প্রতীকী ছবি
• রোগী সুস্থ। তাঁকে বাড়িও নিয়ে গিয়েছেন পরিবারের লোকজন। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে ফের ওই রোগী নিয়ে তাঁরা হাজির হাসপাতালে। সঙ্গে পুলিশ। অভিযোগ, চিকিৎসা সম্পূর্ণ না-করেই রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। অগত্যা চাপে পড়ে সেই রোগীকে সাত দিন প্রায় বিনা পয়সায় রাখতে হয়েছে হাসপাতালে। রোজ চিকিৎসক এসে দেখে গিয়েছেন। কিন্তু কোনও রোগ পাওয়া যায়নি।
• কেউ কেউ আবার রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছনোর আগে চলে যাচ্ছেন থানায়। ভর্তি করার মতো অবস্থা নয়। তবু রোগীকে ভর্তি নিতে বাধ্য হচ্ছে হাসপাতাল। কী কী চিকিৎসা হচ্ছে, নিয়মিত তার তালিকা নিয়ে যাচ্ছে রোগীর পরিবার। পরীক্ষার খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফের হাসপাতালে আসছে পুলিশ নিয়ে। তার পরে নামমাত্র টাকা ধরিয়ে রোগীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
• ইঞ্জেকশন দু’ঘণ্টা পরে কেন দেওয়া হবে? নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে ২৪ ঘণ্টা লাগবে কেন? এই সব প্রশ্নের উত্তর না-পেলে অনেকে স্বাস্থ্য কমিশনে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন হাসপাতালে দাঁড়িয়ে। চেঁচামেচি করছেন। বাধ্য হয়েই পরিস্থিতি সামাল দিতে আপসের রাস্তায় হাঁটতে হচ্ছে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষকেই।
মাস দুই হয়ে গেল, এই ধরনের দুর্ভোগ শিরোধার্য করে চলতে হচ্ছে রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমগুলিকে। রোগী ও তাঁদের পরিবারের দাপটে-হুমকিতে প্রায় ৫০টি নার্সিংহোম বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধু মাত্র দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায় ন’টি নার্সিংহোম।
বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে রোগী কম ভর্তি হওয়া কিংবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার জেরে বহু মানুষ কাজ হারাচ্ছেন, জানালেন শহরের একটি নামী বেসরকারি হাসপাতালের শীর্ষ কর্তা। তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে বিল না-মিটিয়ে চলে যাওয়ার হি়ড়িকের জেরে হাসপাতাল চালানো দায় হয়ে উঠেছে। তার পরিণামে কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়েছে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেসরকারি হাসপাতালে টান পড়েছে বিনিয়োগেও। এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, গত কয়েক বছরে বেসরকারি হাসপাতালে বিনিয়োগ বেড়েছিল প্রায় ২০ শতাংশ। কিন্তু নতুন স্বাস্থ্য বিল পাশের পরে সেই বিনিয়োগে টান পড়েছে। নতুন প্রজেক্ট বন্ধ করে দিচ্ছে বহু বেসরকারি হাসপাতাল।
এত অভিযোগ, তবু বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠন চুপ কেন?
অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি এমপি মেহতা বলেন, ‘‘আমাদের কোনও সদস্য-হাসপাতালের কাছ থেকে কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি। তাই সংগঠন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’’
মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট চিকিৎসক কুণাল সরকার মনে করেন, বেসরকারি হাসপাতালের ভুলত্রুটি ধরার কাজটা আরও পরিণত ভাবে করলেই হয়তো ভাল হতো। ‘‘যা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, এ বছর হাসপাতালের দে়ড় হাজার কর্মীকে ফি-মাসে মাইনে দিতে পারলেই হাঁপ ছেড়ে বাঁচি,’’ বললেন কুণালবাবু।
তাঁর হাসপাতালের কর্মীরা রোজ হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করলেন আমরির চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার বা সিইও রূপক বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘‘কখনও পুলিশ ডেকে আনার হুমকি, আবার কখনও মার খাওয়ার ভয় সহ্য করেই কাজ করতে হচ্ছে।’’ অ্যাপোলো হাসপাতালের সিইও রাণা দাশগুপ্তের অনুযোগ, রোগীদের একাংশ আসলে পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন। চিকিৎসার খরচ আনুমানিক হিসেবে আগে দেওয়া হলেও অনেকে বিল মেটাচ্ছেন না। ‘‘দু’মাসে হাসপাতালের প্রায় এক কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। কী ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করব, সেই পরামর্শ চেয়ে স্বাস্থ্য দফতরে আবেদনপত্র পাঠিয়েছি। আমরা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চাই,’’ বললেন রাণাবাবু।
মিশন হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং হৃদ্রোগের শল্যচিকিৎসক সত্যজিৎ বসু বলেন, ‘‘রোগীদের একাংশের মধ্যে টাকা না-দিয়ে চলে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এর জেরে সেবামূলক প্রকল্পে টান পড়েছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি এবং প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে অসুবিধা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy