Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ইছামতীর শহর রঙিন লাল-হলুদে

সকাল থেকেই ছিল আকাশের মুখ ভার। দুপুরে শুরু হয় আকাশভাঙা বৃষ্টি। কিন্তু প্রিয় দল ইস্টবেঙ্গলের প্রতি আবেগ আর ভালবাসার টানে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বেলা ১টার পর থেকে বনগাঁ শহরের সমস্ত রাস্তা যেন গিয়ে মিশতে থাকল বনগাঁ স্টেডিয়ামে।

উপরে, ম্যাচের একটি মুহূর্ত। নীচে, স্টেডিয়াম কাঁপাচ্ছেন সমর্থকেরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

উপরে, ম্যাচের একটি মুহূর্ত। নীচে, স্টেডিয়াম কাঁপাচ্ছেন সমর্থকেরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৬ ০২:৪০
Share: Save:

সকাল থেকেই ছিল আকাশের মুখ ভার। দুপুরে শুরু হয় আকাশভাঙা বৃষ্টি। কিন্তু প্রিয় দল ইস্টবেঙ্গলের প্রতি আবেগ আর ভালবাসার টানে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বেলা ১টার পর থেকে বনগাঁ শহরের সমস্ত রাস্তা যেন গিয়ে মিশতে থাকল বনগাঁ স্টেডিয়ামে।

স্থানীয় কলেজ রোড কার্যত দখলে হয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের। বহু দিন বাদে প্রিয় দল বনগাঁয় খেলতে আসছে, ফলে মাঠমুখো প্রত্যেকেই। কেউ মুখে দলের পতাকা এঁকেছেন। কারও মুখে ভুভুজেলা। কেউ দলের পতাকা নিয়ে চিৎকার করতে করতে ছুটছেন মাঠের দিকে। অনেকের গায়ে ছিল ইস্টবেঙ্গলের জার্সির মতো টি-শার্ট। বেলা ২টোর মধ্যে শেষ হয়ে গেল গ্যালালির সব টিকিট।

বনগাঁ থানার সামনে থেকে ইস্টবেঙ্গলের টিম বাস যখন স্টেডিয়ামের দিকে যাচ্ছিল, পথচলতি বহু মানুষ রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রিয় খেলোয়াড়দের একবার দেখবার জন্য। ডং বা কোচ মর্গানকে জানলার ফাঁক দিয়ে দেখতে পেয়ে তাদের নাম ধরে উন্মত্তের মতো চিৎকার জোড়ের সমর্থকেরা। মর্গানও হেসে হাত নাড়েন।

বেলা ৩টের সময়ে স্টেডিয়ামের বাইরে বাস থেকে নেমে ইস্টবেঙ্গল খেলোয়াড়েরা একে একে যখন হেঁটে স্টেডিয়ামের মধ্যে ঢুকছিলেন, তখন গোটা মাঠ উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে স্বাগত জানাল। উল্লাসের শব্দে কান পাতা দায়।

প্রথমে মাঠে নামেন বনগাঁ পৌরপতি একাদশের খেলোয়াড়েরা। নীল জার্সিতে তাঁদের বেশ মানিয়েছিল। ইস্টবেঙ্গল কোচ জেমস মরগ্যান ফিজিওকে নিয়ে মাঠে এলেন মাঠ দেখতে। তাঁকে দেখে ফের একবার ফেটে পড়েন সমর্থকেরা। মাইকে তখন ঘোষক বাপ্পা ঘোষ বলে চলেছেন, ‘‘গঙ্গাপাড়ের ফুটবল শৈলী আজ ইছামতীর পাড়ে। দুদান্ত মুহূর্ত আমাদের জন্য।’’

বনগাঁর পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য মাঠে গিয়ে নিজের দলের খেলোয়াড়দের উৎসাহীত করে বলেন, ‘‘ওদের সঙ্গে ভাল খেলতে পারলে কিন্তু জীবনে বড় সুযোগ মিলে যেতে পারে।’’ শঙ্করবাবু পরে জানান, স্থানীয় মানুষদের ভাল খেলা দেখার সুযোগ করে দিতে ও স্থানীয় ফুটবলারদের উন্নত ফুটবলের স্বাদ দিতেই এই প্রদশর্নী ম্যাচের আয়োজন। মর্গানের হাতে পদ্মার ইলিশ তুলে দেন শঙ্করবাবু। ছিলেন বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায়। চন্দনের টিপ পরিয়ে দু’দলের খেলোয়াড়দের বরণ করে নেন পুরসভার মহিলা কাউন্সিলরেরা। শেষে জাতীয় সঙ্গীত। মাঠে তখন তিলধারণের জায়গা নেই। প্রায় হাজার দ’শেক দর্শক এ দিন মাঠে এসেছিলেন।

বিকেল ৪টে ২০ মিনিটে খেলা শুরু হতেই প্রত্যাশা মতো ইস্টবেঙ্গল খেলার রাশ নিজেদের হাতে নিয়ে নেন। ৩ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে এগিয়ে দেন অধিনায়ক লাল রিন ডিকা। সেই শুরু। বনগাঁ পৌরপতি একাদশের দলকে নাস্তানাবুদ করতে থাকেন ইস্টবেঙ্গল খেলোয়াড়েরা। কখনও অবিনাশ রুইদাস, মহম্মদ রফিক, নিখিল পূজারী, কখনও বা মেহতাব হোসেন, ডিং ডং বা প্রহ্লাদেরা দাপিয়ে বেড়ান। শেষে ৮টি গোল দিয়ে তাঁরা খেলা শেষ করেন। বনগাঁর খেলোয়াড়দের পারফর্ম্যান্স দেখে হতাশ স্থানীয় অতীতের খেলোয়াড়েরা। লাল্টু নাথ আগে ওই মাঠের খেলেছেন চিমা, জামশেদ, নাসরির সঙ্গে। তিনি ও আর এক প্রাক্তন খেলোয়াড় শঙ্কর দাঁ বলছিলেন, ‘‘একটা সময় মনে হচ্ছিল, আমরাই মাঠে নেমে পড়ি!’’

ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন মোহনবাগানের বহু সমর্থক। তাঁদের ফেরার পথে আফসোস করতে শোনা গেল, সবুজ-মেরুনের খেলা কবে এখানে বসেই দেখতে পাব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangaon Stadium East Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE