Advertisement
০৪ মে ২০২৪

দলের আগেই ইংরেজবাজারে মিছিল কৃষ্ণেন্দুর

তাঁর নামে নাকি পরোয়ানা এসে গিয়েছে কলকাতা থেকে, ছাড়তে হবে ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যানের পদ। তিনি কিন্তু বিশেষ বিচলিত নন। অন্তত বাইরে থেকে শরীরী ভাষা সেটাই বলছে।

মিছিলে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। — নিজস্ব চিত্র

মিছিলে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৯
Share: Save:

তাঁর নামে নাকি পরোয়ানা এসে গিয়েছে কলকাতা থেকে, ছাড়তে হবে ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যানের পদ। তিনি কিন্তু বিশেষ বিচলিত নন। অন্তত বাইরে থেকে শরীরী ভাষা সেটাই বলছে।

সোমবারই মোদী সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইংরেজবাজার শহরে মহা মিছিল করে তিনি দেখিয়ে দিলেন, এখনও তাঁর পায়ের তলার মাটি কতটা পোক্ত। এই নিয়ে দলের জেলা স্তরের ঘোষিত মিছিল কিন্তু হবে ২৪ তারিখ। তাই প্রশ্ন এ দিনের মিছিলের পরেও প্রশ্ন উঠেছে, এতে কতটা লাভ হবে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর?

উল্টে জেলার কিছু লোক বলতে শুরু করেছেন, এ সবের পরে শেষমেশ কৃষ্ণেন্দু না মালদহের হুমায়ুন কবীর হয়ে যান! মুর্শিদাবাদের রেজিনগরের হুমায়ুন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে এসে মন্ত্রী হন। আবার হেরে গিয়ে কোণঠাসাও হন। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে বিধানসভা ভোটে জেতা রবিউল আলম চৌধুরী যখন তৃণমূলে যোগ দিলেন, তখন আর অপেক্ষা না করে পত্রপাঠ অধীর চৌধুরীর হাত ধরে পুরনো দলেই ফিরে যান হুমায়ুন।

কৃষ্ণেন্দু অবশ্য একবার নিজের জোরে জিতে দেখিয়েছেন। মন্ত্রীও হয়েছেন মমতার মন্ত্রিসভায়। আবার সাবিত্রী মিত্রের সঙ্গে টানা ঝগড়ার পরে গত বিধানসভা ভোটে গোহারা হেরে মানও খুইয়েছেন। যাঁর কাছে তিনি এ বার হেরেছেন, সেই নীহাররঞ্জন ঘোষ সম্প্রতি তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়েছেন। দলে যোগ দিয়েছেন কি না, এই নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা থাকলেও মালদহ জেলা তৃণমূলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বিষয়টি নিয়ে জোর প্রচার করছেন। আর, এই যোগ দেওয়ার সময় নীহার ঘোষ শর্ত দিয়েছেন, কৃষ্ণেন্দুকে পুরপ্রধানের পদ থেকে সরাতে হবে।

তার পরেই এমন নির্দেশ-সহ দলীয় নেতৃত্বের ই-মেলও এসে গিয়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে। শুধু তাই নয়, কলকাতায় তৃণমূল ভবনে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, নীহার ঘোষ শর্ত দিন বা না দিন, কৃষ্ণেন্দুকে সরে যেতে হবেই। এই দাবি তুলে গত শনিবারই পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান-সহ দলের আট কাউন্সিলর পুরসভার বিভিন্ন পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

এই অবস্থায়, হাজার দশেকের বেশি লোক নিয়ে (সেই দলে বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর এবং একাধিক জেলা পরিষদের সদস্যও ছিলেন) মিছিল করে এ দিন কি দলীয় নেতৃত্বকে বার্তা দিয়ে চাইলেন কৃষ্ণেন্দু? বোঝাতে চাইলেন, হারলেও তাঁর পায়ের তলায় মাটি এখনও কিন্তু শক্ত? নাকি, সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেসকেও নিজের ওজনটা বুঝিয়ে রাখতে চাইলেন তিনি?

কৃষ্ণেন্দু নিজে অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমি মালদহে দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলাম। গঠনতন্ত্রে কোথাও লেখা নেই যে কোনও ইস্যুতে দলের ঝান্ডা হাতে রাস্তায় নামা যাবে না। তাই নরেন্দ্র মোদী সরকারের পাঁচশো-হাজার বাতিলের জেরে সাধারণ মানুষের যে চরম হয়রানি, জেলার দলীয় কর্মীদের নিয়ে এ দিন তাঁর প্রতিবাদ করেছি। কাউকে কিছুই দেখানোর নেই।’’

কিন্তু নেত্রীর ঘোষিত দিনের আগেই এমন মিছিল করা নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কৃষ্ণেন্দুর উপরে রুষ্ট হতে পারেন বলেই মনে করছে দলের একাংশ। জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন যেমন বলেছেন, ‘‘ওই মিছিল দলের অনুমোদিত নয়। নেত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নোট বাতিলের বিরুদ্ধে ২৪ তারিখ জেলায় মিছিল হবে।’’ ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এই মিছিলই কৃষ্ণেন্দুর অপসারণ ত্বরান্বিত করবে না তো? যদিও কৃষ্ণেন্দুর ঘনিষ্ঠমহলের দাবি, দলের এক শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, এখনই কৃষ্ণেন্দুকে সরানো হচ্ছে না।

আর কংগ্রেস? দলের মালদহ জেলা সভানেত্রী মৌসম নূর বলেছেন, ‘‘কেউ যদি দলে আসার ব্যাপারে পা বাড়াতে চায়, আগে সেটা স্পষ্ট করে বলুক। আমরা দলে আলোচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

English Bazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE