Advertisement
০২ জুন ২০২৪

রিপোর্ট পেতেই ৭ দিন, ডেঙ্গির চিকিৎসা সঙ্কট

ডেঙ্গি যেখানে তিন দিনের মধ্যেই শক সিনড্রোমে পৌঁছে যাচ্ছে, সরকারি হাসপাতাল সেখানে সাত দিনেও রিপোর্ট দিতে পারছে না। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই দেরির কারণে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

ডেঙ্গি যেখানে তিন দিনের মধ্যেই শক সিনড্রোমে পৌঁছে যাচ্ছে, সরকারি হাসপাতাল সেখানে সাত দিনেও রিপোর্ট দিতে পারছে না। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই দেরির কারণে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে।

কী রকম? অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় হওয়ার আগেই রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে পড়ছে। মৃত্যু হলে খাতায় রোগের কারণ উল্লেখ করাই হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, সরকারি হাসপাতাল দেরিতে রিপোর্ট দেওয়ায় মানুষের আস্থা কমছে এবং বেসরকারি ক্লিনিকগুলিতে ভিড় উপচে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকগুলি সঠিক ভাবে রোগ ধরতে পারছে কি না সেই প্রশ্ন তুলেছেন পরজীবী বিশেষজ্ঞদের অনেকে। তাঁরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই ভুল রিপোর্টের খেসারত দিতে হচ্ছে মানুষকে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ভবনের যতটা সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল তারা হয়নি বলে তাঁরা অনুযোগ করেছেন।

কেন রিপোর্ট পেতে সাত দিন লাগছে সরকারি হাসপাতালে? হাসপাতালগুলি জানাচ্ছে, একেকটি কিট-এ যেহেতু অনেক রোগীর পরীক্ষা হয়, তাই নির্দিষ্ট সংখ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যে দিন রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে, সে দিনই পরীক্ষা হচ্ছে না। পর্যাপ্ত নমুনা সংগ্রহ হলেই পরীক্ষা হচ্ছে। তাই রিপোর্ট পেতে সাত দিন পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। একেকটি কিটে ৯৪ জনের রক্তের নমুনা পরীক্ষা হয়। ৯৪ জনের রক্ত পরীক্ষার ওই কিট আসে পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে। সেই কিট খোলা বাজারে পাওয়া যায় না। বাজারে যে কিট কিনতে পাওয়া যায় তাতে একসঙ্গে ৯০ জনের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা যায়।

তা হলে বেসরকারি ক্লিনিকগুলি কী ভাবে কম দিনে রিপোর্ট দিচ্ছে? স্বাস্থ্য ভবনের ব্যাখ্যা, সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় ডেঙ্গি পরীক্ষা হয়। রোগীর সংখ্যা একসঙ্গে ৯০-৯৫ না হলে কিট ব্যবহার করে না তারা। বেসরকারি ক্লিনিকগুলিতে ডেঙ্গির রক্ত পরীক্ষার খরচ অনেক বেশি। তাই কম নমুনা থাকলেও কিট ব্যবহার হয়।

প্রশ্ন হল, যেখানে ডেঙ্গি দ্রুত শক-এ পৌঁছে যাচ্ছে, রোগটার চরিত্র বোঝার আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে জীবন, সেখানে রোগ নির্ণয়ে সরকারি তরফে আরও তৎপরতা কি আশা করা যায় না? কেনই বা সরকারি হাসপাতালগুলি সবার নমুনা সংগ্রহ করে রোজ কিট চালানোর ব্যবস্থা করে না? যদিও স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর দাবি, রিপোর্ট দিতে খুব বেশি দেরি হচ্ছে না। সর্বত্র ১/২ দিনের মধ্যেই রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু বাস্তব ঘটনা সে কথা বলছে না। যেমন বাগুইআটির সুদীপ বিশ্বাস। বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে তিনি রক্ত দিয়েছিলেন ৮ অগস্ট। রিপোর্টের জন্য এক সপ্তাহ পরে আসতে বলা হয়। ১৫ তারিখেও রিপোর্ট পাননি তিনি। সরকারি ছুটি ছিল। মঙ্গলবার রিপোর্টে সুদীপবাবু জানতে পারেন, ডেঙ্গি হয়েছে। তাঁর এক আত্মীয়ের প্রশ্ন, এর মধ্যে যদি শক সিনড্রোম শুরু হয়ে যেত, তা হলে কী হতো?

এক ঘটনা বাঁকুড়াতেও। মঙ্গলবার বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জেলায় নতুন করে ১৩ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েছে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যাটা ছিল ২১। এ দিনের রিপোর্ট সেই সংখ্যাটা এক ঝটকায় বেড়ে হয়েছে ৩৪! স্বাস্থ্য ভবন জানিয়েছে, সাত দিনের সংগ্রহ করা ৯০-৯৫ টি রক্তের নমুনা একদিনে পরীক্ষা করা হয়। তাই একসঙ্গে এত জনে ডেঙ্গি ধরা পড়ে।

স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব অনুযায়ী, এ দিন রাজ্যে মোট ১৩৪ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। এই মরসুমে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৪ জন। মৃতের সংখ্যা ১৭। উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা ব্লকের চাঁদপাড়া এবং ফুলসরা পঞ্চায়েতে ডেঙ্গির প্রকোপ সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত মশা মারার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এখনও এই এলাকায় ২১ জনের রক্তে জীবাণু মিলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health report dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE