অরুণাচল দত্তচৌধুরী
সরকারি তথ্যপঞ্জি প্রকাশ্যে আনার অভিযোগে বারাসত জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক অরুণাচল দত্তচৌধুরীকে শুক্রবার সাসপেন্ড করেছে রাজ্য সরকার। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যের চিকিৎসক মহল কার্যত দু’ভাগ হয়ে গেল। যে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তিনি সাসপেন্ড হয়েছেন, শনিবার দিনভর সেখানেই তর্ক-বিতর্কের ঝড় উঠল।
প্রবীণ চিকিৎসক অরুণাচলবাবু লিখেছিলেন, অপ্রতুল পরিকাঠামো ও লোকবল নিয়ে স্রোতের মতো ধেয়ে আসা জ্বরের রোগীদের সামলাতে নাজেহাল অবস্থা জেলা হাসপাতালের। ডেঙ্গিতে মৃত্যু জেনেও ‘পরিস্থিতির চাপে’ ডেথ সার্টিফিকেটে লিখতে হচ্ছে ‘ফিভার উইথ থ্রম্বোসাইটোপিনিয়া’।
চিকিৎসকদের একাংশের মতে, প্রাইভেট প্র্যাকটিস না করে এত বছর সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা দেওয়ার পর এক জন প্রবীণ চিকিৎসককে এ ভাবে ‘দণ্ড’ দেওয়াটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। অন্য পক্ষের দাবি, সরকার ঠিক পদক্ষেপই করেছে। হাসপাতালের নথি প্রকাশ্যে আনাটা অন্যায়। এই কাজ করে তিনি ঠিক করেননি।
তাঁর শাস্তি নিয়ে ফেসবুক এ দিন তোলপাড় হয়েছে। অনেকের দাবি, অরুণাচলবাবুকে অবিলম্বে চাকরিতে ফিরিয়ে নেওয়া হোক। এই দাবিতে এক কবি লিখেছেন, ‘মত প্রকাশের অধিকার এক জন কবি থেকে রিকশাচালক— সকলের আছে। ...আজ অরুণাচল, গত কাল আমি, পরশু আপনি। বদলা নয়, বদল চাই কি তবে শুধুই কথার কথা!’
আর এক জনের পাল্টা বক্তব্য, ‘বাক্-স্বাধীনতার অধিকারও বিশেষ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে। সরকারি কর্মচারী হয়ে সার্ভিস রুলের ‘কোড অব কনডাক্ট’ ভঙ্গ করেছেন অরুণাচল।’
অরুণাচলবাবুর কর্মক্ষেত্র বারাসত হাসপাতালের ছবিটা অবশ্য শনিবারও বদলায়নি। এ দিন তেমন রোগীর চাপ না থাকলেও জ্বরের রোগীর ভিড় ছিল যথেষ্টই। দেখা যায়, জ্বরের রোগীর চাপে নতুন যে ওয়ার্ডগুলি খুলে দেওয়া হয়েছিল, শয্যার অভাবে সেখানেও মাটিতে শুয়ে অনেকেই। হাসপাতাল চত্বর থেকে শুরু করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলছে চাপা তর্ক। বিষয়, অরুণাচলবাবু। তাঁকে অবশ্য পাওয়া যায়নি। ফোনও বন্ধ ছিল।
বারাসত হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ অবশ্য মনে করে, সরকারি তথ্য দিয়ে ফেসবুকে যা লেখা হয়েছে, তা ঠিক নয়। যে দিনের কথা বলা হয়েছে, সে দিন হাসপাতালে তিন জন চিকিৎসক রোগী দেখেছেন। অরুণাচলবাবুকে একা সব রোগী দেখার চাপ নিতে হয়নি। এ বিষয়ে তৃণমূলের চিকিৎসক-বিধায়ক নির্মল মাজি বলেন, ‘‘কালিদাসের মতো ডালে বসে থেকে সেই ডাল কাটলে যা হয়, এ ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy