দেখুন ভিডিয়ো
করণকে জিজ্ঞাসা করেই তদন্তকারীরা জানতে পারেন, জেহানার সঙ্গে তাঁর ‘ভালবাসা’র কথা। কিন্তু করণ অন্য ধর্মের হওয়ায় সেই সম্পর্ক মেনে নেয়নি জেহানার পরিবার। একবার করণের সঙ্গে বিয়ে করবে বলে পালিয়েও গিয়েছিল জেহানা। কিন্তু তারপর মেয়েকে ফিরিয়ে আনেন জেহানার বাবা মহম্মদ মুস্তাক। মেয়েকে বুঝিয়ে করণের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলেন। তবে, ওই সম্পর্ক থেকে মেয়েকে তিনি বার করতে পারেননি।
আরও পড়ুন
রাজ্যে পেট্রল-ডিজেলে ১ টাকা করে ছাড়, ঘোষণা মমতার
করণের সঙ্গে কথা বলেই তদন্তকারীরা সন্দেহ করেন, জেহানা খুনের সঙ্গে যোগ থাকতে পারে তাঁর বাড়ির লোকজনের। করণের কাছ থেকেই পুলিশ জানতে পারে জেহানার বাবা মুস্তাক এবং দাদা জাহিদ কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকায় থাকেন। কলকাতা শহরে তাঁরা গাড়ি চালান। অন্যদিকে, পুলিশের একটি দল জেহানার বিহারের বাড়ি পৌঁছয়। সেখানে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, কয়েকদিন আগেই জেহানাকে কলকাতায় নিয়ে গিয়েছে তাঁর বাবা-দাদা।
সেই সূত্র ধরেই রবিবার রাতে কলকাতায় পার্ক সার্কাস এবং আনন্দপুর এলাকায় হানা দেয় পুলিশ। আটক করা হয় জেহানার বাবা এবং দাদাকে।জেরার মুখে মুস্তাক স্বীকার করেন যে নিজের মেয়েকে খুন করেছেন তিনি। কিন্তু কেন?
পুলিশকে জেহানার বাবা-দাদা জানিয়েছেন, অন্য ধর্মের ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক তাঁদের গ্রামের লোকজনও মেনে নেয়নি। গ্রামের মোড়লরা রীতিমতো একঘরে করে রেখেছিল তাঁদের। তারপর অনেক অনুরোধের পর গ্রামের মাতব্বররা নিদান দেন যে, ওই মেয়েকে গ্রামের বাইরে কোথাও থেকে বিয়ে দিয়ে আসতে হবেমুস্তাককে। তাকে গ্রামে রাখা যাবে না।
আরও পড়ুন
‘আমি যখন খেতে বসতাম, বাবা আমাকে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিত’
মঙ্গলবার বর্ধমান আদালতে হাজির করা হয় মুস্তাক এবং জাহিদকে। এ দিন আদালতে যাওয়ার পথে জাহিদ বলেন,“প্রথমে আমরা বিয়ে দেওয়ার জন্যই বোনকে কলকাতায় এনে রেখেছিলাম। কিন্তু করণকে কোনও ভাবেই বোন ছাড়তে রাজি ছিল না। তাই আমরাও আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।” জাহিদ জানিয়েছে, ওই রাতে বিহারেই ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কলকাতা ছাড়ে তিনজন।দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎই মত পরিবর্তন করেন মুস্তাক। জাহিদ বলেন,“বাবা বার বার বলতে থাকেন, বোনের বিয়ে দিয়েও লাভ নেই। ও আবার পালিযে যাবে করণের কাছে। তখন আমি বাবাকে বলি, করণের সঙ্গেই তবে বিয়ে দিয়ে দাও।”
কিন্তু, তা মানতে পারেননি মুস্তাক। গাড়ি চালাচ্ছিলেন জাহিদ। পেছনের আসনে ছিলেন মুস্তাক এবং জেহানা। মুস্তাক আদালতের পথে খুব নিস্পৃহ-নির্বিকার মুখে বর্ণনা করেন, ঠিক কীভাবে খুন করেছেন মেয়েকে। প্রৌঢ় বলেন, “জেহানাকে ঘুমন্ত অবস্থাতেই গাড়ির মধ্যে গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করি। তারপর সেই দেহ টেনে নিয়ে যাই ধান খেতে। সেখানে পাথর দিয়ে মাথায় মুখে আঘাত করে বিকৃত করি মুখ, যাতে কেউ চিনতেও না পারে।”
পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ধৃতদের আমরা জেরা করছি। এই খুনের পিছনে আরও কোনও কারণ আছে কি না, আমরা খতিয়ে দেখব।’’
খুনে ব্যবহৃত গাড়ি থেকে শুরু করে দড়ি সবই উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে যে ভাবে নির্বিকার মুখে মুস্তাক তাঁর এই খুনের বর্ননা দিয়েছেন তা তাজ্জব করে দিয়েছে তদন্তকারীদেরও। তারপরেও মুস্তাকের মনোভাবে স্পষ্ট, মেয়ের প্রাণের চেয়েও সামাজিক বিধি তাঁর কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)