Advertisement
E-Paper

সোনার সন্ধান মিলল মোগলমারিতে

সাক্ষী ছিল শুধু অরণ্য ও আকাশ। আর সারথি ছন্দক বা ছন্ন আর অশ্ব কন্থক। রাজপুত্র সিদ্ধার্থ নিজের কেশ কেটে আকাশে ছুড়ে দিলেন মুকুটটির সঙ্গে। তারপরে আকাশের দিকে তাকিয়েই বলেছিলেন, যদি তিনি ঠিক পথই বেছে নিয়ে থাকেন, তা হলে ওই কেশ ও মুকুট আর মাটিতে পড়বে না। সে কথা শোনার পরে বাতাসেই ভেসে ছিল সেই কেশ ও মুকুট।

অলখ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৩
মোগলমারি থেকে মিলেছে এই সোনার পাতলা পাতটি। — নিজস্ব চিত্র

মোগলমারি থেকে মিলেছে এই সোনার পাতলা পাতটি। — নিজস্ব চিত্র

সাক্ষী ছিল শুধু অরণ্য ও আকাশ। আর সারথি ছন্দক বা ছন্ন আর অশ্ব কন্থক। রাজপুত্র সিদ্ধার্থ নিজের কেশ কেটে আকাশে ছুড়ে দিলেন মুকুটটির সঙ্গে। তারপরে আকাশের দিকে তাকিয়েই বলেছিলেন, যদি তিনি ঠিক পথই বেছে নিয়ে থাকেন, তা হলে ওই কেশ ও মুকুট আর মাটিতে পড়বে না। সে কথা শোনার পরে বাতাসেই ভেসে ছিল সেই কেশ ও মুকুট।

বুদ্ধের সেই মুকুটের কথার ছাপ পড়ে শিল্পেও। তেমনই একটি মুকুটের সন্ধান মিলল এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের কাছের বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠান মোগলমারি থেকে। বৌদ্ধ সাহিত্য থেকে খোঁজ মেলে গৌতমের আরও একটি মুকুটের কাহিনির। বোধিজ্ঞান পাওয়ার পরে বুদ্ধ স্বর্গে যান। সেখানে দেবতাদের তিনি সেই জ্ঞানের ভাগ দিয়েছিলেন। তারপরে ইন্দ্র এবং বরুণ তাঁকে একটি সোনার মুকুট দিয়েছিল। রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের প্রকাশচন্দ্র মাইতি বলেন, ‘‘সেই কাহিনিরও প্রভাব পড়েছিল প্রতিমা শিল্পে।’’ প্রকাশবাবুর নেতৃত্বেই মোগলমারিতে উৎখনন করা হচ্ছে। সেখানেই মাটির ১. ২৩ মিটার নীচে থেকে সোনার পাতলা একটি পাত পাওয়া গিয়েছে। প্রকাশবাবু বলেন, ‘‘তা বুদ্ধের মুকুটের অংশ হতে পারে।’’ প্রকাশবাবুর কথায়, ‘‘পাল পূর্ববর্তী

যুগে সপ্তম শতকের শেষ, অষ্টম শতকের শুরুতে উত্তর পূর্ব ভারতে এমন মূর্তির প্রচলন ছিল।’’ তবে মুকুট পরা বুদ্ধের পাথরের মূর্তি আগে মিললেও সত্যিই সোনার মুকুট পরা বুদ্ধমূর্তি দেখা যায়নি। অনুমান, বণিকেরা এমন মূর্তি তৈরি করে এই প্রতিষ্ঠানে উৎসর্গ করেছিলেন।

তবে পুরাতত্ত্ববিদদের ধারণা, ওই সোনার ওই পাত বুদ্ধের দেহাবশেষ রাখার পাত্রের অলঙ্করণের অংশও হতে পারে। ওড়িশার ললিতগিরির বৌদ্ধ প্রত্নস্থল থেকে এমন একটি পাত্র পাওয়া গিয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের বৈশালীর বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠানটিতে ছিল একটি সোনার পাতা। তক্ষশীলার শিরকাপ স্তূপ-বিহারের পাত্র থেকে মেলে সোনার অলঙ্কার।

মহাপরিনির্বাণ বৌদ্ধদের কাছে খুবই পবিত্র। দু’টি শাল গাছের মধ্যে ডান দিক ফিরে ডান হাতের উপরে মাথা রেখে শেষ বারের মতো শুয়েছিলেন তথাগত। কুশীনারায় মহাপরিনির্বাণের সেই খবর ছ়ড়িয়ে পড়তেই তাঁর দেহের অধিকার নিয়ে শুরু হয় লড়াই। গঙ্গা অববাহিকা এলাকার রাজ ও প্রজাতন্ত্রগুলির প্রধানেরা এলেন। সবার আগে দেহাস্থি দাবি করেছিলেন মগধের রাজা অজাতশত্রু।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালির অধ্যাপক ঐশ্বর্য বিশ্বাস জানান, ছিলেন বৈশালীর লিচ্ছবিরা, পাবা ও কুশীনারার মল্লরা, রামগ্রামের কোলীয়রাও। ব্রাহ্মণ দ্রোণ তখন বিবাদ মেটাতে প্রস্তাব দেন, বুদ্ধের দেহাবশেষ ভাগ করে নিন সকলে। কয়েকটি পাত্রে তা ভাগ করা হল। সেই পাত্রগুলির উপরেই তৈরি করা হয়েছিল স্তূপ সমূহ। অশোকের সময় সেই স্তূপগুলি ভেঙে তা থেকে বার করে আনা হয় পাত্রে ভরা ওই দেহাবশেষ। সারা ভারতে নানা বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সেগুলি। গিয়েছিল ভারতের বাইরেও। তেমনই একটি পাত্র পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের কাছে‌ মোগলমারির বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠানটিতেও পৌঁছেছিল বলে মনে করছেন পুরাতত্ত্ববিদেরা।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক রূপেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বুদ্ধের দেহাবশেষ রাখার পাত্রে সোনার বস্তুর ব্যবহার প্রচলিত ছিল। অনেক সময় পাত্রের মধ্যে পাওয়া যায়, কখনও পাত্রটির অলঙ্কার হিসেবেও সোনা ব্যবহার করা হয়। মোগলমারি

থেকে যে সোনার প্রত্নবস্তুটি পাওয়া গিয়েছে, সেটি সম্বন্ধে আরও অনুসন্ধান দরকার।’’

gold histrory
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy