Advertisement
০৩ মে ২০২৪

‘গুরু-শিষ্যে’র শাস্তি কী, বিতর্ক সিপিএমে

ব্যক্তিগত জীবনযাত্রা, আর্থিক বিষয় ও সংবাদমাধ্যমে খবর ফাঁস সংক্রান্ত অভিযোগে ঋতব্রতের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তদন্ত কমিশন গড়ে তাঁকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করেছিল আলিমুদ্দিন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৫৪
Share: Save:

বাংলার দুই নেতার শাস্তি ঘিরে বিতর্কে উত্তপ্ত হল সিপিএমের পলিটব্যুরো। দু’জনের ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভার শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির হাতেই। তবে পলিটব্যুরোর অন্দরের লড়াইয়ে দু’জনের ক্ষেত্রেই চরম শাস্তির দাবি আপাতত ঠেকানো গিয়েছে।

দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তকে প্রকাশ্যে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছিলেন গৌতম দেব। পলিটব্যুরো তাঁর ব্যাখ্যা চাওয়ায় ফের পাল্টা আক্রমণে গিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক। এই ‘গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গে’র দায়ে তাঁকে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অবনমনের দাবি তুলেছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতাদের একাংশ। রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি বহিষ্কারের দাবিও তুলেছিলেন তাঁরা। বস্তুত, দলের শীর্ষ স্তরে এই অংশের নেতারা গৌতম-ঋতব্রতকে ‘গুরু-শিষ্য’ হিসাবেই তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছেন। তাঁদের যুক্তি, গৌতমবাবু শাস্তিপ্রাপ্ত সাংসদকে নিজের জেলায় দলের কর্মসূচিতে নিয়ে যাচ্ছেন। আর ডাকাবুকো এই নেতার প্রশ্রয় পেয়ে ঋতব্রত বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছেন।

তবে দলীয় সূত্রের খবর, জোরদার বিতর্কের পরে ঠিক হয়েছে, গৌতমবাবুর মতো অভিজ্ঞ নেতার ‘ভর্ৎসনা’ই প্রাপ্য। আর ঋতব্রত আগেই তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড হয়েছিলেন। এর পরে রাজ্য কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ কার্যকর করাই যথেষ্ট। তার অতিরিক্তি শাস্তি না দিয়ে তাঁকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া উচিত। আগামী অক্টোবরের শেষে কেন্দ্রীয় কমিটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। পলিটব্যুরোয় ‘গুরু-শিষ্য’কে নিয়ে বিতর্কের দিনই ঠিক হয়েছে, গৌতমবাবুর জেলায় চাঁপাডালি, পানিহাটি ও হাবড়ায় তিন সভায় বক্তা রাখা হবে ঋতব্রতকে।

আরও পড়ুন:মাওবাদী ছকে গোর্খা আন্দোলন শহরেও

ব্যক্তিগত জীবনযাত্রা, আর্থিক বিষয় ও সংবাদমাধ্যমে খবর ফাঁস সংক্রান্ত অভিযোগে ঋতব্রতের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তদন্ত কমিশন গড়ে তাঁকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করেছিল আলিমুদ্দিন। তারপর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী ঋতব্রতকে রাজ্য কমিটি থেকেই সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করে। দিল্লিতে পলিটব্যুরোর বৈঠকে তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় পাল্টা যুক্তি দেওয়া হয়েছে, রাজ্যসভায় তরুণ সাংসদের কাজ যথেষ্ট ভাল। সংসদীয় কমিটি তাঁর কাজে কোনও খামতি পায়নি। বৈঠকের পরে পলিটব্যুরোর এক সদস্য বলেন, ‘‘রাজ্যসভায় ঋতব্রতের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালে। দল তাঁকে বহিষ্কার করলে তিনি নির্দল সাংসদ থেকে যাবেন। বরং, তাঁকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে শোধরানোটাই আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত।’’ পশ্চিমবঙ্গ থেকে পলিটব্যুরোর অন্য এক নেতার যুক্তি, ‘‘যে কোনও তরুণ নেতাকে তুলে আনার জন্য তাঁর পিছনে পার্টি যথেষ্ট লগ্নি করে। বহিষ্কার করে দিলে সেই লগ্নি নষ্ট হয়।’’

কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে ঋতব্রতের পাল্টা অভিযোগের সঙ্গে পলিটব্যুরো এখনও সহমত নয়। গৌতমবাবুকে নিয়েও অস্বস্তি যথেষ্ট। তবে বাংলা বনাম কেরল শিবিরের লড়াই সামনে চলে আসায় তাঁর উপরে বড় কোপ নামাতে সমস্যায় প়ড়ছেন প্রকাশ কারাটেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE