Advertisement
E-Paper

এই কি সেই খুনে দাঁতাল, উঠল প্রশ্ন

বার আটেক ঘুম পাড়ানি ডার্ট ছুড়েও তেমন কাজ হয়নি। বরং ফল হয়েছিল উল্টো, বন দাপিয়ে ছুটতে থাকা দাঁতালের সামনে পড়ে জখম হয়েছিলেন দুই বনকর্মী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০৪:২১

বার আটেক ঘুম পাড়ানি ডার্ট ছুড়েও তেমন কাজ হয়নি। বরং ফল হয়েছিল উল্টো, বন দাপিয়ে ছুটতে থাকা দাঁতালের সামনে পড়ে জখম হয়েছিলেন দুই বনকর্মী।

বনকর্তারা জানাচ্ছেন, হাতিটার দৌড়ঝাঁপ দেখে আর ঝুঁকি নেননি তাঁরা। মঙ্গলবার শেষ বিকেলে, বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের জঙ্গলে ডবল ব্যারেল বন্দুক থেকে ছিটকে বেরনো গুলিতে তাই ফুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল তাকে।

তা বলে, ঘুমপাড়ানি গুলির বদলে একেবারে থ্রি নট থ্রি বুলেট?

প্রশ্নটা উঠে গিয়েছিল বুধবার সকালেই। তড়িঘড়ি তাই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ‘হাতি নিধনের’ এমনই কারণ দেখিয়ে হাত ধুয়ে ফেলেছেন বনকর্তারা।

কর্তাদের দাবি, বছর খানেক ধরেই কখনও বেলিয়াতোড়-বড়জোড়া কখনও বা সোনামুখীর জঙ্গল লাগোয়া এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল হাতিটি। গত ফেব্রুয়ারিতে হাতিটিকে ‘রোগ’ বা ‘খুনে’ ঘোষণা করে চলেছিল তার গতিবিধির উপরে নজরদারি। কিন্তু শিকারিরা দিন
পাঁচেক ধরে তাকে চোখে চোখে রেখেও কোনও অস্বাভাবিকতা খুঁজে পাননি। সে যাত্রায় আর ‘খুন’ করা যায়নি তাকে। তা হলে এ বার কী এমন ঘটল?

বন দফতরের এক শীর্ষ কর্তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন— দিন কয়েক আগে, নবান্ন থেকে কড়া ফরমান জারি হয়েছে, ‘মেরে হোক ধরে হোক’ দক্ষিণবঙ্গের ওই তিন জেলায় লোকালয়ে হাতির হানা রুখতে হবে। এ অভিযান তারই প্রথম ধাপ। রাজ্য বন উপদেষ্টামণ্ডলীর এক সদস্য জানাচ্ছেন, ‘মারা-ধরা’র সেই নির্দেশ পেয়েই, বন কর্তাদের একাংশ ঠিক করে ফেলেন, বাঁকুড়া-পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো ‘লোনার’ বা নিঃসঙ্গ হাতিগুলিই যত নষ্টের গোড়া। তাদের চিহ্নিত করে পাকড়াও করতে পারলেই সমস্যা সামলে দেওয়া যাবে।

অভিযানের গোড়ায় একটি হাতিকে চিহ্নিত করে ঘুম পাড়ানি গুলিতে কাবু করা হলেও সমস্যা বাধে এই হাতিটিকে নিয়ে। এখন প্রশ্ন, বেলিয়াতোড় কাঁপানো সেই বুনো দাঁতাল যে এটিই, সে ব্যাপারে বনকর্তারা নিশ্চিত হলেন কী করে? রাজ্যের বনসচিব চন্দন সিংহের সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘এ ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট পাওয়ার পরেই নির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া সম্ভব।’’

বন দফতরের এক কর্তা জানান, হাতিদের কান-পিঠ-দাঁত এবং লেজ ও পায়ের গড়ন দেখে হাতি চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু, গাছপালার আড়ালে বার দুয়েক দেখেই তাকে চিহ্নিত করে ফেলেছিলেন বনকর্তারা? গুলিতে মুখ থুবড়ে পড়া হাতিটিকে দেখতে আশপাশের গ্রাম থেকে ভিড় করেছিলেন গ্রামবাসীরা। গ্রামের পর গ্রাম জুড়ে এই হাতিটিই যে ত্রাস ছড়িয়েছিল, এমনটা হলফ করে বলতে পারেননি তাঁদের অনেকেই।

তা হলে এত তড়িঘড়ির কী ছিল?

খবরটা কানে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রকের প্রোজেক্ট এলিফ্যান্ট কর্তৃপক্ষেরও। তাদের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘‘কোনও হাতিকে খুনে ঘোষণা করতেই পারে রাজ্য বন দফতর, তবে সে ব্যাপারে একশো ভাগ নিশ্চিত হলে তবেই তাকে মেরে ফেলার ফতোয়া জারি করা যায়।’’

ওই কর্তা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘তা বলে একের পর এক হাতিকে রোগ ঘোষণা করে হস্তী নিধন চালাবে, এমনটা হতে পারে না। আর দুষ্টু হাতিকে সবক শেখাতে, তাদের ধরে বেঁধে কুনকি করে দেওয়ার অধিকারও রাজ্য সরকারের নেই।’’

সে কথা কি বন দফতর শুনছে!

Elephant Rampage Forester
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy