Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ছন্দে ফিরলেও নগদের আকাল

বেশি সমস্যায় পড়েছেন প্রবীণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা। কেননা, ছ’দিন ধরে ব্যাঙ্ক খোলেনি। ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ থাকায় এটিএম থেকে তাঁরা টাকা তুলতে পারছেন না।

তীরে-তরী: ছন্দে ফিরছে বসিরহাট। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

তীরে-তরী: ছন্দে ফিরছে বসিরহাট। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৭ ০৩:৫৫
Share: Save:

খুলল অধিকাংশ দোকানপাট। হাট-বাজার বসল। শুরু হল যান চলাচলও।

ছ’দিন পরে রবিবার বসিরহাটের বাসিন্দারা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন ঠিকই, কিন্তু নগদের আকাল তাঁদের ভাবাচ্ছে। বেশি সমস্যায় পড়েছেন প্রবীণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা। কেননা, ছ’দিন ধরে ব্যাঙ্ক খোলেনি। ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ থাকায় এটিএম থেকে তাঁরা টাকা তুলতে পারছেন না।

ত্রিমোহিনী এলাকার সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ বলেন, ‘‘পেনশনের টাকায় সংসার চলে। কিন্তু মাসের গোড়া থেকেই যা হল, তাতে কবে টাকা তুলতে পারব জানি না।’’ নতুন বাজারের এক ব্যবসায়ীর ক্ষোভ, ‘‘সোমবারও ব্যাঙ্ক খুলবে কিনা বুঝতে পারছি না। মালপত্র কিনতে হবে। অথচ, হাতে টাকা নেই।’’

শুধু টাকা তোলার ক্ষেত্রে নয়, সমস্যা হচ্ছে ডাকঘর থেকে রেল এবং প্রশাসনিক কাজকর্মেও। ডাক বিশেষত ‘স্পিড পোস্ট’-এর ক্ষেত্রে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে গ্রাহককে। একই অবস্থা রেলের টিকিট সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও। জরুরি কোথাও যাওয়ার জন্য দূরপাল্লার ট্রেনে আসন সংরক্ষণ করতে পারা যাচ্ছে না। সাঁইপালার বাসিন্দা বিমলেন্দু বারিকের মাকে আগামী ১৭ জুলাই ভেলোরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার কথা। বিমলেন্দুবাবু বলেন, ‘‘ওখানকার চিকিৎসক ডেট দিয়েছেন। কিন্তু এখানে যা অবস্থা তাতে টিকিট কাটতে পারছি না। কারণ ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ। মাকে কী ভাবে নিয়ে যাব বুঝতে পারছি না!

আরও পড়ুন: মানুষের সুরক্ষাই প্রথম ফেসবুকে

শুধু নাগরিক পরিষেবা নয়, সমস্যা হচ্ছে প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ব্লক থেকে মহকুমাস্তরে নানা তথ্য-মেলের মধ্যে আদান-প্রদান হয়। জেলা শাসকের দফতরেও কোনও তঅয পাঠাতে ই-মেল জরুরি। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় তথ্য আদান-প্রদানে সমস্যা হচ্ছে।

রাস্তায় পুলিশ এবং আধা-সেনার টহল থাকায় এ দিন বিকেল পর্যন্ত বসিরহাটের কোথাও কোনও অশান্তির খবর মেলেনি। শান্ত ছিল বাদুড়িয়া, স্বরূপনগরও। বহিরাগত দুষ্কৃতীরা যাতে এলাকায় ঢুকতে না-পারে, তার জন্য মোড়ে মোড়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হলেও বাস চলেছে কম। তবে, অটো, ট্রেকার বা টোটোর মতো যাত্রিবাহী ছোট গাড়ি চলেছে পুরোদমে।

বসিরহাটের মহকুমাশাসক নীতেশ ঢালি এবং পুলিশকর্তারা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে শান্তি আলোচনা চালান। ‘সেভ ডেমোক্রেসি’র একটি দলও এ দিন বসিরহাটে যায়। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আর দু’এক দিনের মধ্যেই এলাকা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’

তবে, ছ’দিন পরে পুরোদস্তুর বাজার-দোকান চালু হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন সাধারণ মানুষ। বেশি ভিড় দেখা গিয়েছে মাছের বাজারে। চড়া দামে ইলিশও বিকিয়েছে দেদার।
নতুন বাজার থেকে ইলিশ কিনে ফেরার পথে এক যুবক তো বলেই ফেললেন, ‘‘এতদিন বাজারে মাছ মিলছিল না। ছুটির দিনে ইলিশ দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না। ৮০০ টাকা দিয়ে এক কেজি
কিনেই ফেললাম। আর যেন কোনও অশান্তি না হয়।’’

বসিরহাটের গোলমালের জেরে সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জের মতো সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকাতেও চাল, ডাল বা মুদিখানার জিনিসপত্রে টান পড়ছিল। এ দিন বসিরহাট পুরতান বাজারের হাট থেকে ওই সব সামগ্রী কিনে নৌকা করে পাড়ি দেন সুন্দরবনের ব্যবসায়ীরা।

ছ’দিন পরে ছন্দে ফেরে শহর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE