Advertisement
E-Paper

অপর্ণাকে টানা ৬ ঘণ্টা জেরা ইডি-র, ৪ ঘণ্টা মন্ত্রী শ্যামাকে

সারদা কেলেঙ্কারিতে সোমবারই প্রথম জেরার মুখে পড়লেন রাজ্যের কোনও মন্ত্রী। এ দিন দুপুরে বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে সল্টলেকের দফতরে ডেকে পাঠিয়ে চার ঘণ্টা জেরা করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। আর এ দিনই জেরা করা হল চিত্র পরিচালক ও অভিনেত্রী অপর্ণা সেনকেও। এক টানা ছ’ঘণ্টা। সারদা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন একটি পাক্ষিক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি। সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে শ্যামাপ্রসাদবাবু ঢোকেন বেলা পৌনে দু’টো নাগাদ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৪৬
জেরা শেষে ইডি-র দফতর থেকে বেরিয়ে আসছেন অপর্ণা সেন। সোমবার।

জেরা শেষে ইডি-র দফতর থেকে বেরিয়ে আসছেন অপর্ণা সেন। সোমবার।

সারদা কেলেঙ্কারিতে সোমবারই প্রথম জেরার মুখে পড়লেন রাজ্যের কোনও মন্ত্রী। এ দিন দুপুরে বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে সল্টলেকের দফতরে ডেকে পাঠিয়ে চার ঘণ্টা জেরা করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। আর এ দিনই জেরা করা হল চিত্র পরিচালক ও অভিনেত্রী অপর্ণা সেনকেও। এক টানা ছ’ঘণ্টা। সারদা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন একটি পাক্ষিক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি।

সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে শ্যামাপ্রসাদবাবু ঢোকেন বেলা পৌনে দু’টো নাগাদ। বেরোন প্রায় সন্ধ্যা ছ’টায়। আর অপর্ণা সেন তাঁর স্বামী কল্যাণ রায়কে সঙ্গে নিয়ে বেলা ১১টা নাগাদ ইডি দফতরে পৌঁছন। তাঁরা বেরোন বিকেল পাঁচটা নাগাদ। সেই হিসেবে মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদবাবু ও অভিনেত্রী অপর্ণা সেন দু’জনে একসঙ্গে ঘণ্টা তিনেক ইডি-র দফতরে থাকলেও তাঁদের একসঙ্গে বসিয়ে জেরা করা হয়নি বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।

তাঁর ব্যবসার ভরাডুবির জন্য সংবাদমাধ্যমের ব্যবসাই দায়ী বলে এর আগে একাধিক বার অভিযোগ করেছেন সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন। এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত লোকেদের মাধ্যমেই রাজনীতির কারবারিদের বিপুল পরিমাণ টাকা দেওয়া হতো বলে অভিযোগ। সেই সূত্র ধরে তৃণমূলের বহিষ্কৃত সাংসদ কুণাল ঘোষকে একাধিক বার জেরা করেছেন তদন্তকারীরা। জেরা করা হয়েছে আরও দুই তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয় বসু এবং অর্পিতা ঘোষকে। সৃঞ্জয়ের সংবাদপত্রের সঙ্গে সারদা গোষ্ঠীর একটি টিভি চ্যানেলের ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছিল। আর নাট্যকর্মী অর্পিতা কাজ করতেন আর একটি টিভি চ্যানেলে। এ বার জেরার মুখে পড়লেন অপর্ণা।

এ দিন ইডি দফতর থেকে চলে যাওয়ার সময় অপর্ণা জানান, সারদার মালিকানাধীন যে পাক্ষিক পত্রিকাটির তিনি সম্পাদনা করতেন, তার আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়েই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আর্থিক বিষয়টি আমি দেখতাম না বলেই তদন্তকারীদের জানিয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে ফের ডাকা হলে আমি সহযোগিতা করব।” ইডি সূত্রের খবর, পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে মাসে কয়েক লক্ষ টাকা বেতন পেতেন অপর্ণা সেন। মোট ২১ মাস তিনি কাজ করেছেন। তবে এ দিন জেরার মুখে অপর্ণা বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন বলেই ইডি সূত্রে খবর। বেতন সংক্রান্ত বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের কোনও প্রশ্নের জবাব এ দিন দিতে চাননি অপর্ণা। সারদার থেকে বেতন তিনি চেকে পেতেন না নগদে, জানতে চাওয়া হলে ক্ষুব্ধ অপর্ণার প্রতিক্রিয়া, “আপনাদের তা বলতে যাব কেন?”

অপর্ণার পাশাপাশি রাজ্যের মন্ত্রী শামাপ্রসাদবাবুকে জেরা করা হল কেন?

ইডি সূত্রের খবর, বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ে লোকসানে চলা একটি সিমেন্ট কারখানা সারদাকে বিক্রি করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদবাবু। কোনও কোনও মহলে অভিযোগ উঠেছিল, তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে, চাপ সৃষ্টি করে সুদীপ্ত সেনকে ওই কারখানা কিনতে বাধ্য করেছিলেন। কার মাধ্যমেই বা সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে শ্যামাপ্রসাদবাবুর ওই কারখানা বিক্রির রফা হয়েছিল, সেই প্রশ্নও উঠেছে। এই সমস্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যই গত বৃহস্পতিবার চিঠি পাঠিয়ে তাঁকে তলব করা হয়েছিল।

যে সিমেন্ট কারখানা নিয়ে বিতর্ক, সেটি বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের ধবনীতে। রাস্তার পাশে স্থানীয় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের একটি জমি ছিল। দীর্ঘদিন পতিত জমি হিসেবেই পড়ে ছিল সেটি। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের এক শরিক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের প্রায় ১৩ বিঘা জমি এক দালালের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছিল শ্যামবাবুকে। বাকি জমি অন্য পরিবারের।” তৃণমূল সূত্রের খবর, সিমেন্ট কারখানা গড়তে ২০০৬ সালে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের ১৩ বিঘা এবং আরও পাঁচ বিঘা-সহ মোট ১৮ বিঘা জমি কিনেছিলেন শ্যামাপ্রসাদবাবু।

পাঁচিল তুলে কারখানা চালু করতে আরও বছর দেড়েক সময় লেগেছিল। কিন্তু প্রথম থেকেই কারখানাটি লোকসানে চলছিল। মন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালে ‘ল্যান্ডমার্ক সিমেন্ট’ নামে ওই কারখানাটি ২ কোটি ৮১ লক্ষ টাকায় তিনি সারদা গোষ্ঠীর কাছে বেচেছিলেন। এই টাকার মধ্যে বকেয়া ব্যাঙ্ক-ঋণও ছিল। ইডি-র অফিস থেকে বেরিয়ে শ্যামাপ্রসাদবাবু বলেন, “আমি ছাড়া ওই কারখানার আরও ছ’জন মালিক ছিলেন। ব্যাঙ্ক-ঋণ বাদ দিয়ে তাঁরা ৪৬ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন। আমি পেয়েছিলাম ৮ লক্ষ টাকা। বাকি টাকায় ব্যাঙ্ক-ঋণ মেটানো হয়েছিল।” কিন্তু তদন্তকারীদের প্রশ্ন, জন্ম থেকেই লোকসানে চলা এই কারখানা সারদা কিনেছিল কেন?

ইডি সূত্রের খবর, এই বিষয়ে মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মন্ত্রী তাঁর জবাবও দিয়েছেন। তবে মন্ত্রী ঠিক কী বলেছেন, তদন্তকারীরা সেই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এ দিন ইডি দফতর থেকে বেরোনোর পরে বস্ত্রমন্ত্রী দাবি করেন, তিনি কোনও মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে সুদীপ্ত সেনকে কারখানা বিক্রি করেননি। তবে কার মাধ্যমে সুদীপ্ত সেন ওই কারখানার খোঁজ পেলেন, তা অবশ্য মন্ত্রী বলেননি। একই সঙ্গে তিনি এ দিন দাবি করেছেন, সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

ইডি দফতর থেকে বেরিয়ে আসছেন শ্যামাপ্রসাদ।

ইডি সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার পাঠানো চিঠিতে শ্যামাপ্রসাদবাবুকে সিমেন্ট কারখানার আয়ব্যয়ের হিসেব (ব্যালান্স শিট), আয়কর রিটার্ন-সহ বিভিন্ন নথিপত্র নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। এ দিন সে সব নিয়ে এসেছিলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “সব কাগজই তদন্তকারীদের কাছে জমা দিয়েছি।” মন্ত্রীর কথায়, “ইডি-র সঙ্গে বৈঠক ঠিকঠাক হয়েছে। ওঁরা যা প্রশ্ন করেছিলেন, আমি তার উত্তর দিয়েছি। ওঁরা যা কাগজপত্র দেখতে চেয়েছিলেন, আমি সে সব দেখিয়েছি।”

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তের জালে রাজ্যের মন্ত্রী এসে যাওয়ার দিনে ফের বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা ও সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র। জলপাইগুড়িতে এক দলীয় সভায় তিনি বলেন, “প্রথম থেকে বলছি, কান টানলে মাথা আসবে। অনেক রাঘববোয়াল সারদা কাণ্ডে জড়িত।” যদিও একই সঙ্গে তাঁর সংশয়, “কত দূর কী হবে, তা এখনই বলা মুশকিল। না আঁচালে বলতে পারছি না।”

তবে সারদা কেলেঙ্কারিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি যে রীতিমতো উঠে পড়ে লেগেছে, তা গত কয়েক দিন ধরেই পরিষ্কার। সিবিআই দু’দিনে দেশ জুড়ে ৯০টি জায়গায় হানা দিয়েছে। সারদা তদন্তে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার সময়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, এই কেলেঙ্কারিতে সমাজের প্রভাবশালীদের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে হবে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির তদন্তের গতিপথ ক্রমশ সেই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ভূমিকা যাচাইয়ের দিকে এগোচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। সিবিআই তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি রজত মজুমদার, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহ, মাতঙ্গ সিংহের প্রাক্তন স্ত্রী মনোরঞ্জনা সিংহের বাড়ি তল্লাশি করেছে। সিবিআই সূত্রের খবর, গুয়াহাটিতে মনোরঞ্জনা সিংহের দু’টি বাড়ি ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে। ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে দু’টি টিভি চ্যানেলের অফিসও।

এ বার রাজ্যের মন্ত্রীকে জেরা করে ইডি-ও একই বার্তা দিল বলে মনে করা হচ্ছে।

ছবি: শৌভিক দে

ed saradha scam sudipto sen aparna sen shyamaprasad mukhopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy