Advertisement
০৩ মে ২০২৪
প্রশ্নের মুখে খসড়া বিধি
Dengue

পরীক্ষা ছাড়াই ছাড়পত্র পাচ্ছে বিদেশি ওষুধ

ওষুধবিজ্ঞান বা ফার্মাকোলজির চিকিৎসক এবং রোগী-অধিকার আন্দোলনে যুক্ত অনেকেরই অভিযোগ, আন্তর্জাতিক ওষুধ সংস্থাগুলিকে ভারতের বাজারে মুনাফা লোটার সুযোগ দিতে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৪৭
Share: Save:

পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রয়োগ-পরীক্ষার পরে কোনও ওষুধকে ছাড়পত্র দেওয়াটাই ঔষধবিজ্ঞানের আদিকথা। অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের সৌজন্যে এই ‘ট্রায়াল’ বা পরীক্ষার প্রক্রিয়া এড়িয়ে সরাসরি ভারতের বাজারে ঢুকে পড়ার রাস্তা পেতে চলেছে একাধিক বিদেশি ওষুধ। নিরাময়ের বদলে ওই সব ওষুধে রোগীর হিতে বিপরীত হতে পারে বলে শুরু হয়েছে বিতর্কও।

কেন্দ্র উদ্যোগী হয়ে এই বিষয়ে একটি খসড়া বিধি তৈরি করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আইন মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়েছে। অনুমোদন পাওয়াটা যে এখন নিছক সময়ের অপেক্ষা, তা-ও নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং ড্রাগ কন্ট্রোলের কর্তারা। তাঁরা যুক্তি দেখাচ্ছেন, ট্রায়ালের প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং সময়সাপেক্ষ। সেই জন্যই নতুন বিধি তৈরি করা হচ্ছে। এতে দেশের মুমূর্ষু রোগীরা চটজলদি উন্নত মানের ওষুধ হাতে পেয়ে যাবেন। রোগের সঙ্গে লড়াই করতে পারবেন।

কিন্তু রোগী-স্বার্থেই ট্রায়াল বা পরীক্ষার প্রক্রিয়াকে কোনও ভাবে উপেক্ষা করা যায় না বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। ওষুধবিজ্ঞান বা ফার্মাকোলজির চিকিৎসক এবং রোগী-অধিকার আন্দোলনে যুক্ত অনেকেরই অভিযোগ, আন্তর্জাতিক ওষুধ সংস্থাগুলিকে ভারতের বাজারে মুনাফা লোটার সুযোগ দিতে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

পরীক্ষাকে উপেক্ষা কেন?

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের খবর, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জাপানে ইতিমধ্যে অনুমোদিত এবং অন্তত দু’বছর সেখানকার বাজারে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছে, এমন ওষুধ ভারতে বিক্রি করতে নতুন করে ট্রায়ালের প্রয়োজন হবে না। সরাসরি সেগুলো বিক্রি করা যাবে। মূলত যক্ষ্মা, হেপাটাইটিস, এইচআইভি, ক্যানসার, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো রোগের ওষুধকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

কিন্তু রোগীর সুবিধার কথা বলে এই ‘তাড়াহুড়ো’ করতে গিয়ে আখেরে যদি রোগীরই ক্ষতি হয়ে যায়, তা হলে কী হবে? বড় হয়ে উঠছে এই প্রশ্নটি। ফার্মাকোলজি-বিশেষজ্ঞ অনেক চিকিৎসক জানাচ্ছেন, প্রতিটি দেশের জনগোষ্ঠীর জিন ও জীবনযাত্রার ধরন আলাদা। তাই একটি দেশে কোনও ওষুধ ভাল ফল দিলেও অন্য দেশে ঠিক তার উল্টো ফল হতে পারে। ফার্মাকোলজিস্ট স্বপনকুমার জানা বলেন, ‘‘ট্রায়াল তুলে দিলে কেন্দ্র খুব অন্যায় করবে। বিনা পরীক্ষায় ওষুধ প্রয়োগ করলে রোগীদের নানান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগতে হতে পারে। ষাটের দশকে ইউরোপে পরীক্ষা ছাড়াই গর্ভবতীদের থ্যালিডোমাইড ওষুধ দেওয়ায় অসংখ্য শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েছিল বিকলাঙ্গ হয়ে।’’

এই ধরনের ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষাকে উপেক্ষা কেন?

‘‘ড্রাগ-বায়োটেকনোলজি-স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তা, চিকিৎসক, গবেষক সকলে মিলে ভাল-মন্দ সব দিক খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে,’’ বলছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব রাকেশকুমার বৎস। আর ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল জ্ঞানেন্দ্র সিংহ জানাচ্ছেন, পরীক্ষা না-হলেও রোগীর শরীরে ওই সব ওষুধের কী প্রভাব পড়ছে, আলাদা ভাবে তার উপরে নজরদারি চালাবে কেন্দ্রের অধীন ফার্মাকোভিজিলেন্স কমিটিগুলি। কিন্তু অধিকাংশ ফার্মাকোলজিস্টের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় ফার্মাকোভিজিলেন্স কমিটিগুলির ভূমিকা খুবই দুর্বল। ফলে তারা কতটা নজরদারি চালাবে, তাতে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

‘‘ওষুধ পরীক্ষার কড়াকড়ির চেয়ে মরণাপন্ন রোগীর ওষুধ পাওয়ার অধিকারকে এখন সব দেশই অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং ট্রায়াল-বিধি সরল করছে। ওষুধের কার্যকারিতার বিষয়টিও আপেক্ষিক। দেশভেদে ওষুধের ফলাফল খুব একটা বদলায় না,’’ বলছেন পূর্বাঞ্চলের অন্যতম ফার্মাকোভিজিলেন্স কমিটির দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক শান্তনু ত্রিপাঠী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE