Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পরীক্ষাতেও বাধ সাধল অ্যাসিড

মনের জোর সম্বল করে মঙ্গলবার রাতেও মাধ্যমিক দেবে বলে জানিয়েছিল সে। বাদ সাধল শরীর। অনবরত স্যালাইন চলায় হাতের যন্ত্রণায় কাবু সবংয়ের অ্যাসিড আক্রান্ত বছর ষোলোর কিশোরী বুধবার সকালে পরিজনেদের জানিয়ে দেয়, পরীক্ষা দেওয়ার অবস্থায় সে নেই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৩
Share: Save:

মনের জোর সম্বল করে মঙ্গলবার রাতেও মাধ্যমিক দেবে বলে জানিয়েছিল সে। বাদ সাধল শরীর। অনবরত স্যালাইন চলায় হাতের যন্ত্রণায় কাবু সবংয়ের অ্যাসিড আক্রান্ত বছর ষোলোর কিশোরী বুধবার সকালে পরিজনেদের জানিয়ে দেয়, পরীক্ষা দেওয়ার অবস্থায় সে নেই। এ দিন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকেই ওই কিশোরী মাধ্যমিক দেবে বলে ঠিক হয়েছিল। সেই মতো সব প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল। যদিও শেষ মুহূর্তে পরীক্ষা দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে কিশোরী।

মেদিনীপুর মেডিক্যালের বার্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে ওই কিশোরী। এ দিন সকালে হাসপাতালের বার্ন ওয়ার্ডে যান দুই পুলিশকর্মী। ছিলেন মহিলা পুলিশকর্মীও। পরে পুলিশকর্মীদের জানানো হয়, ওই কিশোরী পরীক্ষা দিতে পারছে না।

কিশোরীর কথায়, “শরীর আর দিচ্ছে না। হাত তুলতেই পারছি না। ইচ্ছে ছিল পরীক্ষা দেওয়ার। পারলাম না বলে খারাপ লাগছে।” ওই কিশোরীর পিসি বলছেন, ‘‘হাতে স্যালাইন চলায় যন্ত্রণা রয়েছে। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ঠিক ছিল ও পরীক্ষা দেবে। ও নিজেই পরীক্ষা দিতে চেয়েছিল।
যদিও বুধবার সকালে ও জানায়, হাতের যন্ত্রণা বেড়েছে। তাই পরীক্ষা দিতে পারবে না। পরে
বিষয়টি আমি হাসপাতালকে জানিয়ে দিই।” হাসপাতাল থেকে খবর দেওয়া হয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের
আঞ্চলিক কার্যালয়ে।

গত রবিবার গভীর রাতে সবংয়ে অ্যাসিড হামলার শিকার হয় ওই কিশোরী। ওই দিন রাতে বাড়ির বাইরের ঘরে মা-বাবা-ভাইবোনের সঙ্গে ঘুমোচ্ছিল সে। হঠাৎ মুখে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হলে ওই কিশোরী চিৎকার করে ওঠে। ঘুম থেকে উঠে সে দেখে তার মুখে কেউ ঝাঁঝালো তরল ঢেলে দিয়েছে। পরিজনেরা তাকে সবং গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকেরা জানান, অ্যাসিডে কিশোরীর মুখের কিছুটা অংশ ঝলসে গিয়েছে। ঘটনায় কিশোরীর জেঠুর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিবেশী দিগ্বিজয় সিংহকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। সবংয়ের হাসপাতালে শল্য চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় গত সোমবার তাকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়।

কিশোরী পরীক্ষা দিতে চায় না শুনে এ দিন মেডিক্যালে আসেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা আহ্বায়ক নির্মলেন্দু দে। কিশোরীর সঙ্গে দেখাও করেন তিনি। নির্মলেন্দুবাবু বলছিলেন, “ওর শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। গতকালের থেকে আজ ও আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে ওই কিশোরীর পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য ওর স্কুলের পক্ষ থেকেই আবেদন জানানো হয়েছিল।
সেই মতো সব ব্যবস্থাও করা হয়। ওই কিশোরীর মনের জোরও ছিল। কিন্তু যন্ত্রণার কাছে সেই মনের জোরও
হার মানল।”

গরিব বাড়ির ওই কিশোরীর বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন। চার ভাই-বোনের সংসারে ওই কিশোরী মেজ। বড়দি গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। একটি
বিষয়ে অকৃতকার্য হয়। সে এ বছর ফের মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে। যদিও পরীক্ষা দিতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে কিশোরী। তার পিসি বলছেন, ‘‘গতবারই ওর দিদি মাধ্যমিক দেয়। একটি বিষয়ে পাশ করতে পারেনি। ফলপ্রকাশের পর ও দিদিকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিল, চিন্তা করিস না। সামনের বার একসঙ্গে মাধ্যমিক দেব। একটা ঘটনা সব এলোমেলো করে দিল।’’ আর ওই কিশোরীর মা বলছেন, ‘‘মেয়ে পরীক্ষা দেবে বলে আশা করেছিলাম। যদিও শারীরিক অসুস্থতার জন্য ও পরীক্ষা দিতে পারেনি। সামনের বছর সুস্থ হয়ে পরীক্ষা দিক, এটাই চাই।’’
এরপরেই তিনি বলছেন, ‘‘যার জন্য মেয়ের এমন ক্ষতি হল তার কঠোর শাস্তি চাই।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কিশোরীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। মেদিনীপুর মেডিক্যালের সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজার কথায়, “চিকিৎসা চলছে। ওই কিশোরীর শারীরিক অবস্থা নতুন করে
খারাপ হয়নি।” তিনি বলেন, “শরীর দুর্বল থাকায় ও পরীক্ষা দেবে না বলে লিখিত ভাবে জানায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Acid attack Examinee Secondary Exam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE