Advertisement
E-Paper

জঙ্গি হানায় স্বপ্ন শেষ দুই বাড়ির

বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বাড়িটা ভীষণ থমথমে। সারা রাত টিভি চলেছে। মা-ঠাকুমা সে দিকেই তাকিয়ে ছিল। কী দেখছিল কে জানে!

নুরুল আবসার ও কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:০২
পুলওয়ামা হামলায় নিহত বাবলু সাঁতরার শোকাহত মা ও বোন।

পুলওয়ামা হামলায় নিহত বাবলু সাঁতরার শোকাহত মা ও বোন।

মা-ঠাকুরমা কাঁদছে। কত লোক ভিড় করছে! কেন?

উত্তর পাচ্ছিল না ছ’বছরের পিয়াল। সারা বাড়ি সে আপন মনে ঘুরছিল। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বাড়িটা ভীষণ থমথমে। সারা রাত টিভি চলেছে। মা-ঠাকুমা সে দিকেই তাকিয়ে ছিল। কী দেখছিল কে জানে!

বৃহস্পতিবার রাতে পিয়ালের বাবা বাবলু সাঁতরার (৩৯) ছবি এক বারও টিভিতে দেখায়নি। কিন্তু পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার খবর টিভিতে দেখার পরেই মনে ‘কু’ ডাকতে থাকে বাবলুর মা, বৃদ্ধা বনমালাদেবীর। ছেলেটা যে আগের দিনই ফোনে জম্মু থেকে শ্রীনগর যাওয়ার কথা বলেছিল। স্ত্রী মিতা বারবার বাবলুর মোবাইলে ফোন করেন। সাড়া মেলে না। বাড়ে উদ্বেগ।

শুক্রবার ভোর ৫টা। সিআরপি থেকে ফোন পান মিতা। তাঁকে জানানো হয়, পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় তাঁর স্বামী, সিআরপি জওয়ান বাবলুও নিহত হয়েছেন। জ্ঞান হারান মিতা। কান্নার রোল ওঠে। কারা যেন চেয়ারে সাদা কাপড় বিছিয়ে বাবার ছবি রেখে তাতে মালা পরিয়ে দেয়! অবাক চোখে দেখছিল ছোট্ট পিয়াল।

আরও পড়ুন: ‘বহুত বড়ি গলতি’, পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষার হুঁশিয়ারি মোদীর, সেনাবাহিনীকে ‘স্বাধীনতা’

নিহত সুদীপ বিশ্বাসের পরিবার।

হাওড়ার বাউড়িয়ার চককাশী রাজবংশীপাড়ার বাসিন্দা বাবলুর সংসার ছিল মা বনমালাদেবী, স্ত্রী মিতা এবং মেয়ে পিয়ালকে নিয়ে। আগে থাকতেন চালাঘরে। বছর খানেকে আগে পাশেই দোতলা বাড়ি তৈরি করেন। অবসর নিতে আর এক বছর বাকি ছিল। বনমালাদেবী বলেন, ‘‘স্বামীর মৃত্যুর পরে অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। যদি বা ছেলের দৌলতে হাল ফিরল, ফের অথৈ জলে পড়লাম। বৌমা সামান্য চাকরি করে। জানি না কী হবে। তবে যারা আমার ছেলেকে মারল, তাদের ছাড়া চলবে না।’’

বাবলু সাঁতরা ও সুদীপ বিশ্বাস।

বাবলুরা চার বোন, দুই ভাই। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবলু বাবাকে হারান। তিনি শুধু বড় দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে যেতে পেরেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে মাছ বিক্রি করে সংসার চালিয়েছেন বাবলুর ঠাকুরমা। বাবলু ভলিবল খেলায় তুখোড় ছিলেন। ২০০০ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন। পরে পরীক্ষা দিয়ে সিআরপিএফ-এ হাবিলদার পদে চাকরি পান। তিনিই দুই বোনের বিয়ে দেন। বছর আটেক আগে নিজে বিয়ে করেন। মেয়ে ল্যাডলো অ্যাকাডেমিতে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। স্ত্রী ওই স্কুলেরই শিক্ষিকা। রাতে স্থানীয় বিধায়ক পুলক রায়ের মোবাইল থেকে বাবলুর মায়ের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: উরি-পঠানকোট-ডোকলাম-মায়ানমারের পরে পুলওয়ামা, ফের প্রশ্নের মুখে ডোভাল নীতি

একই চিত্র পলাশিপাড়ার হাঁসপুকুরিয়া তিলিপাড়া গ্রামের বিশ্বাস পরিবারেও। শুক্রবার ভোরে ফোনে সিআরপিএফ দফতর থেকে জানানো হয়েছিল, সুদীপ বিশ্বাস (২৭) গুরুতর আহত। হাসপাতালে ভর্তি। তার কিছুক্ষণ পরে ফের ফোন করে জানানো হয় তাঁর মৃত্যুর খবর। ছেলের খবর শুনে বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন মা মমতা। সুদীপের বাবা সন্ন্যাসী বিশ্বাস জানান, বৃহস্পতিবারের ঘটনার আগে বিকাল তিনটে দশ মিনিট নাগাদ ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল তাঁর। ছেলে তাঁকে জানিয়েছিল, জম্মু থেকে সকালে রওনা হয়ে কাশ্মীরে যাচ্ছে।

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, চাষি পরিবারের ছেলে সুদীপের বাবার সামান্য জমি আছে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ২০১৪ সালে সিআরপিএফে যোগ দেন তিনি। অভাবের সংসার এর পর থেকে একটু সুখের মুখ দেখে। টালির ছাউনি দেওয়া ঘর বদলে বাবা-মায়ের জন্য একটা পাকা ঘরও বানান তিনি। এক মাসের ছুটিতে গত ডিসেম্বর মাসে বাড়ি এসেছিলেন সুদীপ। জানুয়ারির ১৫ তারিখে ফিরে গিয়েছেন। তাঁর বিয়ের জন্য পাত্রী দেখা চলছিল। বিয়ের কথা ভেবে বাড়িতে তৈরি হচ্ছে আর একটি পাকা ঘর।

রাজ্য বিজেপি জানিয়েছে, আজ, শনিবার দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ রাজ্যের দুই নিহত জওয়ানের বাড়িতে যাবেন।

ছবি: সুব্রত জানা, নিজস্ব চিত্র

Pulwama terror Attack পুলওয়ামা হামলা পুলওয়ামা CRPF Jawan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy