দিন তিনেক আগেই প্রেসিডেন্সির দ্বিশত বর্ষ পূর্তির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ তথা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু। আর সোমবার প্রেসিডেন্সি ক্যাম্পাসে গিয়ে উচ্চশিক্ষা সচিব বিবেক কুমার জানালেন, স্বাধিকারের নামে ‘যথেচ্ছাচার’ মেনে নেবে না রাজ্য সরকার।
শিক্ষাজগতের একাংশের বক্তব্য, শাসক দলের এক শিক্ষাবিদ-সাংসদ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের নাক গলানোর ব্যাপারে আপত্তি তোলার পরে শিক্ষাসচিবের এই উক্তিতে বিতর্কের নতুন ইন্ধন দেখা যাচ্ছে। তাঁদের প্রশ্ন, স্বাধিকারের সীমা ছাড়িয়ে যথেচ্ছাচারের এলাকা ঠিক কোথায় শুরু হচ্ছে, সেটা নির্ধারণ করবে কে বা কারা? উত্তর মিলছে না।
তবে উচ্চশিক্ষা সচিবের ব্যাখ্যা, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারকে সরকার শ্রদ্ধার চোখে দেখে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ আসছে। করদাতাদের টাকায় বিশ্ববিদ্যালয় চলে। তাই সব বিষয়েই শিক্ষামন্ত্রীকে বিধানসভায় জবাবদিহি করতে হয়। ‘‘যা নিয়ে বিধানসভায় জবাবদিহি করতে হয়, সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা যাবে না কেন,’’ পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাসচিব। বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের কথা তোলেন তিনি। কিছু দিন আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে-আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল, টেনে আনেন সেই প্রসঙ্গও। সেই অভিযোগের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স অফিসারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের চা-বাগানের জমি লিজ নিয়ে বিতর্কের কথাও তোলেন সচিব।
বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সরকারই টাকা দেয়। তাই সরকার সেখানে হস্তক্ষেপ করতেই পারে বলে বারবার সওয়াল করে আসছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। উচ্চশিক্ষা সচিবের বক্তব্যেও সেই সুর শুনতে পাচ্ছেন শিক্ষা শিবিরের বড় অংশ।
শুক্রবার প্রেসিডেন্সির ২০০ বছর পূর্তির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সুগতবাবু বলেছিলেন, ‘‘সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে থাকুক। কিন্তু তারা উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করবে না। শিক্ষার দায়িত্ব থাক শিক্ষাবিদদের হাতেই।’’ শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষা-সম্মেলনে গিয়ে সেই সুরেই বক্তব্য পেশ করেন প্রেসিডেন্সির উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া।
বিবেক কুমার এ দিন জানান, পঠনপাঠনে সরকার হস্তক্ষেপ করতে চায় না। ‘‘কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় তো চলে করদাতাদের টাকায়। সেখানে আর্থিক অনিয়ম হলে সরকার প্রশ্ন করতে পারবে না কেন,’’ প্রশ্ন উচ্চশিক্ষা সচিবের।
শুক্রবার সুগতবাবুর বক্তব্যের পরে শিক্ষামন্ত্রীও জানিয়েছিলেন, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই থাকে। অর্থ দিয়ে সাহায্য করে। কিন্তু পড়াশোনার ব্যাপারে কখনওই হস্তক্ষেপ করে না। প্রশ্ন তোলার ছলে উচ্চশিক্ষা সচিব এ দিন শিক্ষামন্ত্রীর সেই বক্তব্যেরই সবিস্তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন বলে শিক্ষা মহলের অনেকের পর্যবেক্ষণ।
সচিব জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের বেতন দেওয়ার জন্য অনলাইন প্রক্রিয়া চালু করা হচ্ছে আর্থিক স্বচ্ছতার জন্যই। উচ্চশিক্ষা সচিব জানান, আগামী শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ভর্তির কোটা আরও বাড়ানোর বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy