Advertisement
E-Paper

Rampurhat Clash: খুন করার পরই কি দগ্ধ? আগুনের ছাপ খুলে দিতে পারে বগটুই-কাণ্ডের জট

কলকাতা পুলিশের এক ফরেন্সিক আধিকারিক জানান, এমন যে কোনও ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রথমেই আগুনের ‘এপিসেন্টার’ খুঁজে বার করতে হয়।

নীলোৎপল বিশ্বাস, চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২২ ০৭:০৯
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

মানিকতলায় এক বৃদ্ধাকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল তাঁরই পুত্রবধূর বিরুদ্ধে। ঘটনাপ্রবাহ দেখে প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরাও সেটি খুন বলেই ভেবেছিলেন। কিন্তু কলকাতা পুলিশের ফরেন্সিক আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই দ্রুত পট পরিবর্তন হয়। যে ঘর থেকে বৃদ্ধার দেহ উদ্ধার হয়, তার দেওয়াল ও সিলিংয়ে থাকা আগুনের দাগের উচ্চতা দেখেই সেটি খুন, না কি নিছক আত্মহত্যা— বলে দিয়েছিলেন তাঁরা।

সে সময়ে কলকাতা পুলিশের ফরেন্সিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক বললেন, ‘‘কাউকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হলে তিনি অবশ্যই বাঁচার চেষ্টা করবেন। ছুটে পালানোর জন্য উঠে দাঁড়াবেন। কিন্তু ওই বৃদ্ধার দেহ উদ্ধার হয়েছিল শুয়ে থাকা অবস্থায়। যদি ধরা হয়, জ্বলন্ত অবস্থায় প্রাণশক্তি যখন শেষ হয়ে এসেছে, তখন তিনি পড়ে গিয়েছেন এবং সেই অবস্থাতেই তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে, তা হলেও সিলিংয়ে বা দেওয়ালে খানিকটা উচ্চতা পর্যন্ত আগুনে পোড়ার কালো দাগ থাকার কথা। বৃদ্ধার উচ্চতা এবং ঘরের উচ্চতা মেপে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল যে, বৃদ্ধা উঠেই দাঁড়াননি! পুড়িয়ে মারার চেষ্টা হলে যা কখনওই সম্ভব নয়। সব রকমের তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখা গিয়েছিল, শুয়ে নিজেই গায়ে আগুন দিয়েছিলেন বৃদ্ধা।’’

ফরেন্সিক আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, যে কোনও ক্ষেত্রেই অগ্নিকাণ্ডের স্থল থেকে নমুনা সংগ্রহের পরে নিশ্চিত করে বলে দেওয়া সম্ভব, কী ভাবে আগুন লেগেছে এবং কোন দিক থেকে কোন দিকে আগুন গিয়েছে। রামপুরহাটের শোরগোল ফেলা ঘটনাতেও আট জনের পুড়ে মৃত্যুতে আগুন বাইরে থেকেই লাগানো হয়েছিল কি না, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করে বলে দেওয়া সম্ভব বলে জানাচ্ছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা।

কলকাতা পুলিশের এক ফরেন্সিক আধিকারিক জানান, এমন যে কোনও ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রথমেই আগুনের ‘এপিসেন্টার’ খুঁজে বার করতে হয়। সেই নির্দিষ্ট জায়গার নমুনা পরীক্ষা করলেই বোঝা যায়, আগুন লাগাতে কী ধরনের দাহ্য বস্তু ব্যবহার হয়েছে। এর পরের কাজ— আগুন কোন দিক থেকে কোন দিকে গিয়েছে এবং সেই সময়ে বাতাসের অভিমুখ ও গতিবেগ কেমন ছিল, তা অনুমান করা। এমন কয়েকটি কাজ করতে পারলেই আগুন লাগার কারণ, উৎস এবং কী ভাবে তা ছড়িয়েছে— গুরুত্বপূর্ণ এই তিন প্রশ্নের উত্তরও মিলে যায়। প্রতি ফ্রেম ধরে ধরে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হয়।

এর পরে শুরু হয় ঘরের ভিতরের পোড়া অংশের নমুনা সংগ্রহ। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘আগুন ঘরের দেওয়ালে যে ছাপ রেখে যায়, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেখতে হয়, আগুন লাগার পরে ঘরের ভিতরে কোন পথে অক্সিজেন পৌঁছেছে। এ ক্ষেত্রে যেমন ঘরের ভিতরে অনেকে ছিলেন বলে অনুমান করা হচ্ছে, তাই দেখতে হবে তাঁরা জানলা-দরজা খোলার বা ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন কি না! যদি করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে ধোঁয়ার বহির্গমনের ধরনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভাঙা অংশ দিয়ে যেমন ধোঁয়া বেরোবে, তেমনই অক্সিজেনও ওই পথেই ঘরে ঢুকবে।’’ রাজ্য পুলিশের এক ফরেন্সিক আধিকারিক বলেন, ‘‘ময়না-তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট আসার আগে এ ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। মৃতদেহ উদ্ধারের সময়ে দেখা প্রয়োজন, হাতের বক্সিং প্যাটার্ন ছিল কি না। কারণ, ওই ভাবে পোড়া ঘরের মধ্যে থাকলে ফুসফুসে কার্বন মনোক্সাইড পৌঁছনোর কথা। সে সময়ে ছুটে পালাতে গিয়ে দু’হাতে কোনও কিছুকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করেন যে কেউ। তখনই হাতের মুদ্রা ওই রকম বক্সিং প্যাটার্ন ধারণ করে। বাইরে থেকে কাউকে মেরে এনে ঘরের মধ্যে ফেলে জ্বালিয়ে দিলে সেটা থাকে না।’’

এ ক্ষেত্রে কী হয়েছিল? রাজ্য পুলিশের কোনও কর্তাই এখনও পর্যন্ত এ প্রসঙ্গে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাইছেন না। রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে তদন্তে যাওয়া এক ফরেন্সিক আধিকারিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) শুধু বলেছেন, ‘‘ঘটনাস্থলে পেট্রোলিয়াম মিলেছে। একের পর এক বাড়িতে আগুন বাইরে থেকেই লাগানো হয়েছে বলে এক রকম নিশ্চিত। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে পোড়া কয়েকটি বাড়ির জানলার গ্রিল লোহা কাটার যন্ত্র দিয়ে কাটার চেষ্টা করা হয়েছে।’’ ওই তদন্তকারীর দাবি, ওই পথে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়ে তার পরে বাড়িতে আগুন লাগানো হয়ে থাকতে পারে।

Rampurhat Death Violence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy