প্রতিশ্রুতি মতো বৈঠক হল। তবে রফাসূত্র বেরলো না। বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবিতে তাই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন খড়্গপুর আইআইটির পড়ুয়ারা। কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, এই আন্দোলন অন্যায্য ও শৃঙ্খলা-বিরোধী।
ফি বৃদ্ধি নিয়ে বৈঠকের আশ্বাসে বুধবার রাতেই সাময়িক ভাবে অবস্থান-বিক্ষোভ তুলে নিয়েছিলেন পড়ুয়ারা। বৃহস্পতিবার সকালে সেই বৈঠকই হয় খড়্গপুর আইআইটির প্রশাসনিক ভবনে। ছিলেন অধিকর্তা পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী-সহ প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্তারা। তবে পড়ুয়াদের কোনও প্রতিনিধি সেখানে ছিলেন না। বৈঠক শেষে কর্তৃপক্ষের অবস্থান সরাসরি ছাত্রদের জানানো হয়নি বলেও অভিযোগ। ছাত্র সংগঠন ‘জিমখানা’র সহ-সভাপতি শোভন পানিগ্রাহীর মাধ্যমে আন্দোলনরত পড়ুয়ারা শুধু জানতে পারেন, বর্ধিত ফি জমার সময়ে (২৬ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি) কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। ফি কমানো নিয়েও কোনও উচ্চবাচ্য করেননি কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে দাবি আদায়ে তাই আন্দোলনকেই হাতিয়ার করছেন এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা।
মেটিরিয়্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এমটেকের ছাত্র অনির্বাণ গোস্বামী, অ্যাডভান্সড্ টেকনোলজির গবেষক ছাত্র অরিন্দম রায় বলেন, ‘‘আমরা সন্ধে পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম। কারণ, কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন, তাঁদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। কিন্তু তা না হওয়ায় ফের অবস্থান-বিক্ষোভেরই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তাঁরা অবস্থানে বসবেন বলে জানিয়েছেন। এমনকী অনশনেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
খড়্গপুর আইআইটির অধিকর্তা পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী এ দিন প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বাধ্য হয়েই এই ফি বৃদ্ধি। তাঁর দাবি, গত দু’বছর ধরে হস্টেলের খাতে ১২ কোটি টাকা দিয়েও খরচ সামলানো যাচ্ছে না। তাই ছাত্রদের থেকে বাড়তি ফি নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। খাবারের গুণগত মান নিয়ে ওঠা অভিযোগও নস্যাৎ করেছেন অধিকর্তা। একই সঙ্গে পার্থপ্রতিমবাবুর মত, ‘‘এই আন্দোলন অন্যায্য ও শৃঙ্খলা-বিরোধী। ছাত্রদের সব রকম ভাবে বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’ ছাত্র আন্দোলনের জেরে গবেষক পড়ুয়াদের পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে সেমেস্টার শেষে বিটেক ও এমটেক পড়ুয়াদের এখন ছুটি চলছে।
প্রতি সেমেস্টারে ছাত্রপিছু ‘হল (হস্টেল) ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ ফি ৭,৫৫০ টাকা বাড়ানো হবে বলে গত ৭ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন আইআইটি কর্তৃপক্ষ। এর ফলে, গবেষক ও এমটেক পড়ুয়াদের প্রতি সেমেস্টারের খরচ প্রায় ২৯ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হবে প্রায় ৩৭ হাজার টাকা। এক ধাক্কায় এই ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তেই চটেছেন পড়ুয়ারা। ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার থেকে আন্দোলন শুরু করেন এমটেক ও গবেষক পড়ুয়ারা। রাতভর আইআইটির অধিকর্তা পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী, রেজিস্ট্রার প্রদীপ পাইন-সহ কয়েকজন অধ্যাপককে ঘেরাও করে রাখা হয় বলেও অভিযোগ। আগামী জানুয়ারি থেকে বর্ধিত ফি কার্যকর হওয়ার কথা। তাই ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারির মধ্যে ফি জমার কথা বলেছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পড়ুয়ারা ওই বাড়তি ফি দিতে রাজি নন।
বুধবার রাত পর্যন্ত ৩৫ ঘন্টা ছাত্রদের অবস্থান-বিক্ষোভ চলার পরে আন্দোলনরত ৮ জন পড়ুয়া ও জিমখানার সহ-সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন আইআইটির তিন ডিন। সেখানে পড়ুয়ারা নিজেদের দাবি জানান। তবে সমস্যার সুরাহা না হওয়ায় প্রশাসনিক আলোচনার আশ্বাস দেন তিনজন ডিন। এ দিন সেই বৈঠক শেষেও জট কাটল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy