উত্তরপাড়ার বন্ধ হিন্দুস্থান মোটরস কারখানার শ্রমিকদের মাসিক ১৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করল শ্রম দফতর।
বেশ কয়েক বছর ধরে ধুঁকতে থাকার পরে দেশের প্রথম মোটরগাড়ি তৈরির কারখানাটিতে গত বছর ২৪ মে আর্থিক লোকসানের কারণ দেখিয়ে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। কয়েক মাস আগে হাজার খানেক শ্রমিক স্বেচ্ছাবসর নেন। বর্তমানে কারখানার ১৩০৯ জন শ্রমিক অবশিষ্ট রয়েছেন। তাঁদের জন্যই ওই ঘোষণা করেছে শ্রম দফতর।
শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ওই শ্রমিকদের জন্য কারখানার শ্রমিক সংগঠনগুলির তরফে ভাতার আবেদন করা হয়। শ্রম দফতরের তরফে সেই আবেদনই মঞ্জুর করা হয়েছে। কোনও কারখানা ন্যূনতম এক বছর বন্ধ থাকলে আবেদনের ভিত্তিতে সেখানকার শ্রমিকরা ‘ফাওলাই’ (ফিনান্সিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স টু দ্য ওয়ার্কার্স অব লকড্ আউট ইনডাস্ট্রিজ) প্রকল্পে ওই টাকা পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ, হিন্দমোটরের নাম এ বার সেই তালিকায় সংযোজিত হল।
সোমবার শ্রীরামপুরের উপ-শ্রম কমিশনার অমল মজুমদার কারখানার ছ’টি শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই তিনি ওই সিদ্ধান্তের কথা জানান। চলতি জুন মাস থেকেই ওই ভাতা দেওয়া হবে। তার জন্য আগামী ৬ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত শ্রমিকদের ভাতার আবেদনপত্র দেওয়া হবে। ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে শ্রীরামপুরে শ্রম দফতরে সেই ফর্ম জমা দিতে হবে।
অমলবাবু বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী আবেদনকারী শ্রমিকদের মাসে ১৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। পুজোর সময়ে এক বার ১৫০০ টাকা বোনাসও দেওয়া হবে। অর্থাৎ, বছরে এক জন শ্রমিক মোট ১৯ হাজার ৫০০ টাকা পাবেন।’’
শ্রমিকেরা অবশ্য এই ভাতা নিয়ে তেমন উৎসাহ প্রকাশ করেননি। চিত্তরঞ্জন নায়েক নামে কারখানার রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের এক শ্রমিক বলেন, ‘‘ভাল আর কী হবে? কারখানাই তো বন্ধ। সবটাই কর্তৃপক্ষের কারসাজি। ভেবেছিলাম সরকার কিছু করবে। তা-ও হল না।’’ বিশ্বজিৎ সরকার নামে আর এক শ্রমিকও বলেন, ‘‘দেড় হাজার টাকায় কী হবে?’’
একই সুর শোনা গিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতাদের গলাতেও। সংযুক্ত শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন (এসএসকেইউ) নেতা আভাস মুন্সি বলেন, ‘‘দেড় হাজার নয়, শ্রমিকদের তিন হাজার টাকা করে ভাতা দিতে হবে। বর্তমান বাজারে দেড় হাজার টাকায় কী হয়! ভাতা দিচ্ছে বলে কারখানা খোলার চেষ্টা যেন সরকার বন্ধ না করে দেয়। প্রয়োজনে কারখানা অধিগ্রহণ করা হোক।’’ সিটু নেতা মণীন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শ্রমিকদের ভাতা দেওয়ার দাবি আমাদের ছিলই। কিন্তু এটা মূল সমস্যার সমাধান হতে পারে না। সরকার কারখানা খোলার ব্যবস্থা করুক অবিলম্বে।’’তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি বিদ্যুৎ রাউত অবশ্য বলেন, ‘‘এই বাজারে ভাতার টাকা শ্রমিকদের কাজে লাগবে। সব বন্ধ কারখানা খুলতেই তো রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে। হিন্দমোটরের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হচ্ছে না।’’
তবে, কারখানা খোলার দাবি আদৌ কবে বাস্তবায়িত হবে, সে ব্যাপারে কোনও দিশা দেখাতে পারেননি কারখানা কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, গত দেড় দশক ধরে লোকসান বইতে হয়েছে এই কারখানাকে। অন্যা খাত থেকে টাকা লগ্নি করেও অবস্থা সামাল দেওয়া যায়নি। ফলে, শ্রমিকদের বেতন দেওয়াই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
শ্রমিকরা অবশ্য কর্তৃপক্ষের দাবি মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, কারখানার বিপুল জমি প্রোমোটারদের বিক্রি করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। সেই কারণেই কারখানাকে বাঁচানোর কোনও চেষ্টা তাঁরা করেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy