Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Lead

গাড়ির জ্বালানি বদলালেও পুরোপুরি কাটেনি সিসার বিপদ

প্রসঙ্গত, প্রকৃতি এবং মানুষের পক্ষে সিসা অত্যন্ত ক্ষতিকারক একটি রাসায়নিক। শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি সিসা ঢুকলে রক্তচাপ বৃদ্ধি, হজমের গোলমাল, কিডনি, মাংসপেশি, স্নায়ু এবং হাড়ের দুরারোগ্য ব্যাধি হতে পারে।

An image of Car

—প্রতীকী চিত্র।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:৩১
Share: Save:

ভারত-সহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে বার বারই উপরের সারিতে উঠে এসেছে। সেই দূষণের পিছনে গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়ার কথাও বার বার বলেছেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা। সেই ভাষ্যে নতুন সংযোজন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যার শিক্ষক রেশমী দাস এবং গবেষক ইরাবতী রায়ের একটি গবেষণা।

তাঁরা দেখিয়েছেন, গাড়ির ধোঁয়া কী ভাবে বাতাসে সিসার মতো বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি রেখে গিয়েছে। বস্তুত, সিসাযুক্ত পেট্রল ব্যবহারের জন্য ধোঁয়ার মধ্যে সিসার উপস্থিতি থাকত, যা বাতাসে মিশত। তবে বর্তমানে সিসামুক্ত পেট্রলের ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু রেশমী এবং ইরাবতীর গবেষণা দেখিয়েছে যে, আগে ব্যবহৃত সিসাযুক্ত পেট্রলের কুপ্রভাব এখনও বয়ে নিয়ে চলেছে প্রকৃতি। তার ফলেই সিসার মতো বিষাক্ত রাসায়নিকের দূষণ পিছু ছাড়ছে না।

প্রসঙ্গত, প্রকৃতি এবং মানুষের পক্ষে সিসা অত্যন্ত ক্ষতিকারক একটি রাসায়নিক। শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি সিসা ঢুকলে রক্তচাপ বৃদ্ধি, হজমের গোলমাল, কিডনি, মাংসপেশি, স্নায়ু এবং হাড়ের দুরারোগ্য ব্যাধি হতে পারে। ‘ক্যালিফর্নিয়া এয়ার রিসার্চ বোর্ড’-এর তথ্য অনুসারে, শিশু এবং বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে কম পরিমাণের সিসাও তুলনায় বেশি ক্ষতি করতে পারে। সিসা থেকে ক্যানসারের মতো রোগ হওয়ার প্রমাণ আছে। অন্তঃসত্ত্বা মহিলা সিসার দূষণের শিকার হলে তা গর্ভস্থ সন্তানের বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে যে, পরিবেশে সিসার পরিমাণ বৃদ্ধির উৎস কী?

সম্প্রতি নেচার পত্রিকা গোষ্ঠীর ‘কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রবন্ধে এই দুই পরিবেশবিজ্ঞানী দেখিয়েছেন, প্রকৃতিগত ভাবে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে সিসার উপস্থিতি থাকে। তার পরিমাণ ১৭ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন)। আবহাওয়াজনিত ভূপৃষ্ঠ ক্ষয়ের ফলে তাই এমনিতেই ধুলোর সঙ্গে মিশে থাকা সিসা বাতাসে মেশে। এই প্রক্রিয়া চলে আসছে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে। শিল্প বিপ্লবের পরে এই প্রাকৃতিক ভূপৃষ্ঠের সিসার সঙ্গে মিশেছে মানবসৃষ্ট সিসার উৎস, যেমন, কয়লা পোড়ানো, সিসাযুক্ত পেট্রলের ব্যবহার, জঞ্জাল পোড়ানো, ধাতু গলানো। প্রায় দু’দশক আগে সিসাযুক্ত পেট্রল বন্ধ হয়ে গেলেও কী ভাবে তা এখনও বাতাসে রয়ে গিয়েছে, তা দেখিয়েছেন রেশমী এবং ইরাবতী।

ওই দুই পরিবেশবিজ্ঞানী দেখিয়েছেন, পেট্রল থেকে যে সিসার যৌগ নির্গত হত, তা বাতাসে ৫-১০ দিন থাকার পরে মাটিতে থিতিয়ে পড়ত। মাটির সঙ্গে মিশ্রিত এই সিসা ১০০ থেকে ২০০ বছর পর্যন্ত থেকে যায়। সেই সিসাই ফের ধুলোর সঙ্গে মিশে বাতাসে সিসার পরিমাণ বাড়িয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি সিঙ্গাপুর, তাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং ভারতে যে দূষণের উৎস সন্ধান সমীক্ষা হয়েছে, তাতে দূষণের নানা উৎস যেমন চিহ্নিত হয়েছে, তেমনই একদা গাড়ির ধোঁয়া থেকে নির্গত সিসা যে ভাবে মাটিতে মিশে আছে, তার প্রভাবও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lead Fuel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE