Advertisement
E-Paper

নদী ও নালার অপমৃত্যুতেই দাপট বন্যার

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েক বছর ধরে অভিযোগ করে আসছেন, মাইথন, পাঞ্চেত জলাধারে জলধারণের ক্ষমতা কমে গিয়েছে। ফলে ভারী বর্ষায় অতিরিক্ত জল ছাড়ছে ডিভিসি। সেই জলেই প্লাবিত হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশ। নদী-বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তির কিছুটা সারবত্তা রয়েছে।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩২

ওরাই ছিল বন্যার জল বার করে দেওয়ার অবলম্বন। বর্ষার বাড়তি জলের নির্ভরযোগ্য বাহন।

কিন্তু যত্নের অভাবে কার্যত মরে গিয়েছে নিম্ন দামোদর অববাহিকার বহু ছোট নদী, খাল, নালা। ফি-বছর ভারী বর্ষায় বর্ধমান, হুগলি, হাওড়ার মতো বহু জেলা যে-ভাবে জলবন্দি হয়ে পড়ছে, তাতে ওই সব নদীনালার মরে যাওয়াকেই মূলত দায়ী করছেন নদী-বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা বলছেন, ওই সব নদীকে তাদের আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনতে না-পারলে বন্যার দাপট আরও বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েক বছর ধরে অভিযোগ করে আসছেন, মাইথন, পাঞ্চেত জলাধারে জলধারণের ক্ষমতা কমে গিয়েছে। ফলে ভারী বর্ষায় অতিরিক্ত জল ছাড়ছে ডিভিসি। সেই জলেই প্লাবিত হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশ। নদী-বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তির কিছুটা সারবত্তা রয়েছে। তবে জল ছাড়া হলেও ওই সব নদীনালাকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখতে পারলে দক্ষিণবঙ্গবাসীর দুর্ভোগ কমত।

নদী-বিশেষজ্ঞ তথা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের মতে, বন্যা স্বাভাবিক ব্যাপার। আগে বন্যার জল দিন দুয়েকের মধ্যে কানা দামোদর, মজা দামোদর, বেহুলা, বাঁকার মতো ছোট নদী দিয়ে বেরিয়ে যেত। উপরন্তু জলের সঙ্গে প্রচুর পলি এসে চাষের খেতে থিতিয়ে যেত। তাতে জমির উর্বরতা বা়ড়ত। বিশেষ করে দামোদর ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে বয়ে আসা খনিজসমৃদ্ধ পলিই নিম্ন দামোদর এলাকার উর্বরতার কারণ। ফি-বছর বন্যার পরে দারুণ ফসল হতো। কিন্তু এখন বন্যার জল দিনের পর দিন আটকে থাকছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জনজীবন, নষ্ট হচ্ছে শস্যখেত। কমছে পলির পরিমাণও।

কেন? ‘‘দামোদরের উপরকার বাঁধে জল আটকে রাখায় জলাধারের ভিতরে পলি থিতিয়ে পড়ছে। ফলে লকগেট খুললে বেরোচ্ছে স্বচ্ছ জল! তাই বন্যার পরেও মাটির উর্বরতা তেমন বাড়ছে না,’’ বলছেন কল্যাণবাবু।

রাজ্যের অভিযোগের জবাবে ডিভিসি-কর্তৃপক্ষের পাল্টা বক্তব্য, নিম্ন দামোদর উপত্যকায় নদী-নালা-খালবিলের জলধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলেই সামান্য জল ছাড়লেই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

কেন হারিয়ে গেল এত নদীনালা?

পরিবেশকর্মী, সেচ দফতর এবং ডিভিসি সূত্রের বক্তব্য, সংস্কারের অভাবে মজে গিয়েছে বহু নদী। কোথাও কোথাও চরের উপরে শুরু হয়ে গিয়েছে কৃষিকাজ, বসতি। কোথাও কার্যত নদীর একাংশ দখল হয়ে গিয়েছে! নালাগুলির অবস্থাও তথৈবচ। সযত্ন লালনের বদলে অবহেলা-উপেক্ষায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কৌলীন্য হারিয়ে সেগুলি হয়ে গিয়েছে নিকাশি নালা। বর্জ্য ফেলে ফেলে অনেক নালা বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘‘নিম্ন দামোদর উপত্যকার নদীনালাগুলি এখন দেড় লক্ষ কিউসেক জলও ধরে রাখতে পারছে না। ফলে রূপনারায়ণ বা হুগলি নদীতে জল পড়ার আগেই নিম্ন দামোদর উপত্যকার আশপাশের এলাকা জলমগ্ন হয়ে যাচ্ছে,’’ বললেন ডিভিসি-র এক কর্তা।

এখন উপায় কী? বিভিন্ন নদী-নালা-খালের স্বাস্থ্য ফেরালেই সুরাহা হতে পারে বলে কল্যাণবাবুর অভিমত। একই সুর সেচ দফতরের অনেকের। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ইতিমধ্যেই মুণ্ডেশ্বরী, কানা দামোদর, মজা দামোদর-সহ বেশ কিছু ছোট নদী ও খাল সংস্কার করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এত নদী সংস্কারের সাধ্য রাজ্য সরকারের নেই। কেন্দ্র এ ব্যাপারে কোনও সাহায্য করছে না। তা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আরও প্রচুর ছোট নদী ও খাল সংস্কারের জন্য রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, বিশ্বব্যাঙ্ক-সহ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার সাহায্যেও এই সংস্কারের কাজ করতে হচ্ছে।a

River Pond Dry Flood বন্যা নদীনালা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy