Advertisement
০৫ মে ২০২৪

লাঞ্চে কি বুনো শুয়োর! নজরে বাঘের ডায়েট

লালগড়ের মেলখেরিয়ার জঙ্গলে উঁকি দিয়ে আড়ালে চলে যাওয়া এই বাঘের খাদ্যতালিকা নিয়ে ধন্দে বন দফতরও। তবে বনকর্তাদের একাংশের মতে, বুনো শুয়োরের মাংসেই হয়তো পেট ভরাচ্ছে বাঘবাবাজি।

লালগড়ে ধরা পড়ে এই হানাদার। ফাইল চিত্র।

লালগড়ে ধরা পড়ে এই হানাদার। ফাইল চিত্র।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৮ ০৩:৪৫
Share: Save:

বাঘ খাচ্ছেটা কী!

পাক্কা ১০ দিন আগে এক বার মাত্র তার ছবি ক্যামেরা-বন্দি হয়েছে। লালগড়ের জঙ্গলে উঁকি মারা সেই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার তার পর থেকে ঘাপটি মেরেই রয়েছে। খাঁচা পেতে, ড্রোন উড়িয়েও তার নাগাল মেলেনি। অথচ এ ক’দিনে নতুন করে গরু-বাছুর-ছাগল জখম বা নিখোঁজ হওয়ার কোনও খবর নেই। তা হলে!

লালগড়ের মেলখেরিয়ার জঙ্গলে উঁকি দিয়ে আড়ালে চলে যাওয়া এই বাঘের খাদ্যতালিকা নিয়ে ধন্দে বন দফতরও। তবে বনকর্তাদের একাংশের মতে, বুনো শুয়োরের মাংসেই হয়তো পেট ভরাচ্ছে বাঘবাবাজি। তাই আর গৃহস্থের গোয়ালের দিকে পা বাড়াচ্ছে না।

ডায়েট-চার্ট

কোন পশুতে বাঘের ক’দিন চলে

• গরু: ৬-৭ দিন

• বাছুর: ২-৩ দিন

• ছাগল: ১ দিন

• বুনো শুয়োর: ১-২ দিন

• হায়েনা: ১-২ দিন

• বনবিড়াল: ১ দিন

• হরিণ: ১-২ দিন

• খরগোশ: একবেলা

(বন দফতর সূত্রে প্রাপ্ত)

অথচ ছবি ক্যামেরাবন্দি হওয়ার আগে লালগড়ে সাতটি গরু মারা গিয়েছিল। তিনটি মারাত্মক জখম হয়েছিল। তখনই বনকর্তারা বুঝে যান, জঙ্গলে নয়া হানাদার এসেছে। হানাদারের খোঁজে ক্যামেরার ফাঁদ পাতা হয় লালগড়ের জঙ্গলে। পরে সেই ক্যামেরাতেই প্রথম ধরা পড়ে বাঘের উপস্থিতি। মেদিনীপুরের এক বনকর্তার কথায়, “আমরা নিশ্চিত, বাঘটিই ওই গরুগুলো মেরেছে। তার পর থেকে আর গরু-ছাগল নিখোঁজ বা জখমের খবর নেই।”

তবে বনকর্তারা নিশ্চিত, খাবারের খোঁজেই নতুন নতুন জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই বাঘ। লালগড়ের মেলখেরিয়া, আমলিয়া থেকে মেদিনীপুর সদর ব্লকের ধেড়ুয়া, চাঁদড়া, কখনও আবার মেদিনীপুর শহরের অদূরে মুড়াকাটায় বাঘের পায়ের ছাপ মিলেছে। রবিবার গোয়ালতোড়েও বাঘ দেখা গিয়েছে এবং একজন বাঘের কামড় খেয়েছে বলে দাবি। বনকর্মীরা মানছেন, রোজ খুব কম করে হলেও ১৮-২০ কিলোমিটার পথ ঘুরছে বাঘটি।

বাঘের এত ঘোরাঘুরি কি খাবারের খোঁজে? মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা মানছেন, “একদম তা-ই। খাবার পাচ্ছে না বলেই এ-দিক ও-দিক ঘোরাঘুরি।” তা হলে গরু-ছাগল খাচ্ছে না কেন? রবীন্দ্রনাথবাবুর জবাব, “প্রচুর বুনো শুয়োর তো রয়েছে।” বন দফতরের অন্য এক কর্তা আবার মনে করিয়ে দিলেন, বুনো শুয়োরের পাশাপাশি হায়েনা, হুড়াল (হায়েনা জাতীয় প্রাণী), হরিণ, খরগোশও প্রচুর রয়েছে এ তল্লাটের জঙ্গলে। এ সবই বাঘের খাদ্য।

বন দফতর সূত্রে খবর, একটা গরু খেলে যেমন বাঘের সাত দিন চলে যায়, তেমন একটা বুনো শুয়োরে চলবে বড়জোর দু’দিন। মেদিনীপুরের এক বনকর্তার কথায়, “রোজই যে খেতে হবে তার কোনও মানে নেই। একদিন ভারী কিছু খেলে পরের দিন না খেলেও চলে।” খরগোশ খেলে কতক্ষণ চলে? ওই বনকর্তার জবাব, “ওটা জলখাবার!”

বনকর্তাদের আশা, ক’দিনের মধ্যে বাঘমামার খাবারে টান পড়বে। তখন সে নিজেই লোকালয়ে ঢোকার চেষ্টা করবে। সেই বিপদ এড়াতে আগেভাগে বাঘকে খাঁচাবন্দি করতে সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছে বন দফতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE