রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে দিল্লির দরবারে। কুকুর-কাণ্ডের জল এ বার গড়াল সর্বভারতীয় আঙিনায়।
এসএসকেএমে যাঁর আত্মীয়ার কুকুরের চিকিৎসা করানোর তোড়জোড় নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত, তৃণমূলের সেই চিকিৎসক-বিধায়ক নির্মল মাজি তো বটেই, প্রস্তাবে সায় দেওয়ার জন্য এসএসকেএমের অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্র ও নেফ্রোলজি’র বিভাগীয় প্রধান রাজেন্দ্র পাণ্ডের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দিল্লির মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)-কে আবেদন জানিয়েছে রাজ্যের চিকিৎসকদেরই দু’টি সংগঠন। এমসিআই জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ পেলে তারা ব্যাপারটা খতিয়ে দেখে যা করার করবে।
রাজ্যের ‘সুপার স্পেশ্যালিটি’ সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএমের নেফ্রোলজি বিভাগে নিজের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ার পোষা কুকুরের ডায়ালিসিস করানোর জন্য নির্মলবাবু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপরে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন বলে অভিযোগ। ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ হেল্থ সার্ভিসেস ডক্টর্স’ (এএইচএসডি)-এর দাবি: এই কাজ করে নির্মলবাবু যেমন ‘মেডিক্যাল এথিক্স’ ভেঙেছেন, তেমন হাসপাতালে ডায়ালিসিসের অনুমতি দিয়ে প্রদীপবাবু-রাজেন্দ্রবাবুও একই দোষে দোষী হয়েছেন। অন্য চিকিৎসক সংগঠন ‘মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার’ও তা-ই মনে করে।
প্রসঙ্গত, চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-র রাজ্য সভাপতি নির্মলবাবু রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলেরও সভাপতি। এমতাবস্থায় বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন, চিকিৎসকের নৈতিকতা লঙ্ঘন করেও কেউ কী ভাবে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের শীর্ষ পদে থাকতে পারেন? ‘‘যিনি রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি, তিনি-ই মানুষের হাসপাতালে কুকুরের ডায়ালিসিসের সুপারিশ করবেন, এটা অভাবনীয়। আমরা চাই, নির্মল মাজি ও অন্য দুই ডাক্তারের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হোক।’’— সোমবার বলেন এএইচএসডি-র গৌতম মুখোপাধ্যায়। এই মর্মে এমসিআই-কে তাঁরা ইতিমধ্যে লিখিত আবেদন করেছেন বলে জানান গৌতমবাবু। মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের অংশুমান রায়ও বলেন, ‘‘নির্মল মাজি, রাজেন্দ্র পাণ্ডে ও প্রদীপ মিত্রের নাম মেডিক্যাল রেজিস্টার থেকে কেটে দেওয়ার জন্য আমরা ইতিমধ্যে এমসিআই-কে চিঠি লিখেছি।’’
এমসিআই কী বলছে? কাউন্সিলের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ও গ্রিভ্যান্স সেলের চেয়ারম্যান অজয়কুমারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘অকল্পনীয় ঘটনা। হাস্যকরও। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া।’’ অজয়কুমার জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ এলে কাউন্সিল পুরো ব্যাপারটা যাচাই করবে। তার পরে যথোচিত পদক্ষেপ করার চিন্তা-ভাবনা হবে।
এ দিকে সংগঠনের খোদ সভাপতি এ হেন বিতর্কিত ঘটনায় জড়িয়ে যাওয়ায় আইএমএ-র রাজ্য শাখার সদস্যেরাও যারপরনাই বিড়ম্বনায়। কিছু সদস্য তো প্রকাশ্যেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। এক জনের শ্লেষ, ‘‘ডাক্তার হয়ে কেউ মানুষের হাসপাতালে কুকুরের চিকিৎসার সুপারিশ কী ভাবে করতে পারলেন, সেটা আমাদের মাথায় ঢুকছে না।’’
কুকুর-কাণ্ডের সূত্রে সংগঠনের সভাপতির পদ থেকে নির্মল মাজিকে সরানোর দাবি অবশ্য আইএমএ-তে ওঠেনি। যদিও সংগঠন-সূত্রের ইঙ্গিত, সরকারি চিকিৎসকদের বদলি ও স্বাস্থ্য দফতরের বিবিধ সিদ্ধান্তের উপরে নির্মলবাবুর যে ‘প্রভাব’ এ যাবৎ বজায় ছিল, তার অনেকটা ছাঁটাই হচ্ছে। ‘‘রবিবার মুখ্যমন্ত্রী নিজের মুখেই নির্মলকে সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন।’’— দাবি সূত্রটির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy