Advertisement
২১ মে ২০২৪

ফের খতম ‘গুন্ডা’ হাতি, পদ্ধতি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

তিন সঙ্গীর একটিকে ধরা হয়েছে। আর একটিকে গুলিতে নিকেশ করা হয়েছে। বাঁকুড়ার জঙ্গল দাপিয়ে বেড়ানো তিন নম্বর ‘গুন্ডা’-র নিয়তি নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন উঠেছিল আগেই। শেষ অবধি গুলিতে মরল সে-ও !

গুলিবিদ্ধ সেই হাতির দেহ। অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।

গুলিবিদ্ধ সেই হাতির দেহ। অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বেলিয়াতোড় শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৮
Share: Save:

তিন সঙ্গীর একটিকে ধরা হয়েছে। আর একটিকে গুলিতে নিকেশ করা হয়েছে। বাঁকুড়ার জঙ্গল দাপিয়ে বেড়ানো তিন নম্বর ‘গুন্ডা’-র নিয়তি নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন উঠেছিল আগেই। শেষ অবধি গুলিতে মরল সে-ও ! রবিবার বেলিয়াতোড়ের জঙ্গলের এই ঘটনায় আগের মতোই বন দফতরের দাবি, ঘুম-গুলিতেও কাবু না হওয়া সেই ‘গুন্ডা’ কর্মীদের উপরে হামলা চালাতে এসেছিল বলে বাধ্য হয়ে তাকে গুলি করতে হয়েছে।

সম্প্রতি জঙ্গলমহল ও উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে বন দফতরের কাজকর্মে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরই ‘দুষ্টু’ হাতিদের ধরার জন্য তৎপরতা শুরু হয়েছে। এবং ঘটনা হল, চলতি মাসেই এই নিয়ে দু-দু’টি দাঁতালকে গুলিতে মেরে ফেলা হল বাঁকুড়ায়। কী ‘দোষ’ করেছিল তারা? বন দফতরের দাবি, লোকালয়ে ঢুকে তারা নাগাড়ে উৎপাত চালাত। ফসল নষ্ট করত। পিষে মেরেও ফেলেছে একাধিক গ্রামবাসীকে। ওই তিন ‘গুন্ডা’র ভয়ে তটস্থ থাকতেন জঙ্গলঘেঁষা গ্রামের মানুষজন।

দফতর সূত্রের খবর, বাঁকুড়ার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাণ্ডব চালানো এই তিন স্থানীয় (রেসিডেন্ট) দাঁতাল হাতিকে হয় ধরে ফেলা, নয়তো গুলি করে মারার লক্ষ্য নিয়েই অভিযানে নামা হয়েছিল। গত ৪ জুলাই রাতে বছর কুড়ির একটি চিহ্নিত ‘গুন্ডা’ হাতিকে ধরতে সফল হয়েছিল বন দফতর। পর দিন আর একটি পূর্ণবয়স্ক গুন্ডা হাতিকে ধরতে গিয়ে তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। বাকি ছিল তিন নম্বর। তার খোঁজে জঙ্গলে তল্লাশি চলছিলই। রবিবার সকালে বেলিয়াতোড় রেঞ্জের শালুকার জঙ্গলে পাঁচটি কুনকি হাতি নিয়ে তিন নম্বর ‘গুন্ডার’ খোঁজে অভিযানে নামেন বন দফতরের ঘুমগুলি বিশেষজ্ঞেরা। ডিএফও (বাঁকুড়া উত্তর) পিনাকি মিত্রের দাবি, এ দিন জঙ্গলের গভীরে হাতিটিকে দেখতে পেয়ে তিনটি ঘুম-গুলি ছোড়া হয়। তাতে কাজ হয়নি। সে বনকর্মীদের দিকে ছুটে আসে। নিরুপায় হয়েই গুলি করে বছর তিরিশেকের হাতিটিকে মারা হয়।

বন দফতর জানিয়েছে, চলতি বছরেই বাঁকুড়া উত্তর রেঞ্জের কাঞ্চনপুর এলাকায় চার গ্রামবাসীকে পিষে বা আছড়ে মেরেছে এই দাঁতাল। হাতি মেরে ফেলা হয়েছে খবর পেয়েই এ দিন আশপাশের গ্রামের শয়ে শয়ে লোক ভিড় জমান জঙ্গলে। বন দফতর ত্রিপল জড়িয়ে রেখেছিল হাতিটির উপর। ভিড় সামলাতে বেলিয়াতোড় থানার পুলিশ ও বনকর্মীরা ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলেন। জঙ্গলেই গর্ত খুঁড়ে চিতা সাজিয়ে হাতিটিকে দাহ করা শুরু হয়।

বনকর্মীরাই কিন্তু জানাচ্ছেন, জঙ্গলে খাদ্যের অভাব হচ্ছে বলেই হাতি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। পুরুলিয়া-বাঁকুড়া-পশ্চিম মেদিনীপুর কিংবা বর্ধমানের একাংশে তাই বছরভর হাতির হানা লেগেই থাকে। ফলে গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘাতও অনিবার্য হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় বন দফতরের অন্দরেই প্রশ্ন, এ ভাবে হাতি মেরে আদৌ কি সংঘাতের সুরাহা করা সম্ভব? এমনকী, বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের অধীনে থাকা ‘প্রজেক্ট এলিফেন্ট’-ও এ ভাবে হাতি মেরে ফেলা নিয়ে উদ্বিগ্ন। ওই প্রজেক্টের এক পদস্থ কর্তার প্রশ্ন, ‘‘বাঁকুড়ার বনাঞ্চল কি রাজ্য বন দফতরের মৃগয়া ক্ষেত্র? ওরা যাচ্ছে হাতি ধরতে। তার পরে গুলি করে মেরে ফেলছে! এটা কোনও পদ্ধতি হতে পারে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant forest department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE