দিনের বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকছে কলকাতা বিমানবন্দরের প্রধান রানওয়ে। বেশির ভাগ বিমান ওঠানামা করছে দ্বিতীয় রানওয়ে দিয়ে। কিন্তু শীতের শুরুতে ওই রানওয়ের উত্তর দিক (বিরাটি প্রান্ত) থেকে শন শন হাওয়া বইছে। ফলে সে দিক থেকে বিমান নামা ঝুঁকির।
অগত্যা দ্বিতীয় রানওয়ের দক্ষিণ দিক (রাজারহাট প্রান্ত) থেকে ওঠানামা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু সেখানেও সমস্যা। দ্বিতীয় রানওয়েটির দক্ষিণ দিকে ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) নেই, যা থাকলে বিমান নামায় সুবিধা হয়।
তিন সমস্যা মিলে নাভিশ্বাস কলকাতা বিমানবন্দরের অফিসারদের। দ্বিতীয় রানওয়ের দক্ষিণ দিক থেকে নামতে এসে আকাশে অপেক্ষা করতে হচ্ছে বিমানকে। অনেক পাইলট অভিযোগ করছেন, আকাশে চক্কর কাটতে কাটতেই জ্বালানি ফুরিয়ে আসছে।
সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে কলকাতার আকাশে এসে ইন্ডিগোর পাইলট দেখেন, অপেক্ষার তালিকায় তিনি আট নম্বরে। অর্থাৎ তাঁর আগে সাতটি বিমান নামবে। এত ক্ষণ অপেক্ষা করলে জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে বিমানের মুখ ঘুরিয়ে তিনি ভুবনেশ্বর চলে যান। রাতে আসেন কলকাতায়।
এ ভাবে আকাশে বিমানের লাইন পড়ে যাওয়ার কারণ কী?
বিমানবন্দরের কর্তারা জানিয়েছেন, প্রধান রানওয়েতে নামার পরে বিমান খুব তাড়াতাড়ি রানওয়ে খালি করে বেরিয়ে যেতে পারে। আবার, রানওয়ে খালি হলেই দ্রুত সেখানে ঢুকে উড়ে যেতে পারে অন্য বিমান। তার জন্য রানওয়ের খুব কাছে অপেক্ষা করতে পারে সে।
কিন্তু কলকাতার দ্বিতীয় রানওয়ের এত কাছে অপেক্ষা করার সুযোগ নেই। ফলে একটি বিমান ওই রানওয়ে খালি করে বেরিয়ে যাওয়ার পরে অপেক্ষমান বিমানের সেখানে ঢুকতে সময় লাগছে। এর জেরে দিনের বেশ কিছু সময়ে নামার মুখে আকাশে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে পাইলটকে।
আকাশে অপেক্ষারত বিমানের সংখ্যা বাড়ার পিছনে আরও একটি যুক্তি দিচ্ছেন বিমানবন্দরের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, আইএলএস-এর সুবিধা থাকায় প্রধান রানওয়েতে নামার সময়ে দু’টি বিমানের মাঝে সাত নটিক্যাল মাইল ব্যবধান রাখা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় রানওয়ের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১২ নটিক্যাল মাইল রাখতে হচ্ছে। সেই কারণেও সময় বেশি লাগছে কখনও কখনও।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ১ নভেম্বর প্রধান রানওয়ে সারানোর কাজ শুরু হয়েছে। তাই প্রতি দিনই বেলা ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হচ্ছে ওই রানওয়ে। ব্যবহার করা হচ্ছে সমান্তরাল দ্বিতীয় রানওয়ে। তার উত্তর দিকে আইএলএস থাকলেও বাধ সাধছে উত্তুরে হাওয়া।
এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট-এর জেনারেল ম্যানেজার বরুণকুমার সরকার বলেন, ‘‘হাওয়ার গতিবেগ সাত থেকে ৮ নটিক্যাল মাইল থাকলেও তার অনুকুলে বিমান নামতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এই সময়ে হাওয়ার গতিবেগ ১০ নটিক্যাল মাইল ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’’ এই হাওয়ায় বিমান নামতে গেলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। হাওয়ার বিপরীতে নামাটাই সুবিধার। রানওয়ের মাটি ছোঁয়ার পরে প্রতিকূল হাওয়া বিমানের গতি কমাতে সাহায্য করে।
এই অবস্থায় দ্বিতীয় রানওয়ের দক্ষিণ দিকই ভরসা। সে দিকে আইএলএস না থাকায় ন্যূনতম ১৬০০ মিটার উপর থেকে রানওয়ে পরিষ্কার দেখা গেলে তবেই বিমান নামতে পারবে। বরুণবাবু বলেন, ‘‘এখনও দৃশ্যমানতা নিয়ে সমস্যা হয়নি। কিন্তু শীতের শুরুতে কুয়াশারও প্রকোপ শুরু হয়। তখন দৃশ্যমানতা কমে গেলে বিমান নামতেই পারবে না।’’ একমাত্র দিল্লি ছাড়া দেশের অন্য কোনও বিমানবন্দরে কুয়াশার প্রকোপ এতটা হয় না। দিল্লিতে তৃতীয় রানওয়ে তৈরি এবং সম্পূর্ণ আইএলএস থাকায় এই সমস্যায় পড়তে হবে না। কিন্তু কলকাতায় প্রধান রানওয়েটি সংস্কারে অন্তত দেড় মাস সময় লাগবে। তার মধ্যে কুয়াশা পড়ে গেলে বিমান ওঠানামা বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, তেমন জরুরি প্রয়োজনেও প্রধান রানওয়ের কাজ থামিয়ে বিমান নামার ব্যবস্থা করতে অন্তত তিন ঘণ্টা সময় লাগবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy