জন্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিমকে মেদিনীপুর পাঠিয়েছিলেন মমতা। পাঁচ জনেই তীব্র আক্রমণ করলেন মোদীকে। তবে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়লেন অভিষেক এবং শুভেন্দু।

অভিষেক এ দিন সভায় পৌঁছন বেশ কিছুটা পরের দিকে। তখন ববি হাকিমের ভাষণ চলছে। তার আগে সুব্রত, পার্থ, শুভেন্দুর বলা হয়ে গিয়েছে। শুভেন্দু যখন বলতে উঠেছিলেন, উদ্বেল হয়েছিল গোটা মাঠ। নরেন্দ্র মোদীকে তথা বিজেপিকে নিজের ভাষণে তীব্র আক্রমণ করেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী। মোদীর সভায় যে জমায়েত হয়েছিল, তা বাংলার মানুষের জমায়েত নয় বলে শুভেন্দু দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘‘কোটি কোটি টাকা খরচ করে পরিযায়ী পাখিরা ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার থেকে লোক নিয়ে এসেছিল।’’

দেখুন ভিডিও

আরও পড়ুন- অভিষেকের কাছে নালিশ​

আরও পড়ুন- বাইরে অভিষেক, ভিতরে অভিমান, মদন বলছেন, ‘বস ইজ় নেভার রং’​

সিন্ডিকেট প্রশ্নে শুভেন্দু বলেন, ‘‘হ্যাঁ, এ রাজ্যে সিন্ডিকেট আছে। কন্যাশ্রী সিন্ডিকেট, রূপশ্রী সিন্ডিকেট, সবুজসাথীর সিন্ডিকেট আছে।’’ সেই সিন্ডিকেটের কাছেই বিজেপিকে হারতে হবে বলে শুভেন্দু মন্তব্য করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরেন শুভেন্দু। ক্ষমতায় আসার পরে মমতা মেদিনীপুরকে কী কী দিয়েছেন, তার কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু মোদী সরকার মেদিনীপুরের জন্য কিছুই করেনি বলে তিনি অভিযোগ করেন। তার পরে তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে বলেন, ‘‘ভোটের আগে এই এলাকার যে কোনও একটা উন্নয়ন করে দেখান। আমাকে ১৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে না, আমি বিজেপি সভাপতির অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে দেব।’’ আর ভাষণের শেষ প্রান্তে পৌঁছে শুভেন্দুর অঙ্গীকার, ‘‘কথা দিচ্ছি, দুই মেদিনীপুরের পাঁচটা লোকসভা আসনের পাঁচটাই তৃণমূলের হবে।’’

অভিষেক মঞ্চে পৌঁছতেই তড়িঘড়ি নিজের বক্তৃতা শেষ করে দিয়েছিলেন রাজ্যের আর এক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তবে অভিষেক তখনই নিজের ভাষণ শুরু করেননি। ফিরহাদের পরে মানস ভুঁইয়া ভাষণ দেন। ভূমিপুত্রকে ঘিরে ফের একবার উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ে মাঠ জুড়ে।

মেদিনীপুরের মঞ্চ। শুক্রবার সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।

মানসের পরে অর্থাৎ শেষ বক্তা হিসেবে বলতে ওঠেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিনের সমাবেশে তিনিই ছিলেন একমাত্র বক্তা, যিনি মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র নন অথচ গোটা মাঠ উদ্বেল হয়ে স্বাগত জানাল তাঁকে।

অভিষেকও এ দিন শুভেন্দুর মতোই বলেন, এ রাজ্যে সিন্ডিকেট রয়েছে, কিন্তু জঙ্গলমহলে আর পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর সিন্ডিকেট। অভিষেক আরও বলেন, ‘‘এ বার আরও একটা সিন্ডিকেট হবে, সেটা হবে বিজেপি-কে হারানোর সিন্ডিকেট।’

সাম্প্রদায়িকতা ইস্যু এ দিন অভিষেকের ভাষণের বড় অংশ জুড়ে ছিল। তৃণমূল হিন্দুবিরোধী বা মুসলিম তোষণকারী নয়— এই বার্তা স্পষ্ট ভাবে দেওয়ার জন্য তিনি অনেকটা সময় ব্যয় করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যেমন ইমাম-মোয়াজ্জেমদের জন্য ভাতা চালু করেছে, তেমনই দক্ষিণেশ্বর এবং তারকেশ্বরের উন্নয়নেও অনেক টাকা খরচ করেছে, মনে করিয়ে দেন অভিষেক। প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, মোদী ভুলে যাচ্ছেন দুর্গাপুজোর বিসর্জনকে কার্নিভালের রূপ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। যুব তৃণমূল সভাপতির কথায়, ‘‘আমরা সিপিএমের মতো নাস্তিক নই, কিন্তু বিজেপির মতো ধর্ম বিক্রি করেও আমাদের রাজনীতি করতে হয় না।’’

অভিষেকের এ দিনের ভাষণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়া খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। পিসির ভাইপোও ভাষণের মাঝে কখনও মন্ত্রোচ্চারণ করেছেন, কখনও কোরানের বাণী আউড়েছেন। পিসির মতোই একের পর এক মনীষী ও স্বাধীনতা সংগ্রামীর নামোল্লেখ করেছেন। পিসির মতোই সুর তুঙ্গে তুলতেও শিখে গিয়েছেন।

আক্রমণ করেছিলেন মোদী। জবাব দেবেন মমতা নিজে, ভেবেছিলেন অনেকেই। কিন্তু মমতা সামনে এগিয়ে দিয়েছিলেন ভাইপোকে। মেদিনীপুরের জনসভায় ভাইপো কিন্তু পিসির আস্থার মূল্য দেওয়ার সব চেষ্টাই করলেন এ দিন। মমতাও সম্ভবত বুঝিয়ে দিতে পারলেন, যাবতীয় প্রতিকূলতার জবাব দেওয়ার জন্য এখন তাঁর দলের নতুন প্রজন্মও প্রস্তুত। সব শেষে সেই নতুন প্রজন্ম দলনেত্রীর ঢঙেই ‘টার্গেট’ বেঁধে দিয়ে এলেন মেদিনীপুরের সভা থেকে। বললেন, ‘‘বিজেপি বলেছে ২২টা আসন জিতবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, ২২টা আসন দূরের কথা, ২২টা বুথেও যেন বিজেপি জিততে না পারে।’’

বিজেপি অবশ্য তৃণমূলের এই ‘জবাবি সভা’কে কটাক্ষ করছে। রাজ্য বিজেপির প্রশ্ন, জবাব আর তৃণমূল দিতে পারল কোথায়? মোদীর সভার সমান ভিড় কি জমাতে পেরেছে? দলের মুখপাত্র সায়ন্তন বসুর মন্তব্য, ‘‘বিজেপি-কে বা মোদীজিকে জবাব দেওয়ার দরকার নেই, তৃণমূল সাধারণ মানুষকে জবাব দিক। রাজ্যের মানুষ এখন তৃণমূলের কাছ থেকে জবাব চাইছেন। সেই কারণে মেদিনীপুরে তৃণমূলের সভায় মানুষ যেতেই চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE