Advertisement
০২ এপ্রিল ২০২৩

বিবেকের কথাই বলেছি, মমতার জবাবে রাজ্যপাল

রাজ্যের ১৮টি জায়গায় সেনা মোতায়েনকে ঘিরে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সংঘাতে চাপানউতোর বেধেছিল রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যেও। রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্যের শাসক শিবিরের সংঘাত বজায় থাকল রবিবারও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৪
Share: Save:

রাজ্যের ১৮টি জায়গায় সেনা মোতায়েনকে ঘিরে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সংঘাতে চাপানউতোর বেধেছিল রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যেও। রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্যের শাসক শিবিরের সংঘাত বজায় থাকল রবিবারও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী কেন্দ্রীয় সরকারের সুরে কথা বলছেন। তার জবাবে এ বার রাজ্যপাল স্পষ্ট করে দিলেন, তিনি নিজের বিবেকের সুরে কথা বলেছেন মাত্র! তিনি এই মন্তব্য করার আগেই তৃণমূল অবশ্য নানা জায়গায় রাজ্যপালের ভূমিকার প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নেমেছে।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ ছিল, রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে সেনা পাঠিয়ে কেন্দ্র তার এক্তিয়ার লঙ্ঘন করেছে। ‘সেনা অভ্যুত্থান’ করে রাজ্যকে ‘দখল’ করার যে কোনও চেষ্টা তিনি রুখে দেবেন বলেও জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের ভূমিকার প্রতিবাদ জানাতে দলের মন্ত্রী-বিধায়কদের অনেককে শুক্রবার রাজভবনে দরবার করতে পাঠিয়েছিলেন মমতা। সে দিন রাজ্যপাল অবশ্য কলকাতায় ছিলেন না। শহরে ফিরে শনিবার তিনি বলেছিলেন, সেনাবাহিনীর মতো দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার আগে যে কোনও ব্যক্তিরই সতর্ক থাকা দরকার। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা বলেছিলেন, রাজ্যপাল তো কয়েক দিন শহরেই ছিলেন না! প্রকৃত ঘটনা না জেনে মন্তব্য করা উচিত নয়। রাজ্যপাল কেন্দ্রের সুরেই কথা বলছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই এ দিন ফের মুখ খুলেছেন রাজ্যপাল।

শহরে এ দিন একটি বইপ্রকাশের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে রাজ্যপালকে প্রশ্ন করা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্রের সুরে কথা বলার অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যপালের সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘আমি আমারই বিবেকের কণ্ঠস্বর!’’ এর পরে আর কোনও কথা না বলে অনুষ্ঠানে চলে যান রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর দলের কোনও মুখপাত্র এ দিন রাত পর্যন্ত রাজ্যপালকে নিয়ে আর কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার মন্তব্য, ‘‘প্রশাসনিক বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা রাজ্যপালের উচিত নয়। তিনি সেটা করেছেন এবং সেটার পক্ষেই আবার যুক্তি দিচ্ছেন!’’ প্রসঙ্গত, রাজ্যপাল ত্রিপাঠীর সঙ্গে শনিবারই দেখা করে এক প্রস্ত প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছিল মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শাসক শিবিরের একটি প্রতিনিধিদল।

রাজ্যপাল হওয়ার আগে ত্রিপাঠী যে দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সেই বিজেপি ঠিক করেছে সেনাকে যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী ‘অপমান’ করেছেন, তার বিরুদ্ধে তারা আদালতে যাবে। মুখ্যমন্ত্রীও এর আগে বলেছিলেন, রাজ্যের এক্তিয়ার লঙ্ঘন নিয়ে তিনি আইনি লড়াইয়ে যেতে চান। বিজেপি-ও এ বার পাল্টা চাপ তৈরি করতে চেয়েছে আদালতের প্রসঙ্গ টেনে। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, শমীক ভট্টাচার্য, লকেট চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ এ দিনই রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর সেনা সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে পাল্টা নালিশ জানিয়ে এসেছেন।

Advertisement

রাজভবন থেকে বেরিয়ে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘কালো টাকার পক্ষ নিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সভ্যতার সীমা ছাড়াচ্ছেন! প্রধানমন্ত্রী, সেনাবাহিনী, রাজ্যপাল— সকলকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে ফেলছেন। রাজ্যপালকে বলেছি, এ ব্যাপারে কেন্দ্রকে যেন উনি জানান।’’ দিলীপবাবুর প্রশ্ন, সেনা তার রুটিন কর্তব্য করতে রাজ্যে আসছে, সেটা পুলিশ জানত। অথচ সেটা সরকারের অজানা ছিল? বিজেপি-র রাজ্য সভাপতির কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো নিজেই পুলিশমন্ত্রী! তা হলে হয় সরকারের সঙ্গে পুলিশ দফতরের সমন্বয় নেই, নয়তো সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিক "কর্তব্যে গাফিলতি করেছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁকে সরিয়ে দেওয়াই উচিত!’’ পক্ষান্তরে, ব্যারাকপুর, বারাসত-সহ নানা জায়গায় তৃণমূলের প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে রাজ্যপালের ভূমিকার বিরুদ্ধে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.