Advertisement
২৭ জুলাই ২০২৪
CBI Raids In East Midnapore

পূর্ব মেদিনীপুরে সিবিআই, কাঁথিতে ভোটের আগে দুই তৃণমূল নেতার বাড়িতে হানা, কোন মামলার তদন্তে

শুক্রবার সকালে সিবিআই আধিকারিকেরা মারিশদায় দুই তৃণমূল নেতার বাড়িতে যান। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। লোকসভা ভোটের আবহে সিবিআইয়ের এই অভিযান ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়।

সিবিআই আধিকারিকদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদায়।

সিবিআই আধিকারিকদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদায়। —নিজস্ব চিত্র

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
মারিশদা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৪ ১১:১০
Share: Save:

২০২১ সালের ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার তদন্তে ফের সক্রিয় হল সিবিআই। শুক্রবার সকালে সিবিআই আধিকারিকেরা মারিশদা থানা এলাকায় দুই তৃণমূল নেতার বাড়িতে যান। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। সিবিআইয়ের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই অভিযানের কারণ জানানো না হলেও, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি সূত্রে খবর, বিধানসভা ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় তদন্তের সূত্রেই ওই দুই নেতার বাড়িতে হানা দেওয়া হয়। ওই সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, দুই নেতাই বাড়িতে ছিলেন না। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলেন তদন্তকারীরা।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ কাঁথি থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে, মারিশদা থানা এলাকার ভাজাচাউলির সিজুয়া গ্রামে পৌঁছয় সিবিআইয়ের একটি দল। দলটি যায় তৃণমূল নেতা দেবব্রত পণ্ডার বাড়িতে। দেবব্রত বাড়ি না থাকায় তাঁর মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে দেবব্রতের বাড়িতে ছিলেন সিবিআই আধিকারিকেরা। শুক্রবার সকালেই সিবিআইয়ের আরও একটি দল হানা দেয় মারিশদার ইছাঘেরা গ্রামের তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত প্রধান বুদ্ধদেব মাইতির বাড়িতে। তবে সেখানে বুদ্ধদেবকে পাওয়া যায়নি বলেই প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। তাঁর পরিবার সূত্রে খবর, ওই তৃণমূল নেতা বর্তমানে কর্মসূত্রে হাওড়ায় রয়েছেন। বুদ্ধদেবকে না পেলেও তাঁর বাবা নন্দদুলাল মাইতি, স্ত্রী-সহ পরিবারের সদস্যদের বেশ কিছু সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। তাঁদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড-সহ অন্যান্য নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়।

গ্রামের রাস্তায় গাড়ি রেখে বিপুল বাহিনী নিয়ে সিবিআইয়ের এই অভিযান ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা গোটা এলাকা ঘিরে রাখেন। মারিশদা থানা এলাকা কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। আগামী ২৫ মে পঞ্চম দফায় এই কেন্দ্রে নির্বাচন। ভাজাচাউলি এলাকা আগেও একাধিক বার রাজনৈতিক হিংসার জেরে সংবাদ শিরোনামে এসেছে। ভোটের আগে সিবিআইয়ের ‘তৎপরতা’কে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সে দিকে নজর রয়েছে সব পক্ষের।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৩০ মার্চ বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বের ভোটগ্রহণের আগে কাঁথি-৩ ব্লকের ভাজাচাউলিতে জনমেজয় দোলুই নামে এক বিজেপি কর্মীকে পিটিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। প্রাথমিক ভাবে জনমেজয়কে নিজেদের দলীয় কর্মী বলে দাবি করে মারিশদা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন কালীপদ শীট নামে স্থানীয় এক সিপিএম নেতা। পরে নিহতের ছেলে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। আদালতের নির্দেশে ঘটনার তদন্তে নামে সিবিআই। বিধানসভা ভোটের সময় কাঁথি-৩ ব্লকের তৃণমূল নেতা নন্দদুলালকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। পরে ওই তৃণমূল নেতাকে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর পর ভোট মিটে যাওয়ার পর বিজেপি নেতা জনমেজয় দোলুইকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরবর্তী কালে স্থানীয় একটি ফাঁকা মাঠে তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়।

গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এই ঘটনার তদন্তে কাঁথির ৩০ জন তৃণমূল নেতা-কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছিল সিবিআই। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কাঁথি সাংগঠনিক জেলার আইএনটিটিইউসি সভাপতি বিকাশ চন্দ্র বেজ, কাঁথি-৩ ব্লকের একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান এবং তৃণমূলের বুথ অঞ্চলের নেতারা। তবে নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকার কথা জানিয়ে সিবিআইয়ের তলব এড়িয়ে যান তাঁরা।

বাড়িতে সিবিআই হানা প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা নন্দদুলাল বলেন, “সকালে আমার বাড়িতে বড় বাহিনী নিয়ে ঢুকে পড়ে সিবিআই। আমার স্ত্রী, মেয়ে, বৌমাকে ধরে টানাটানি শুরু করে। আমি আগেও ওদের জানিয়েছি, আমার ছেলে বাইরে থাকে। আমরা কেউ এই ঘটনায় অভিযুক্ত নই। আমাদের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগও নেই। আগেও আমার ছেলে সিবিআইয়ের সঙ্গে দেখা করেছে। তার পরেও বাড়িতে ঢুকে আমাদের সবার ভোটার কার্ড, আধার, ব্যাঙ্ক, রেশন কার্ড নেওয়ার চেষ্টা করেছে। বাড়ির ভিতরে ট্যাঙ্ক ভেঙেছে। হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যারা বাড়িতে আছে সব ক’টাকে তুলে নিয়ে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE