(নিত্যযাত্রী কলেজ ছাত্রী)
বুধবার গোলমালের পরে এ দিন মাতৃভূমি স্পেশ্যালে যাত্রী ছিলেন বেশ কম। ট্রেন আর স্টেশনে অনেক পুলিশও ছিল। পুরুষদের জন্য তিনটি কামরা ছিল এ দিনের মাতৃভূমিতে। সেখানেই উঠেছিলেন পুরষেরা। সব কিছু ঠিক ঠিকই চলছিল, কিন্তু ট্রেন গোবরডাঙা ঢুকতেই বদলে গেল চিত্রটা।
গোবরডাঙায় সেই কামরা বাদ দিয়েও অন্য কামরায় ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করেন কিছু পুরুষ যাত্রী। কিন্তু পুলিশ দেখে তাঁরা সরে যান। কয়েক জনকে বেজায় রেগে যেতে দেখা যায়। কেউ কেউ তখন চিৎকার শুরু করছেন, ‘‘ক’দিন পুলিশ থাকবে? তার পর কে বাঁচাবে?’’ পাল্টা চিৎকার করে ওঠেন দাপুটে কয়েক জন মহিলা। গত কালের ঘটনা মনে করে ভয়ে সিঁটিয়ে যাই আমারা কেউ-কেউ। প্রায় প্রতিটি স্টেশনেই এ রকম বাদানুবাদ টানা চলেছে।
প্রতিদিন একই ঘটনা ঘটে মাতৃভূমিতে। নিত্যযাত্রীরা সেটা জানে। কিছু পুরুষ প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁরা কখনওই মাতৃভূমিতে মেয়েদের কামরায় ওঠেন না। তা নিয়ে এ দিন আলোচনা হচ্ছিল মহিলা যাত্রীদের মধ্যে। সবারই এক মত— বিশেষ কতগুলো ছেলের মুখই প্রতিদিন দেখা যায় মেয়েদের কামরায়।
হাবরা ছাড়তেই একটু ভিড় বাড়ল। শুরু হল গত কালের ঘটনা নিয়ে জটলায়, আলোচনা। সেটা গড়াল নিজেদের মধ্যেই তর্কাতর্কিতে। এ দিন এত পুলিশ দেখে কেউ-কেউ বলছিল, খড়দহের ঘটনার পরে বুধবার যদি এমন পাহারা থাকত, তা হলে হয়তো ওই ঘটনা ঘটত না। কারও মত— দু-তিন দিন এ রকম চলবে। তার পর থেকেই আর কারও দেখা মিলবে না।
চেনামুখ বেশ কয়েক জনের দেখা মেলেনি এ দিন। মধ্যমগ্রাম পেরোতেই এক জনকে ফোন করে জানলাম, গত কাল ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার পর তাঁর পরিবার আর মাতৃভূমিতে পাঠানোর ঝুঁকি নেয়নি। স্বামী তাকে সঙ্গে নিয়ে মধ্যমগ্রাম লোকাল ধরে চলে গিয়েছেন। এমন অনেকেই এ দিন ফের মাতৃভূমিতে ওঠার সাহস দেখায়নি।
গত কালের অবরোধে ছিলেন এমন কয়েক জন এ দিনও ছিলেন ট্রেনে। বলছিলেন, আসলে মহিলারা প্রথম সারিতে থেকে প্রতিবাদ করেছে বলে অনেকের আঁতে লেগেছে। গত কালের পর থেকে এ দিন চেনা মুখগুলোও কেমন যেন অচেনা ঠেকেছে। কালকের মতো কিছু হলে এ দিনও প্রতিবাদের জন্য মানসিক ভাবে তৈরি ছিলেন অনেকে। দমদমে হুড়োহুড়ি করে নামবার সময়ে বাক-বিতণ্ডার মাঝে প্রায় ধাক্কাধাক্কির মতো অবস্থা হল কিছু মহিলা-পুরুষের। ফের ঝগড়া। সবাই যেন তেতে রয়েছেন।
ক্লাস টেন থেকে বনগাঁ-শিয়ালদহ যাতায়াত করি। প্রায়শই একটা অভিজ্ঞতা হত। ট্রেনে উঠে বসতে যাব, দেখি এক কাকু বলছেন, ‘‘এটা আমাদের জায়গা, এ দিকে বসবে না।’’ তাঁরা রুমাল, ব্যাগ, এমনকী দেশলাইয়ের বাক্স দিয়েও জায়গা রেখে দিতেন। দু’তিনটি স্টেশনের পরে তাঁদের বন্ধুরা উঠে সেই জায়গায় বসতেন। কিছু বললেই জবাব ছিল, ‘‘এখানে উঠেছেন কেন? লেডিস কর্ম্পাটমেন্টে যান।’’ এ দিনও মহিলা কামরায় ওঠে সে সব প্রসঙ্গ। মহিলাদের উপস্থিতিতে নিজেদের মধ্যে অশালীন কথাবার্তার প্রসঙ্গও ওঠে।
পুরুষ যাত্রীদের উঠতে বাধা দিচ্ছেন রক্ষীরা। ঠাকুরনগর স্টেশনে
বৃহস্পতিবার মাতৃভূমি স্পেশ্যালে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
আবার অনেকে বলেন, মহিলা কামরায় পুরুষ উঠলে তার প্রতিবাদের একটা ভদ্রসভ্য পদ্ধতি থাকা উচিত। তাঁদের মত— এতটা অসহিষ্ণু হওয়াও ঠিক নয় যে, ট্রেন অবরোধ করে, ইট ছুঁড়ে, স্টেশন ভাঙচুর করে, লোকের সমস্যা করে প্রতিবাদ করতে হবে। এই সব আলোচনার মধ্যে সব চেয়ে সমর্থন মেলে, মাতৃভূমির বদলে প্রতিটি ট্রেনে আবশ্যিক বারোটি কামরা, যার মধ্যে চারটি করে মহিলা কামরার প্রস্তাবে।
সে সব কবে হবে, তা অবশ্য কেউই জানেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy