Advertisement
E-Paper

পড়তে চাওয়ায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে মেয়েকে ঝোলাতে গিয়েছিল বাবা!

আলিপুরদুয়ারের বাবুরহাট কদমতলা জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষক রাকেশ দে আর দেরি করেননি। বিডিও-র দফতরে জানিয়ে দেন।

নারায়ণ দে

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৫
দিদি অপর্ণার (ডান দিকে) সঙ্গে সঙ্গে কমলিকা। —নিজস্ব চিত্র।

দিদি অপর্ণার (ডান দিকে) সঙ্গে সঙ্গে কমলিকা। —নিজস্ব চিত্র।

কথাটা শুনে চমকে উঠেছিলেন শিক্ষক। অবাক হয়ে কমলিকা মুন্ডার দিদি অপর্ণার দিকে তাকান। পাথরের মতো মুখ করে অপর্ণা জানিয়ে দেয়, সে ঠিকই বলেছে। পড়তে চাওয়ায় কমলিকাকে তাদের বাবা গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে একটা গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কোনওমতে এক প্রতিবেশী তার বোনকে রক্ষা করে।

আলিপুরদুয়ারের বাবুরহাট কদমতলা জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষক রাকেশ দে আর দেরি করেননি। বিডিও-র দফতরে জানিয়ে দেন। সেখান থেকে খবর পায় চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি। তারা কমলিকার বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন। কমলিকার বোন শ্যামলিকা পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। তাকেও বাবার বেধড়ক মারধর মাঝে মধ্যেই সহ্য করতে হয় বলে অভিযোগ। তাই বৃহস্পতিবার দুই বোনকেই তাদের বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছে কামসিং এলাকায় তাদের ঠাকুর্দার বাড়িতে। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে সেই বাড়িতেই থাকে একই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী অপর্ণা।

মা মারা যাওয়ার পরে তাদের বাবা দিলীপ মুন্ডা আবার বিয়ে করেন। আরও তিনটি সন্তান হয় তাঁর। কিন্তু আগের পক্ষের মেয়েরা যত বড় হচ্ছিল, তত তাদের উপরে অত্যাচার বাড়ে বলে অভিযোগ। অপর্ণাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কামসিংয়ে। শ্যামলিকা থাকে তাদের এক আত্মীয়ের বাড়ি। সম্প্রতি তাকেও অবশ্য বাড়িতে এনে রেখেছিলেন দিলীপ। তাকেও যথেচ্ছ মারধর করতেন বলে তিন বোনেরই দাবি।

আরও পড়ুন: রাতারাতি কোটিপতি একটা পুরো গ্রাম!

কেন মারধর করতেন দিলীপ? অপর্ণা, কমলিকা জানায়, তাদের বাবা চাইতেন পড়াশোনা না করে তারা ঘরের কাজ করুক। অপর্ণার কথায়, ‘‘বোনকে বাসন মাজানো থেকে শুরু করে সব ধরনের বাড়ির কাজ করানো হত। সে সব করেই ও স্কুলে যেত। তার পরেও ওকে বাবা লাঠি দিয়ে মারত।’’ স্কুল থেকেও একই রকম কথা শোনা গিয়েছে। বাবা-মা নিরক্ষর। বাড়িতে পড়াশোনার পাট একরকম নেই বলা চলে। তার মধ্যেই অপর্ণা ও কমলিকা পড়াশোনায় বেশ ভাল। রাকেশ বলেন, ‘‘কমলিকার হাতের লেখাও যথেষ্ট ভাল। প়ড়াশোনা করতে বাধা দেওয়াটা বিরাট অপরাধ।’’

দিলীপের দাবি, ‘‘সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমি কোনও অত্যাচার করিনি। পড়াশোনা করতে চাইলে করুক।’’ তাঁর স্ত্রী জাম্বি মুন্ডার বক্তব্য, ‘‘আমার স্বামী মেয়েদের গায়ে হাত দেন না। বাড়ির কাজ সব মেয়েই করে। তার জন্যও জুলুম করার অভিযোগও মিথ্যা।’’

তবে বাবার হাতে মার খেয়েই যে কমলিকা সাত দিন স্কুলে আসেনি, সেই দাবি থেকে নড়ছে না দুই বোন। অপর্ণার কথায়, ‘‘বোন স্কুলে আসেনি বলে খোঁজ করতে গিয়ে শুনেছি কমলিকাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল বাবা।’’ রাকেশও বলেন, ‘‘ভয়ঙ্কর কিছু নিশ্চয়ই ঘটেছে। না হলে সাত দিন ধরে স্কুল কামাই করত না কমলিকা।’’ বিডিও নরবু ছেওয়াং শেরপাও এ দিন স্কুলে যান।

তিন বোনকে এখন দেখাশোনা করবে কে? প্রশাসন জানিয়েছে, তিন জনকেই কোনও হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে তার আগে পর্যন্ত তারা বাবুরহাটে বাবার বাড়ি ফিরতে চায় না। কামসিংয়ে ঠাকুর্দার কাছেই থাকবে।

Father Daughter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy