Advertisement
E-Paper

জল ছাড়া কমতেই ত্রাণে জোর রাজ্যের

খানাকুলে রবিবার জলে ডুবে এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ বারের বন্যা দক্ষিণবঙ্গে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩৫ (নবান্ন সূত্রে অবশ্য ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে)। ডিভিসি সূত্রে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে ঝাড়খণ্ডে আর প্রবল বৃষ্টির আশঙ্কা নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ০৩:৪০
বানভাসি: রূপনারায়ণের বাঁধ ভেঙে জলের তোড়ে উল্টে গিেয়ছে পাকা বাড়ি। খানাকুলের ধান্যগোড়ির কর পাড়ায়। ছবি: মোহন দাস।

বানভাসি: রূপনারায়ণের বাঁধ ভেঙে জলের তোড়ে উল্টে গিেয়ছে পাকা বাড়ি। খানাকুলের ধান্যগোড়ির কর পাড়ায়। ছবি: মোহন দাস।

বৃষ্টি কমেছে। ডিভিসি জল ছাড়াও কমিয়ে দিয়েছে ধাপে ধাপে। কিন্তু হুগলির খানাকুল আর পশ্চিম মেদিনীপুরের জমা জল না-সরায় মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। প্রশাসন সূত্রে খবর, বৃহস্পতি-শুক্রবার ডিভিসি যে জল ছেড়েছিল, তার জেরে নদীগুলির জলস্তর খুব একটা কমেনি। অনেক এলাকায় তাই জল নামছে না।

খানাকুলে রবিবার জলে ডুবে এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ বারের বন্যা দক্ষিণবঙ্গে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩৫ (নবান্ন সূত্রে অবশ্য ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে)। ডিভিসি সূত্রে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে ঝাড়খণ্ডে আর প্রবল বৃষ্টির আশঙ্কা নেই। তাই আজ, সোমবার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ আরও কমবে। প্রশাসন তাই ত্রাণে নজর দিচ্ছে।

রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির এই অবনতির জন্য তৃণমূল সরকারকেই রবিবার দায়ী করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর দাবি— বন্যা মোকাবিলায় যে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল, রাজ্য তা নেয়নি। বন্যা কি ম্যানমেড? এই প্রশ্নের জবাবে সূর্যবাবুর জবাব, “ম্যানমেড কি ওম্যানমেড— তা আমি বলতে পারব না! এটা বুঝেছি, পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রাথমিক কাজটাই রাজ্য সরকার করতে পারছে না।’’

হুগলির খানাকুল ২ ও এবং পুরশুড়া ব্লকের সব ক’টি পঞ্চায়েত রবিবারও জলমগ্ন ছিল। খানাকুল ১ ব্লকে ১৩টির মধ্যে ৯টি, আরামবাগ ব্লকের ১৫টির মধ্যে ৭টি জলমগ্ন। তবে গোঘাট ১ ও গোঘাট ২ ব্লকে জল অনেকটা নেমেছে।

জলমগ্ন খানাকুল ১ ব্লকে নতুন করে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে রবিবার। স্থানীয় আটঘড়া এলাকায় জমা জলে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয় খাঁদু বাগের (৪০)। তার দেহ উদ্ধার হয়েছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন পূর্ব ঠাকুরানি চকের সঞ্জয় পাল (২৬)।

পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে ত্রাণে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে নৌকার অভাব। মহকুমা প্রশাসনের হাতে ৬৯টি নৌকা রয়েছে। কিন্তু বন্যার ব্যাপকতায় তাতে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। নৌকা না পাওয়ায় রামকৃষ্ণ মিশন-সহ বহু সংগঠন ত্রাণ নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে যেতে পারছে না। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “নৌকা না থাকায় এ বার বহু জলবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে শিবিরে নিয়ে যেতেও সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ত্রাণ বিলিতেও সমস্যা হচ্ছে।”

ঘাটালের বন্যা পরিস্থিতি রবিবার সরেজমিন দেখে গেলেন এলাকার সাংসদ দেব। বেলা দেড়টায় তিনি ঘাটালে আসেন। মহকুমা শাসকের দফতরে ঢুকে বৈঠকও করেন। বন্যা পরিস্থিতি দেখে সাংসদ বলেন, “এখন একটাই কাজ বাঁধ সংস্কার এবং পরিস্থিতি মোকাবিলা করা। ত্রাণ-সহ সব বিষয়েই জেলা প্রশাসন সক্রিয়।”

গ্রামীণ হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে দামোদরের জল নামতে শুরু করেছে। তবে আমতা ২ ব্লকে এখনও জল নামেনি। ডিভিসি-র ছাড়া জল ও বৃষ্টির জলে এই দু’টি ব্লকের মাঠে বোনা ধান ও আনাজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

রবিবার মেদিনীপুরে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “যে পরিমাণ জল জলাধারগুলো ছেড়েছে, আমাদের সময় এর থেকে অনেক বেশি জল ছাড়া হয়েছে। তখনও এই পরিস্থিতি হয়নি। এই সরকার বাঁধগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে যথেষ্ট নজর দেয়নি।” সূর্যবাবুর কটাক্ষ, “হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষকে এখান-ওখান থেকে তুলবেন? এ সব সিনেমায় দেখা যায়!’’ বন্যা নিয়ে রাজ্য সরকার কেন সর্বদল বৈঠক ডাকেনি, সে প্রশ্নও তুলেছেন সূর্যবাবু। বলেন, “যাতে দলবাজি-দুর্নীতি না হয়, আমাদের সময় বন্যা হলেই সর্বদল বৈঠক ডাকতাম। এখন এ সব কোনও ব্যবস্থাই নেই!’’

Flood Rescue DVC Rain Heavy Rainfall ডিভিসি খানাকুল Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy