Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সারদা কমিশনের টাকা পাওয়া নিয়ে ধন্দে ইডি

শ্যামল সেন কমিশনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সারদার কয়েকটি সম্পত্তি বিক্রির টাকার একাংশ জমা রয়েছে। কিন্তু আইনি ক্ষমতা থাকলেও সারদা-কাণ্ডের অন্যতম তদন্তকারী কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সেই টাকার নাগাল পাচ্ছে না। কী ভাবে সেই টাকা হাতে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে ইডি-র অন্দরে রীতিমতো ধন্দ তৈরি হয়েছে।

চন্দননগরে সারদার অফিস থেকে বেরোচ্ছেন তদন্তকারীরা। ছবি: তাপস ঘোষ।

চন্দননগরে সারদার অফিস থেকে বেরোচ্ছেন তদন্তকারীরা। ছবি: তাপস ঘোষ।

সুনন্দ ঘোষ ও অনুপ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪১
Share: Save:

শ্যামল সেন কমিশনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সারদার কয়েকটি সম্পত্তি বিক্রির টাকার একাংশ জমা রয়েছে। কিন্তু আইনি ক্ষমতা থাকলেও সারদা-কাণ্ডের অন্যতম তদন্তকারী কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সেই টাকার নাগাল পাচ্ছে না। কী ভাবে সেই টাকা হাতে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে ইডি-র অন্দরে রীতিমতো ধন্দ তৈরি হয়েছে।

সারদা-কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরানোর জন্য রাজ্য সরকার তৈরি করেছিল শ্যামল সেন কমিশন। সেই কমিশনের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ফেরত পেতে চায় সংস্থা ইডি। এ জন্য তারা কয়েক দফায় চিঠিও দিয়েছে সারদা নিয়ে গঠিত ওই কমিশনকে। কিন্তু বন্ধ হয়ে যাওয়া কমিশনের কাছ থেকে কী করে ওই টাকা ফেরত পাওয়া যাবে, তা নিয়েই এখন ধন্দে পড়েছেন ইডি-র অফিসারেরা। যদিও ইডি-র চিঠি প্রসঙ্গে শ্যামল সেন জানিয়েছেন, তিনি ইডি-র পাঠানো ওই ধরনের কোনও চিঠি পাননি। তাঁর কথায়, “হাতে পেলে ওই সব চিঠির উত্তর আমি পাঠিয়ে দিতাম।”

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিষ্ণুপুরে সারদা গার্ডেনস-এ ফ্ল্যাট ও বাংলো বিক্রির পরিকল্পনা করেছিলেন সুদীপ্ত সেন। সেখানে ক্রেতারা অগ্রিম টাকা দেওয়ার পরেই গ্রেফতার হন সুদীপ্তবাবু। পরে ওই বাংলো ও ফ্ল্যাটের মালিকানা পেতে আগ্রহী ক্রেতারা সারদা-কমিশনের হাতে বাকি টাকা তুলে দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে টাকার অঙ্ক ৫০ লক্ষ। সারদা-কমিশনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সেই টাকা এখনও জমা রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে কমিশনেরই অস্তিত্ব নেই, সেখানে তাদের কাছ থেকে সম্পত্তি বিক্রির ওই টাকা কী ভাবে পাওয়া যাবে? ইডি-র এক কর্তা জানান, কমিশনের বা্যঙ্ক অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা রাজ্য সরকারের কোষাগারে জমা পড়বে কি না, পড়লেও তা কত দিনে তা এখনও পরিষ্কার নয়। আপাতত তাই ওই টাকা ‘বকেয়া’ হিসেবেই ধরে রেখেছেন তাঁরা। এক অফিসারের কথায়, “আমরা সারদার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কালই কাজ শেষ হয়ে যাবে, এমন নয়। কিন্তু আমরা চিন্তিত কমিশনের অ্যাকাউন্টে থাকা ওই টাকা নিয়ে। ওটা কার কাছ থেকে পাব, তা পরিষ্কার হচ্ছে না।”

রাজ্য সরকার আর মেয়াদ বাড়াতে না চাওয়ায় গত ২২ অক্টোবর বন্ধ হয়ে যায় সারদা-কমিশন। সূত্রের খবর, সেই সময় কমিশনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সম্পত্তি বিক্রির ওই ৫০ লক্ষ-সহ মোট ২ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা জমা ছিল। এর মধ্যে অসমের প্রাক্তন সাংসদ মাতঙ্গ সিংহ ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন কমিশনকে। সুদীপ্ত সেনের কাছে থেকে মাতঙ্গ বিভিন্ন সময় যে অর্থ নিয়েছিলেন, তারই একটি অংশ হিসেবে ওই ৫০ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়েছিলেন তিনি। অ্যাকাউন্টে জমা বাকি ১ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা কমিশন পেয়েছে সারদা থেকে সুবিধাভোগী বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। ইডি অবশ্য কমিশনের অ্যাকাউন্টে থাকা পুরো টাকা পেতে এখন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তারা পাখির চোখ করেছে সম্পত্তি বিক্রির ওই ৫০ লক্ষ টাকা।

কমিশন বন্ধ হওয়ার সময় বিচারপতি সেন বলেছিলেন, এর পর কী হবে তা সরকারই ঠিক করবে। বস্তুত, বিষ্ণুপুরে সারদা গার্ডেনে যাঁরা বাংলো পেয়েছিলেন, সবথেকে বেশি চিন্তায় পড়েছিলেন তাঁরাই। ইডি ওই সম্পত্তি ফের বাজেয়াপ্ত করতে পারে এই ভেবে তাঁরা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। সেন কমিশনের থেকে এ নিয়ে কোনও পরিষ্কার জবাব পাননি তাঁরা। তবে ইডি বলেছে, তারা ওই সব বাড়ি বা বাংলো বাজেয়াপ্ত করতে চায় না।

প্রশ্ন উঠেছে, কমিশনের অ্যাকাউন্টে থাকা সারদার টাকার পরিণতি কী হবে?

ইডি-র এক কর্তা জানান, সেন কমিশনের অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করার এক্তিয়ার নেই তাঁদের। তাঁরা শুধু সেই টাকা ফেরত পাওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকবেন। তা হলে? রাজ্যের অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, সরকার চাইলে ওই টাকা নিজেদের হেফাজতে নিতে পারে। কারণ, কমিশন তৈরি হয়েছিল সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। ওই বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপি ব্যাঙ্কের কাছে জমা দিলে অ্যাকাউন্টের টাকা হস্তান্তরে আর সমস্যা থাকার কথা নয়। সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরের এক আধিকারিক অবশ্য জানান, কমিশনের নামে ওই অ্যাকাউন্ট। ওই অ্যাকাউন্টের চেকে সই করার অধিকারী ছিলেন কমিশনের সেক্রেটারি, জয়েন্ট সেক্রেটারি এবং অ্যাকাউন্ট্যান্ট এই তিন জন। এর মধ্যে প্রথম দু’জন অবসরপ্রাপ্ত হিসেবে কমিশনে কর্মরত ছিলেন। ফলে কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাঁদেরও ছুটি হয়ে গিয়েছে। তৃতীয় জন এখনও অর্থ দফতরের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে হলে যে হেতু ওই তিন জনের মধ্যে দু’জনের সই প্রয়োজন, তাই সরকারের পক্ষে ওই অ্যাকাউন্টে হাত দেওয়া কঠিন।

সরকারের এক মুখপাত্র জানান, ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকা বের করা খুব সহজ হবে না। তবে ওই টাকা হেফাজতে নিলেও আইন অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত তা ইডি-র হাতেই তুলে দিতে হবে বলে জানিয়েছেন এক সরকারি কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE