পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি) চালুর ব্যাপারে রাজনৈতিক বিরোধিতা চলছেই। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই কর চালুর জন্য প্রাক-প্রশাসনিক সব পদক্ষেপ সেরে রাখছে। সেই লক্ষ্যেই শনিবার বিধানসভায় পেশ হতে চলেছে কর সংশোধনী আইন। যেটি পাশ হলে এক দিকে যেমন জিএসটি চালুর আগে রাজস্ব আদায়ের নতুন কিছু সুযোগ তৈরি হবে, তেমনই জিএসটি চালু হয়ে গেলে বাড়তি ক্ষতিপূরণের টাকা মিলবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে।
কী আছে ওই সংশোধনী আইনে?
অর্থ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এখন দেশি বা বিলিতি মদের উপর আবগারি শুল্ক ছাড়াও বিক্রয়কর নেওয়া হয়। আবগারি শুল্ক যেখানে মদের দামের উপর ৫১%, সেখানে দেশি মদের ক্ষেত্রে বিক্রয়কর নেওয়া হয় ১৫% এবং বিলিতি মদের ক্ষেত্রে ২৭%। কিন্তু জিএসটি চালু হয়ে গেলে আর বিক্রয়কর আদায়ের কোনও ব্যবস্থা থাকবে না। সে ক্ষেত্রে প্রায় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারানোর সম্ভাবনা। সেই কারণে অর্থ দফতর কর আইন সংশোধন করে অতিরিক্ত আবগারি শুল্ক নামে একটি নতুন কর কাঠামো তৈরি করছে। সেই ব্যবস্থায় দেশি মদের উপর ২০% এবং বিলিতি মদের উপর ৫০% অতিরিক্ত আবগারি শুল্ক চাপানোর প্রস্তাব রয়েছে।
এক আবগারি কর্তা বলেন, ‘‘কর্নাটকে এই ধরনের কর আদায় করা হয়। অন্য কয়েকটি রাজ্যেও মদের উপর বিক্রয়করের বদলে অতিরিক্ত শুল্ক চাপানো হয়। সেই ব্যবস্থাই এখানে চালু হচ্ছে।’’ ওই কর্তা আরও জানান, জিএসটি চালু হলে আর বিক্রয়কর থাকবে না। ফলে মদ বিক্রি থেকে রাজ্যের আয় কমে যেতে পারে। বিক্রয়কর বাবদ যে টাকা আদায় হয় সেটা তখন নতুন আইনে অতিরিক্ত আবগারি শুল্ক হিসাবে নেওয়া হবে। আবার বন্ধ হয়ে যাওয়া বিক্রয়করের টাকাটাও জিএসটি-ক্ষতিপূরণ হিসেবে কেন্দ্রের কাছ থেকে চাওয়া হবে।
শুধু মদের উপর শুল্ক নয়, বকেয়া কর আদায়ের ক্ষেত্রেও একটি ওয়েভার স্কিম আনা হচ্ছে। যে সমস্ত ভ্যাট ডিলারের কাছ থেকে বহু টাকা কর হিসেবে রাজ্যের প্রাপ্য এবং তা নিয়ে মামলা চলছে, সরকার তাঁদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এই প্রকল্পের সুবিধা নেওয়া যাবে। কর সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিটের ক্ষেত্রে যদি বিবাদ থাকে তবে বকেয়া করের ৩০% মিটিয়ে দিলে এবং অতিরিক্ত ব্যবসা ইত্যাদির উপর ধার্য করের ৬০% মিটিয়ে দিলেই সরকার সমস্ত রকম মামলা বন্ধ করে দেবে। এর ফলে অসংখ্য ভ্যাট ডিলারের সুবিধা হবে। কারণ, জিএসটি এলে তাঁদের সেই সম্পর্কিত করের আওতায় আসবে হবে। কিন্তু পুরনো বকেয়া মামলা চললে তা সামলানো মুশকিল। অনেক ডিলারই থাকবেন যাঁরা নতুন কর ব্যবস্থায় যাওয়ার আগে বকেয়া সমস্ত মামলা মিটিয়ে দিতে উৎসাহী হবেন। তাতে সরকারের ঘরে রাজস্ব আসবে।
অর্থ দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘দু’টি পদক্ষেপই কর ব্যবস্থায় সংস্কার ও সরলীকরণে আরও একটি ধাপ। মদের উপর আবগারি এবং বিক্রয়কর চাপানো হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। নতুন আইনে শুধুমাত্র আবগারি শুল্কই থাকবে। আর ভ্যাট আদায়ে মামলার ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেওয়ার ফলে বহু দিনের বিবাদ সহজেই মিটবে। সরকারের আয়ও হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy