চলছে ইলিশের নিলাম।
সাগর উজিয়ে উজিয়ে ইলিশের বান এল দিঘা মোহনায়। শনিবার ভোর রাত থেকে মরসুমের শুরুতেই ট্রলার ভিড়তে শুরু করেছে মোহনায়। সাগর ফুঁড়ে আনা সমুদ্রের রুপোলি ফসলে ভর্তি সেই ট্রলার, হাসি চওড়া করে দিয়েছে মৎস্যজীবীদের। আর এমন অফুরন্ত জোগান, ভোজনরসিক বাঙালির ইলিশ-সুখের খরা কাটাবে বলেই আশা মৎস্যজীবীদের।
মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, ভোররাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় দেড় থেকে দু’টন ইলিশ উঠেছে দিঘা মোহনায়। শনিবার সন্ধ্যায় আরও বেশ কিছু ইলিশ বোঝাই ট্রলার ঢোকার কথা। তখন ইলিশের পরিমাণ আরও বাড়বে বলেই মনে করেন দিঘা ফিসারমেন অ্যান্ড ফিস ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সচিব শ্যামমসুন্দর দাস। শ্যামসুন্দরবাবুর কথায়, “বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় প্রায় দশ টন ইলিশ দিঘা মোহনায় ঢুকেছে। তবে সমুদ্রে এখনও বারোশোর বেশি ট্রলার রয়েছে। সেগুলো মোহনায় এলে এই পরিমাণ আরও বাড়বে।’’ জানা গিয়েছে, শনিবার মোহনায় আসা ইলিশের ওজন ছিল আটশো গ্রাম থেকে দেড় কিলোগ্রামের মধ্যে। হাজার টাকা কিলো দরে এ দিন বিকিয়েছে ইলিশ।
মাঝ-সমুদ্র থেকে মাঝি আর জেলেরা ফোনে বলেছিলেন একটাই কথা, ‘‘এক ট্রলার ইলিশ নিয়ে আসছি’- এই খবর আসতেই চরম ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় মোহনা জুড়ে। বিভিন্ন ট্রলার মালিক আর আড়তদাররাও হাজির হয়ে যান উজান বেয়ে আসা ইলিশের নিলাম ডাকার জন্য। শনিবার ভোর রাত থেকে ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছিল। সঙ্গে হাল্কা হাওয়া। তার মাঝেই মোহনায় ভিড়তে শুরু করে ইলিশ বোঝাই ট্রলার। এত পরিমাণে ইলিশ পাবেন ভাবেননি ট্রলার মালিক, জেলেরাও। রমেশ বর্মন, শম্ভু দাস, লক্ষণ মাইতির কথায়, ‘‘প্রথম থেকে মনে হচ্ছিল ভাল ইলিশ পাব। তবে পরিমাণটা এত বেশি পাব, সত্যিই আশা করিনি।’’
প্রতি বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত ৪৭ দিন সমুদ্রে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তারপর ভরা মরসুমেও ইলিশ পাওয়ার জন্য হাপিত্যেশ করতেন মৎস্যজীবীরা। চলতি বছরে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১ দিনে। আর এই সময়সীমা বাড়ার ফলেই মাছের জোগান বেড়েছে বলে মত মৎস্যজীবীদের। দিঘা উপকূল থেকে ৪০ থেকে ৫০ নটিক্যাল মাইল গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ শিকার করে উপকূলের মৎস্য ট্রলারগুলি। এবার উপকূল থেকে মাত্র ১৫ থেকে ২০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ভালই ইলিশ মিলেছে। শুধু ইলিশই নয়, পমফ্রেট, ভোলা-সহ অন্যান্য মাছও প্রচুর উঠেছে।ই ট্রলার ভিড়তেই শনিবার ভোর রাত থেকেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চালু হয়ে গিয়েছে মাছের বাজার। ইলিশের ওজন অনুযায়ী চড়ছে দামও। নিলামের পর বরফ দিয়ে লরি বোঝাই হয়ে ইলিশ চলে যাচ্ছে হাওড়া, শিয়ালদহ, দুর্গাপুর, আসানসোল-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে।
সুযোগ ছাড়ছেন না পর্যটকরাও। ঘুরতে এসে ইলিশ ঝুলিয়ে হোটেলের পথে বিজয়গড়ের তাপস মুখোপাধ্যায়, মালবিকা দাসরা। মাথার ওপর তখন ইলশে গুঁড়ি। বাঙালির মৎস্যপুরাণে সমাপতন বোধহয় এভাবেই হয়!.
সোহম গুহর তোলা ছবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy