Advertisement
০৩ মে ২০২৪

লড়াই কোথায়! বলছেন বিস্মিত চাচা

বয়স তাঁর নব্বইয়ের কোঠা ছুঁয়েছে অনেক দিন। ১৯৮২ সাল থেকে একটানা বিধায়ক পদ সামলে এখন তিনি খড়্গপুর সদরের ‘মিথ’। এ বারও সেই ‘মিথ’ জ্ঞানসিংহ সোহনপাল (চাচা) কংগ্রেস প্রার্থী। কিন্তু কোথাও নেই তেমন কোনও প্রচার। নরেন্দ্র মোদী আসছেন এ মাসেই, প্রচার জোরদার তৃণমূলেরও। সেখানে কংগ্রেস কেন এত পিছিয়ে? উত্তর নেই কংগ্রেসে। এমনকী তাঁরা যে পিছিয়ে, সে কথা মানতেও নারাজ শহর নেতৃত্ব। নিরুত্তাপ স্বয়ং চাচা।

খড়্গপুরে দলের কার্যালয়ে একা বসে জ্ঞান সিংহ সোহন পাল।

খড়্গপুরে দলের কার্যালয়ে একা বসে জ্ঞান সিংহ সোহন পাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৬ ০১:১৯
Share: Save:

বয়স তাঁর নব্বইয়ের কোঠা ছুঁয়েছে অনেক দিন। ১৯৮২ সাল থেকে একটানা বিধায়ক পদ সামলে এখন তিনি খড়্গপুর সদরের ‘মিথ’। এ বারও সেই ‘মিথ’ জ্ঞানসিংহ সোহনপাল (চাচা) কংগ্রেস প্রার্থী। কিন্তু কোথাও নেই তেমন কোনও প্রচার। নরেন্দ্র মোদী আসছেন এ মাসেই, প্রচার জোরদার তৃণমূলেরও। সেখানে কংগ্রেস কেন এত পিছিয়ে? উত্তর নেই কংগ্রেসে। এমনকী তাঁরা যে পিছিয়ে, সে কথা মানতেও নারাজ শহর নেতৃত্ব। নিরুত্তাপ স্বয়ং চাচা।

এত দিন প্রার্থী তালিকা ঘোষণার জন্যই আটকে ছিল কংগ্রেসের প্রচার। কিন্তু সে তালিকা প্রকাশের পরও গোটা খড়্গপুরে দেখা মেলেনি কংগ্রেসের সমর্থনে সামান্য প্রচারও। এমনকী শুরু হয়নি দেওয়াল লিখনও। তুলনায় প্রচারে অনেক এগিয়ে গিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বীরা। ঠিক হয়েছে কর্মসূচি। বাদ নেই এসইউসি-র মতো দল।

প্রচার শুরুর প্রস্তুতি নিতেই তিনদিন সময় হাতে নিচ্ছে শহর কংগ্রেস। চাচা যে এ বারেও প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে শহরে গুঞ্জন চলছিলই। যদিও শহরে কংগ্রেসের একটি অংশ প্রদেশ নেতৃত্বের কাছে দরবার করেছিল পুরসভার বিরোধী দলনেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডেকে প্রার্থী করা বিষয়ে। সেটা সম্ভব ছিল যদি চাচা প্রার্থী হতে অনিচ্ছী প্রকাশ করতেন। তেমনটা হয়নি। ফলে বিদায়ী বিধায়ককে বদল করেনি প্রদেশ কংগ্রেস। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘোষণা হয়ে যায় চাচার নামই। কিন্তু তার পরেও শহরে কংগ্রেসের নেতাদের তেমন তাপোত্তাপ দেখা যায়নি ভোট প্রচার নিয়ে।

বুধবার বেলা ১২টা নাগাদ চাচাকে দেখা গিয়েছে গোলবাজারে কংগ্রেস কার্যালয়ে। শহর সভাপতি অমল দাস ও জনা পাঁচেক কর্মী ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি তাঁর পাশে। লড়াই কেমন হবে? প্রশ্নের উত্তরে চাচার নিরুত্তাপ উত্তর, “লড়াই কোথায়? লড়াই নেই। তবে সন্ত্রাস, হিংসা এসবের বিরুদ্ধে লড়াই হবে।” এর পরে প্রচারের কথা বলতেই চাচা ইশারায় প্রশ্ন পাস করে দিলেন অমল দাসকে। অমল দাসের জবাব, “জয়ী আমরা হবই। প্রচার ২০ মার্চ থেকে শুরু হয়ে যাবে। একটা ওয়ার্ড দিয়ে দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গিয়েছে।”

মাত্র একটি ওয়ার্ডে দেওয়াল লিখন! সবংয়ে কিন্তু মানস ভুঁইয়ার নাম ঘোষণার অনেক আগেই দেওয়াল লিখন শুরু হয়েছিল। ইতিমধ্যেই সবংয়ের প্রতিটি বুথের কর্মীদের নিয়ে ১৬টি অঞ্চলে বৈঠক সেরে ফেলেছে কংগ্রেস। সেখানে খড়্গপুরে এমন পরিস্থিতি কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরেই।

অনেকেই বলছেন, এখানে আত্মতুষ্টিতে ভুগছে কংগ্রেস। কারণ, এই শহরে এ বার চাচার বিরুদ্ধে লড়াই করবেন যে দু’জন তাঁদের বিরুদ্ধে প্রধান অস্ত্র বহিরাগত তকমা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং তৃণমূল প্রার্থী রমাপ্রসাদ তিওয়ারি। শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাস বলেন, “চাচা এই শহরের মানুষ। এটাই আমরা মানুষের সামনে তুলে ধরব।” কংগ্রেস কিন্তু খড়্গপুরে বিজেপিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। গত লোকসভা নির্বাচনে সদর ব্লকে ভাল ফল করেছিল বিজেপি। তার উপর বিজেপি প্রার্থী দলের রাজ্য সভাপতি। শহরবাসীও মনে করছেন টক্কর হবে বিজেপি-র সঙ্গেই। কংগ্রেস নেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডেও বলেন, “এটা ঠিক বিজেপির প্রার্থী ওঁদের দলের রাজ্য সভাপতি হওয়ায় গুরুত্ব রয়েছে।”

এ দিন গোলবাজারের কংগ্রেস কার্যালয়ে অবশ্য দেখা যায়নি রবিশঙ্কর পাণ্ডেকে। দুপুরে তিনি নিজের বাড়িতেই ছিলেন। প্রচারে যাননি? দল প্রার্থী না করায় কোথাও কী ক্ষোভ রয়েছে? রবিশঙ্করবাবু বলেন, “দল যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই মেনে নিতে হবে। আমাদের জয় নিশ্চিত। আর আমাদের প্রচারের মুখ তো চাচা নিজেই। আমাদের প্রচার শুরু হয়ে যাবে।”

কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮ মার্চ বাম ও কংগ্রেসের ছাত্র, যুব সংগঠন শহরের বাসস্ট্যান্ড থেকে গোলবাজার পর্যন্ত মিছিল করবে। সেখানে নারদ কাণ্ডই মুখ্য। এর পরে ২০মার্চ চাচার উপস্থিতিতে গোলবাজার রামমন্দিরে এক কর্মিসভা হবে। ২৭মার্চ বাম ও কংগ্রেস একসঙ্গে রণকৌশল ঠিক করতে কর্মিসভা করবে বলে জানা গিয়েছে।

কিন্তু শহরে যখন বিজেপি ও তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লিখন ও একাধিক কর্মিসভা সেরে ফেলা হয়েছে তখনও কংগ্রেস কেন ঢিলেমি করছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে। এরই মধ্যে ২৬ অথবা ২৭ মার্চ বিজেপি প্রার্থীর হয়ে প্রচারে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার আগে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনেকেই প্রচারে আসার কথা খড়্গপুরে। আবার ২১মার্চ খড়্গপুর শহর ও গ্রামীণ বিধানসভা নিয়ে সভা করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদী ঘুরে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহরে আসবেন কিনা তা স্থির করবে তৃণমূল।

সেখানে কংগ্রেস এখনও বেসামাল তাদের প্রচারে কর্মসূচি নিয়ে। এ দিন জেলা কংগ্রস নেত্রী হেমা চৌবে জানান, প্রচারের প্রস্তুতি ঠিক হবে ২০মার্চ। চিরঞ্জিবী, নাগমা-রা প্রচারে আসতে পারেন। তবে সে সিদ্ধান্ত নেবে প্রদেশ নেতৃত্ব। তা ছাড়া আমরা প্রধানমন্ত্রীর পাল্টা হিসাবে কাকে প্রচারে আনা যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে

১৯৬২ সাল থেকে খড়্গপুর বিধানসভায় টানা লড়াই করছেন চাচা। তিনবার পয়াজয় এসেছে। তবে ন’বার তিনি জয়ী হয়েছেন। ৯২বছর বয়সেও ফের প্রার্থী হয়েও লড়াই নেই বলে দাবি করছেন চাচা নিজে। তবে এই বয়সে চাচার প্রার্থী হওয়া নিয়ে শহরের অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে। সেই সংশয় কাটিয়ে চাচা পক্ষে ভোট টানতে কংগ্রেসের শহরের নেতা-কর্মীরা কবে প্রচারে উদ্যোগী হবেন তা নিয়ে জল্পনা চলছেই। এই ফাঁকে বিরোধীরা বলছে, “প্রচারে পিছিয়ে পড়া কংগ্রেস ভোটযন্ত্রে আরও পিছিয়ে পড়বে।” তবে শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাসের দাবি, প্রচারে দিন পনেরো হাতে পেলেই যথেষ্ট। চাচা শহরের মানুষের কাছে সর্বদা অপরাজেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE