Advertisement
E-Paper

বায়োপসির স্লাইড পেতে ছুটছে কালঘাম

কলকাতার এক নামী বেসরকারি হাসপাতালে বায়োপসির পরে দামী কেমোথেরাপির প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়েছিলেন ডাক্তার। কিন্তু বন্ধুদের পরামর্শে কেমো চালুর আগে দ্বিতীয় এক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যান গড়িয়ার চন্দন বসু।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:১৯

কলকাতার এক নামী বেসরকারি হাসপাতালে বায়োপসির পরে দামী কেমোথেরাপির প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়েছিলেন ডাক্তার। কিন্তু বন্ধুদের পরামর্শে কেমো চালুর আগে দ্বিতীয় এক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যান গড়িয়ার চন্দন বসু। সেই চিকিৎসক সমস্ত উপসর্গ শুনে স্লাইড রিভিউ করানোর কথা বলেন। কিন্তু স্লাইড কোথায়, যে রিভিউ করাবেন? হাসপাতাল তাঁকে কোনও স্লাইড দেয়নি। শেষ পর্যন্ত বহু চিঠি চালাচালি করে, অতিরিক্ত বেশ কয়েক হাজার টাকা গচ্চা দিয়ে তবে স্লাইড হাতে পান তিনি। এই হয়রানির জন্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা দায়ের করেছেন চন্দনবাবুর পরিবারের লোকেরা।

হাসপাতাল চত্বরে ঘুরে জুতোর শুকতলা ক্ষইয়ে ফেলেছেন নৈহাটির দীপ্তেন্দ্র চৌধুরী। কিন্তু কিছুতেই বাবার বায়োপসির স্লাইড হাতে পাচ্ছেন না। পর্যাপ্ত টাকা খরচ করে বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে খাদ্যনালীর ক্যানসারে আক্রান্ত বাবার বায়োপসি করিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল জানিয়ে দিয়েছে, স্লাইড মিলতে পারে। কিন্তু প্রত্যেকটা স্লাইডের জন্য মোটা টাকা লাগবে। কিন্তু বায়োপসির জন্য তো টাকা দিয়েছেন তাঁরা। ফের টাকা কেন? হাসপাতালের জবাব, ওটাই দস্তুর।

বায়োপসির স্লাইড নিয়ে এই ভোগান্তি ক্যানসার রোগীদের ক্ষেত্রে জলভাত হয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগত কারণ দেখিয়ে কোনও সংস্থা রোগীদের বায়োপসির স্লাইড রেখে দিতেই পারে। কিন্তু রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজনে সেটা তাঁকে দিতে তারা বাধ্য। এ জন্য কোনও অতিরিক্ত টাকা হাসপাতাল দাবি করতে পারে না। অথচ সেটাই চলছে নির্বিচারে। রাজ্যের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে স্লাইড দেওয়া নিয়ে রোগীদের অনর্থক হয়রান করার ব্যাপারে অজস্র অভিযোগও জমা পড়েছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের অনেকেই বলছেন, বায়োপসির স্লাইড রোগীদের দেওয়ার বিষয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম লেখা নেই। তারই সুযোগ নিচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল। কেউ কেউ আবার পরীক্ষার আগে রোগীর পরিবারকে দিয়ে এই সংক্রান্ত কাগজে সই করিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ।

ক্যানসার চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, স্লাইড রিভিউ হল ক্যানসার চিকিৎসার একটা জরুরি অংশ। অন্যান্য উপসর্গ ক্যানসারের সঙ্গে না মিললে শুধু বায়োপসি রিপোর্টের (টিস্যুর বিশেষ পরীক্ষা) ভিত্তিতে চিকিৎসা চালু করা ঠিক নয়। ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় যেমন বলেছেন, ‘‘স্লাইড না দেওয়ার অর্থ রোগীর চিকিৎসার অধিকার কেড়ে নেওয়া। শুধু স্লাইড নয়, প্যারাফিন ব্লকটাও দিয়ে দেওয়া উচিত। বহু ক্ষেত্রে জিনগত পরীক্ষার সময়ে ওটা দরকার হয়।’’ ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতায়, ‘‘একই স্লাইড বা ব্লকের দু’রকম ব্যাখ্যা হতে পারে বহু ক্ষেত্রেই। অন্তত বার দুয়েক রিভিউ না করিয়ে এখন চিকিৎসা শুরুই হয় না।’’

কেন স্লাইড নিয়ে ভোগান্তি বাড়ায় হাসপাতালগুলি? চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, রোগীকে নির্দিষ্ট হাসপাতালের নির্দিষ্ট চিকিৎসকের কাছে বেঁধে রাখাই এর উদ্দেশ্য। যদিও হাসপাতালগুলির দাবি, আলাদা করে চাইলে তারা স্লাইড দেয়। প্রয়োজনে আলাদা টাকা নেওয়া হয়। সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালের কর্তা বলেই দিলেন, ‘‘স্লাইড তৈরি করতে তো টাকা লাগে। এর জন্য আলাদা টাকা নেওয়ায় অন্যায়ের কিছু নেই।’’

আইনজীবীরা বলছেন, ক্রেতা সুরক্ষা আইন অনুযায়ী এটা ‘আনফেয়ার ট্রেড প্র্যাকটিস’-এর আওতায় পড়ার কথা। মধ্য কলকাতার একটি ল্যাবরেটরির কর্ণধার সুবীর দত্তও বললেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, ল্যাবরেটরি স্লাইড রাখতেই পারে। কিন্তু রোগী চাইলে একটি কপি নিখরচায় তাদের দেওয়ার কথা।’’ দক্ষিণ কলকাতার আর একটি ল্যাবরেটরির কর্তা বলেন, ‘‘এমনিতেই ক্যানসারের চিকিৎসার খরচ বিপুল। তার উপরে স্লাইড পিছু ১৫০০ টাকা বা ২০০০ টাকা করে নিচ্ছে বহু হাসপাতাল। এটা শুধু অনৈতিক নয় অমানবিকও।’’

cancer Biopsy slides Patient Hospital Money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy