E-Paper

ডকে উঠছে পরিবেশ, আন্দোলন চান বিমান

পরিবেশ এবং সবুজের সঙ্গে বিমানবাবুর সংযোগ অবশ্য বরাবরই নিবিড়। বহু বছর ধরে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য দফতরে তাঁর নজরদারিতে রয়েছে বাগান।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:১০
Biman Bose.

আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে ছাদের বাগানে বিমান বসু। নিজস্ব চিত্র।

দশকের পর দশকে আন্দোলনের যত অভিজ্ঞতা তাঁর ঝুলিতে, বঙ্গ রাজনীতিতে তার জুড়ি মেলা ভার। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসেও প্রবীণ বাম নেতার আক্ষেপ, পরিবেশ এখনও রাজনীতিতে বিষয় হিসেবে বিশেষ কল্কে পেল না! আইন-কানুন সবই আছে, তবু পরিবেশ বাঁচানোর আন্দোলন এখনও দানা বাঁধল না।

চৈত্রের দাবদাহে কলকাতা যখন পুড়ছে, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের চেনা ঠিকানায় বসে বিমান বসু বলছেন, ‘‘এখন আলাদা করে নজর দেওয়া উচিত পরিবেশের দিকে। আন্দোলন হওয়া উচিত পরিবেশ নিয়ে। বিশেষ করে জলাশয় আর গাছ বাঁচানোর আন্দোলন। পরিবেশ ধ্বংস করে বেপরোয়া নগরায়নের দাপটের ফল এই তীব্র আবহাওয়া। পরিবেশকে না বাঁচালে মানুষ বাঁচবে কী ভাবে?’’ অশীতিপর বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের আক্ষেপ, কোনও রাজনৈতিক দলই এখানে পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে কর্মসূচিতে যায়নি এবং যাচ্ছেও না। নিজের দলকেও এই তালিকা থেকে বাদ না দিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কোনও দলই পরিবেশ নিয়ে নামল না। আমার তো মনে হয়, এই বয়সে পৌঁছেও কেউ ডাকলে, সুযোগ পেলে আমি পরিবেশ নিয়ে আন্দোলনে তৈরি!’’

পরিবেশ এবং সবুজের সঙ্গে বিমানবাবুর সংযোগ অবশ্য বরাবরই নিবিড়। বহু বছর ধরে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য দফতরে তাঁর নজরদারিতে রয়েছে বাগান। সেখানে বিমানবাবুর আনা এমন গাছও রয়েছে, যার বয়স বামফ্রন্টের চেয়ে বেশি! প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর জন্মদিন উদযাপনের জন্য নিউটাউনে তাঁরই নামাঙ্কিত জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চে গিয়েও সবুজের মাহাত্ম্য বোঝাতে চেয়েছেন বিমানবাবু। নিজের হাতে গাছের চারা বিলি করেছেন এবং যাঁরা গাছ নিচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর নিয়ে রাখতে বলেছেন সহকর্মীদের। যাতে গাছের যত্ন হচ্ছে কি না, পরে প্রয়োজনে খোঁজ নেওয়া যায়। এই মুহূর্তে টবে থাকা একটি অশ্বত্থ গাছকে যত্নে পালন করার উপযুক্ত লোক খুঁজছেন। যাতে গাছ বেড়ে ওঠে, ছায়া দেয় এবং পরিবেশে অবদান রাখতে পারে।

আলিমুদ্দিনে পোষ্য বেড়াল দো’তলায় তাঁর পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর বিমানবাবু বলছেন, ‘‘গাছ কাটার আমি বিরোধী। বাংলাদেশে গিয়ে দেখেছি, কী ভাবে ওরা পথ-বিভাজিকার উপরে বড় বড় সব গাছকে ঠাঁই দিয়েছে। বাংলাদেশের কাছ থেকে কিন্তু আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।’’ পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বুঝেই পাশ্চাত্যে গ্রিন পার্টি হয়েছে কিন্তু এখানে তেমন কোনও উদ্যোগ নেই, তাঁর কথায় উঠে আসছে সেই তথ্যও।

নদীর হাল কেমন, দেখার জন্য ঘুর্ণি বা কপোতাক্ষের তিরে হাজির হয়েছেন বিমানবাবু। আর রাজনীতির ডাকেই রাজ্যের এবং এই শহরের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে হয় তাঁকে। উন্নয়নের নামে নয়ানজুলি বুজিয়ে চলার প্রবণতা তাঁর চোখ এড়ায়নি এবং উদ্বেগ বাড়িয়েছে। প্রবীণ নেতার প্রশ্ন, ‘‘পরিবেশের ক্ষতি তো বটেই। এখন যা অবস্থা হচ্ছে, এর পরে আগুন লাগলে নেভানোর জল পাওয়া যাবে কোথা থেকে?’’

প্রশ্ন করছেন বটে। শুনে সতর্ক হচ্ছে কি কেউ!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Biman Bose CPM

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy