বছর ছয়-সাত আগে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বেআইনি ভাবে ১২ কোটি টাকা তোলার অভিযোগে সেবি (সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড)-কে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা দিয়েছিল রোজভ্যালি। অথচ তার আগে-পরে মিলিয়ে এ পর্যন্ত সংস্থাটি বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছে। তা হলে ওই ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা কেন? সেবি-র তরফে ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)-কে জানানো হয়েছে, রোজভ্যালি ডিবেঞ্চার মারফত বাজার থেকে বেআইনি ভাবে টাকা তুলেছিল। সে কারণেই ২০০৭-০৮ সাল নাগাদ তাদের জরিমানা করা হয়। পাঁচ লক্ষ টাকা করে দু’টি চেক-এ ওই জরিমানা মিটিয়ে দেয় রোজভ্যালি।
আর এই তথ্যেই অসংগতি খুঁজে পাচ্ছে ইডি। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীনস্থ তদন্তকারী সংস্থাটির অফিসারদের মতে, রোজভ্যালি বাজার থেকে ডিবেঞ্চার মারফত মাত্র ১২ কোটি টাকা তুলেছিল, এটা মানা কঠিন। তা হলে এত টাকা কোথা থেকে পেল রোজভ্যালি? তদন্তকারীরা মনে করছেন, কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম (সিআইএস) মারফত বাজার থেকে রোজভ্যালি প্রচুর টাকা তুলেছিল। সংস্থাটির একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে প্রাথমিক ভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকার হদিশও পেয়েছে ইডি।
রোজভ্যালির পক্ষ থেকে এ দিন অবশ্য জানানো হয়েছে, সে বার ১ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল সেবি। আদালতের দ্বারস্থ হয় রোজভ্যালি। আদালত জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ঘটনার পরে ডিবেঞ্চার মারফত আর টাকা তোলা হয়নি। সংস্থার দাবি, সিআইএস মারফতও টাকা তোলেনি তারা। যা টাকা তোলা হয়েছে, তা ‘টাইম শেয়ার’ মারফত। হোটেলের অগ্রিম বুকিং হিসেবে। তা ছাড়া, জমি-বাড়ির ব্যবসা দেখিয়ে বাজার থেকে যে টাকা আগে তোলা হয়েছে, তা-ও ২০১০-এ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সব টাকার বেশির ভাগই ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে দাবি রোজভ্যালির।
ইডি-র অভিযোগ, ওই সংস্থার কাজকর্মের উপরে যাদের নজরদারি করার কথা ছিল, সেই সেবি এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া সে দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করেনি। এই ধরনের কারবারের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান থাকলেও সারদা-সহ বেআইনি অর্থলগ্নি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি সেবি এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কেন? ইডি জানিয়েছে, ওই দুই সংস্থার কাছ থেকে কোনও সদুত্তর পায়নি তারা। দুই সংস্থার তরফে যে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তা হল, কখনও কোনও অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তাদের কাছে কেউ অভিযোগই জানায়নি! আর অভিযোগ না জানালে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান থাকলেও এর আগে কখনই তা করা হয়নি!
এত দিন কেন চুপ করে বসেছিল সেবি ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক? ইডি-র তদন্তকারীদের দাবি, তাঁদের এই প্রশ্নের জবাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তারা আগে কখনওই ব্যবস্থা নেয়নি। সেই যুক্তিতেই সারদার মতো সংস্থা বাজার থেকে দেদার টাকা তুলে গেলেও তারা হাত গুটিয়ে বসেছিল। এই বক্তব্য তদন্তকারীদের কাছে মোটেই যুক্তিগ্রাহ্য হয়নি। প্রায় একই যুক্তি সেবি-রও।
ইডি-র বক্তব্য, এই দুই নিয়ামক সংস্থার নাকের ডগায় বসে অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি এত দিন ধরে খবরের কাগজ এবং সংবাদমাধ্যমে ফলাও বিজ্ঞাপন দিয়ে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, বড় বড় অনুষ্ঠানের প্রধান ‘স্পনসর’ হয়ে নিজেদের ব্যবসা বাড়িয়ে গিয়েছে। তার পরেও কোনও অভিযোগ জমা পড়ার আশায় হাত গুটিয়ে বসে থাকার যুক্তি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থলগ্নি সংস্থার এই বেনিয়মের তদন্তভার সিবিআই ও ইডি-র হাতে তুলে দেওয়ার সময়ে সুপ্রিম কোর্টও বলেছিল, সেবি ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে।
আপাতত সে দিকেও নজর দিতে হচ্ছে গোয়েন্দাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy