Advertisement
E-Paper

মনিরুল তদন্তে হাইকোর্টের ধমক

লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম প্রকাশ্যে তিন জনকে পিটিয়ে মারার কথা কবুল করলেও পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত কেন করল না, সোমবার সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। ফলে পাড়ুই মামলার পরে লাভপুর নিয়েও ফের পুলিশের ভূমিকায় আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্য। ২০১০-এর ৩ জুন রাতে লাভপুরে তিন সিপিএম সমর্থক ভাইকে পিটিয়ে মারা হয় বলে অভিযোগ। সেই ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়ে নিহতদের মা জরিনা বিবি কলকাতা হাইকোর্টে যে আবেদন করেছেন, এ দিন তার শুনানি ছিল বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০৩:৪১

লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম প্রকাশ্যে তিন জনকে পিটিয়ে মারার কথা কবুল করলেও পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত কেন করল না, সোমবার সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। ফলে পাড়ুই মামলার পরে লাভপুর নিয়েও ফের পুলিশের ভূমিকায় আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্য।

২০১০-এর ৩ জুন রাতে লাভপুরে তিন সিপিএম সমর্থক ভাইকে পিটিয়ে মারা হয় বলে অভিযোগ। সেই ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়ে নিহতদের মা জরিনা বিবি কলকাতা হাইকোর্টে যে আবেদন করেছেন, এ দিন তার শুনানি ছিল বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে। এই মামলায় মনিরুল ইসলাম মূল অভিযুক্ত হলেও অভিযোগকারীরা জবানবন্দিতে তাঁর নাম না করায় চার্জশিটে তাঁর নাম বাদ দেয় পুলিশ। ঘটনার তদন্তকারী অফিসার তথা লাভপুর থানার ওসি এ দিন হাজির ছিলেন এজলাসে।

সরকারি আইনজীবী এবং মামলার তদন্তকারী অফিসারের কাছে বিচারপতির প্রশ্ন, “বিধানসভার এক সদস্যের বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগ উঠেছে। এর নিরপেক্ষ তদন্ত করাটা কি পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না?” এর পাশাপাশি তিনি জানিয়ে দেন, সিবিআই তদন্ত চেয়ে যে আবেদন করা হয়েছে, তার সারবত্তা রয়েছে বলে মামলার যাবতীয় নথি দেখে তাঁর মনে হয়েছে। নিহত তিন জনের মা জরিনা বিবিও এ দিন বলেন, “শাসক দলের অনুগত পুলিশ-প্রশাসনের উপরে আমাদের কখনওই বিশ্বাস ছিল না।”

প্রকাশ্য সভায় মনিরুল খুনের কথা কবুল করেছেন, সেই বক্তৃতার সিডি-ও রয়েছে, তবু প্রশাসন পদক্ষেপ করেনি কেন? সরকারি আইনজীবী বা লাভপুর থানার ওসি, কেউই ওই বক্তৃতা শোনেননি বলে দাবি করেছেন। সে কথা তাঁরা এ দিন আদালতে জানিয়েওছেন। এর পরে বিচারপতি নিজেই সিডি-টি দেখতে চান।

বিকেল সাড়ে চারটেয় জরিনা বিবির আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং সরকারি আইনজীবী সম্রাট সেনের পাশাপাশি বিচারপতি দত্ত তাঁর চেম্বারে ডেকে পাঠান তদন্তকারী পুলিশ অফিসারকেও। ১৫-২০ মিনিট পরে ওই তিন জন বিচারপতির চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসেন। তার পরে আর শুনানি হয়নি। আজ, মঙ্গলবার ফের শুনানি হবে মামলাটির।

সিডি দেখার আগে এ দিন শুনানির বেশির ভাগটা জুড়েই ছিল পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ। আবেদনকারী জরিনা বিবির আইনজীবী সুব্রতবাবু এ দিন আদালতে জানান, ২০১০ সালের ৩ জুন রাতে তিন ভাই খুনের পরে পুলিশ সিউড়ি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে একটি ‘ফরওয়ার্ডিং লেটার’ জমা দেয়। তাতে তৎকালীন তদন্তকারী অফিসার মনিরুল ইসলামকে মূল চক্রান্তকারী বলে উল্লেখ করেছিলেন। এ ছাড়াও তৎকালীন তদন্তকারী অফিসার সেখানে জানিয়েছিলেন, মনিরুল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও যথেষ্ট প্রভাবশালী। খুনের ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত মনিরুলের ভাই আনারুল-সহ ২২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছিল পুলিশই। অথচ সেই পুলিশই শেষ পর্যন্ত ওই ২২ জনের কাউকে গ্রেফতার করেনি!

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

মনিরুলের ক্ষেত্রে পুলিশ কী করেছিল? সুব্রতবাবু আদালতে জানান, পুলিশ ২০১০ সালের অগস্টে মনিরুলকে গ্রেফতার করে। কিন্তু সময়ে চার্জশিট পেশ না করায় তিনি জামিন পেয়ে যান। তার তিন বছর পরে প্রকাশ্য জনসভায় মনিরুল জানান, তিন ভাইকে পায়ের তল দিয়ে পিষে দিয়েছেন তিনি। তাঁর সেই বক্তৃতা সিডি-তে রেকর্ড করা আছে। এর পরেও পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। চার্জশিটে পুলিশ মনিরুলকে অভিযুক্ত হিসেবেও দেখায়নি।

এই ব্যাখ্যা দেওয়ার পরেই সভার সিডি-টি বিচারপতির হাতে তুলে দেন সুব্রতবাবু। একই সঙ্গে জানান, বীরভূম আদালতে এ নিয়ে যে মামলাটি চলছে, পুলিশ তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য ২০১২ সালে আবেদন জানায়। পরে অবশ্য সেই আবেদন পুলিশ প্রত্যাহার করে। মামলা প্রত্যাহার করতে চাওয়ার পিছনে পুলিশের কোনও অভিসন্ধি ছিল কি না, বিচারপতির কাছে তা জানতে চান সুব্রতবাবু।

প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের এই ভোলবদল কি রাজনৈতিক পালাবদলের সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত? কারণ, এক সময় ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা মনিরুল ২০১১-তে পরিবর্তনের আগে তৃণমূলে যোগ দেন। তার পরে এলাকায় তাঁর প্রতাপ আরও বাড়ে বলে অভিযোগ। যে পুলিশ আগে ‘ফরওয়ার্ডিং লেটারে’ মনিরুলকে মূল চক্রান্তকারী হিসেবে দেখিয়েছিল, তারাই এ বারে তাঁর নাম বাদ রেখেই চার্জশিট তৈরি করেছে। অথচ অভিযোগকারীদের দাবি, তাঁরা চাপের মুখে জবানবন্দি দেন। মনিরুলের নাম বাদ দিতে তাঁরা বাধ্য হয়েছিলেন।

বিচারপতি দত্ত এ দিন জরিনা বিবির আইনজীবীকে প্রশ্ন করেও পরিস্থিতি বুঝে নিতে চেয়েছেন। তিনি জানতে চান, “মামলার চার্জশিট জমার পরেও আপনি কেন সিবিআই তদন্ত চাইছেন?” বিচারপতির আরও প্রশ্ন, “মামলায় নিহতদের আট পরিজন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন, তাতেও মনিরুল ইসলাম বা তাঁর ভাই আনারুলের নাম নেই। সে ক্ষেত্রে কীসের ভিত্তিতে সিবিআই-কে দিয়ে পুনরায় তদন্ত চাওয়া হচ্ছে?”

সুব্রতবাবু বিচারপতিকে জানান, গোপন জবানবন্দি দেওয়ার আগে ওই ভাইদের দুই ছেলেমেয়েকে অপহরণ করা হয়। গোপন জবানবন্দির পরে তারা মুক্তি পায়। তৃণমূল নেতা তথা দলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও মনিরুল পুলিশের সুপারের কার্যালয়ে বসেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য জরিনা বিবির ছেলে আনারুল শেখকে হুমকি দেন। এই সময় সরকারি আইনজীবী সম্রাট সেন বলেন, ঘটনার ফের তদন্ত চেয়ে মামলাকারী হাইকোর্টে নিম্ন আদালতে আর্জি জানাতে পারেন। সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন নেই।

বিচারপতি বলেন, অভিযোগকারী মহিলা, যাঁর তিন ছেলে খুন হয়েছেন, তিনি নিরপেক্ষ ও সঠিক তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। নিম্ন আদালত ফের তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে। কিন্তু সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে হাইকোর্ট।

বিচারপতি এ বারে সরকারি আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, “পুলিশ কী কারণে মামলার চার্জশিট দিতে চার বছর সময় নিল?” তার পরে জবাবের অপেক্ষা না করে ফের জানতে চান, “যে বক্তৃতায় তিন জনকে খুন করার কথা অভিযুক্ত স্বীকার করেছেন সেটি আপনি শুনেছেন কি?” সরকারি আইনজীবী বলেন, “আমি শুনিনি।” একই প্রশ্নের জবাবে তদন্তকারী অফিসার তথা লাভপুর থানা ওসি দেবব্রত ঘোষও জানান, তিনি শোনেননি। বিচারপতি দত্ত তখন প্রশ্ন করেন, এমন অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের দায়িত্ব কি পুলিশের নয়? তার পরই সিডি-টি দেখতে চান তিনি।

monirul islam labhpur dipankar dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy